Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

আশ্বাসেই ঝুলে আছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার


ইউএনভি ডেস্ক:

আশ্বাসেই ঝুলে আছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নতুন করে জনশক্তি রপ্তানি শুরুর লক্ষ্যে দুই দফা বৈঠকে বসে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। বৈঠকের পর নতুন পদ্ধতিতে শ্রমিক নিয়োগের তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে মালয়েশিয়া।

দেশটির পক্ষ থেকে নতুন অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী নেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্তও করা হয়। কিন্তু ওই আশ্বাসের মধ্যেই আটকে আছে জনশক্তি নিয়োগের কাজ। এর মধ্যে নতুন সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে করোনা।

প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ দেখায় মালয়েশিয়া। এজন্য দেশটির শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া ও শর্তগুলো ঠিক করে বাংলাদেশের সঙ্গে খসড়া প্রটোকল চূড়ান্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন করা ছাড়া এই বিষয়ে আলোচনা করছে না।

তবে, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদকে এক মাস আগে চিঠি পাঠান মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী। চিঠিতে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির সুবিধার্থে বাংলাদেশে অনলাইন অটোমেটেড সিস্টেম চালুর তাগিদ দেওয়া হয়। ওই দেশে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের একই খাতের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়ার সুখবরও জানানো হয়। চিঠিতে অভিবাসন ব্যয় ও রিক্রুটিং এজেন্সি সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির ট্র্যাক রেকর্ড ভালো, ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতা, দক্ষতা, শ্রমিক নিয়োগ ও পাঠানোর সক্ষমতা আছে, তাদের বিবেচনা করার তাগিদ দেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশের অবস্থান জানানোর পর আর কোনো জবাব আসেনি মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে।

এই বিষয়ে ইমরান আহমদ বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। তাদের পক্ষ থেকে নতুন নিয়মে কর্মী নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। খসড়া প্রটোকল চূড়ান্ত করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে যাবতীয় কার্যক্রম থমকে আছে। আশা করছি, চলতি বছরের মধ্যেই সিদ্ধান্তে আসতে পারবো।’

এদিকে, দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সব ধরনের ভিসায় বাংলাদেশিদের মালয়েশিয়া প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ফলে ছুটিতে কেউ দেশে এলেও তারা চলতি বছরে আর ফিরে যেতে পারবেন না। তবে, এটি জনশক্তি রপ্তানির কার্যক্রমে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম জানান, ‘এই নিষেধাজ্ঞার ফলে যারা ছুটিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন, তাদের আপাতত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ে কেউ দালালদের খপ্পরে পড়ে বা কারও কথায় প্ররোচিত হয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। করলে চিরদিনের জন্য কালো তালিকাভুক্ত হয়ে যেতে পারেন। আমরা সার্বক্ষণিক আলোচনা চালিয়ে যাবো। এই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হলে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

উল্লেখ‌্য, ২০১২ সালে সরকারিভাবে কর্মী পাঠাতে দুই দেশ চুক্তি করে। এরপর ২০১৫ সালের মে মাসে থাইল্যান্ডে ও পরে মালয়েশিয়ায় গণকবর পাওয়ার খবরে বিশ্বজুড়ে হইচই হলে আবারও বাংলাদেশ থেকে বেসরকারিভাবে কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেয় মালয়েশিয়া। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে জি টু জি প্লাস (সরকারি-বেসরকারি) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মালয়েশিয়া বলে, এই মুহূর্তে তারা আর কর্মী নেবে না। এতে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া ঝুলে যায়।

নভেম্বরে মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। ওই বৈঠকে আবার কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের একবছর পর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। এরপর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের শেষ দিকে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে প্রচলিত পদ্ধতিতে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয়।


Exit mobile version