অকৃতকার্যরাই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন!


আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের ছেলে ভর্তি পরীক্ষায় কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পরবর্তীতে বাবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় তাকে ভর্তি করাতে পারেনি। শুধু ভর্তি নয়, পরবর্তীতে তাকে নিম্নমানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হয়েছে।

জাপানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যাপক ও কর্মকর্তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়তে হলে তাদের স্বীয় যোগ্যতা বলে পড়তে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ঘটছেটা কী?

কয়েকদিন আগে এস এ টিভি একটা প্রতিবেদন করেছে, যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পরও চল্লিশের অধিক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যেখানে ০.০২৫ পয়েন্টের ব্যবধানে মেধাবীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না সেখানে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্যকারীদের কিভাবে ভর্তি করায় তা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে ধরা পড়ছে না।

পোষ্য কোটা ব্যবস্থার অধীনে এইসব বাতিল ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সুযোগ দিয়েছেন, সেটি কি গ্রামের খেটে খাওয়া কোন কৃষক কিংবা ভ্যানচালকের ছেলে-মেয়েকে দিতেন কী? কিংবা যে ছাত্র ০.০২৫ পয়েন্টের ব্যবধানে মেধার তালিকা থেকে ছিটকে পড়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেল না তাকে কি সেই সুযোগ দিয়েছে?

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েদের পোষ্য কোটায় ভর্তি পরীক্ষায় নাম মাত্র ফলাফলে ভর্তি করিয়ে দেয়। দেখা যায়, এইসব শিক্ষার্থীদেরকে পরবর্তীতে বিভিন্ন অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ করে দেয়। যেকারণে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পরিবারতান্ত্রিক হয়ে উঠেছে। যে ছেলে-মেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে না, তাদের আবার শিক্ষক হয়ে উঠার গল্প নেহাত কম নয়। শুধু শিক্ষক নয়, এরাই আবার বাবা-মা- কিংবা মামার হাত ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি বাগিয়ে নেন। ফলে, পরিবারতন্ত্রের বাহিরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসতে পারছে না।

আমি জানি না, কোন ক্ষমতা বলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের সন্তানদের ভর্তি করায়। কোটা ব্যবস্থা যখন সারাদেশ থেকে উঠে যাচ্ছে, তখন পোষ্য কোটার কাঁটা এখনো রয়ে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ এর অধ্যাদেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ভর্তিতে সমান অধিকার থাকবে। তাহলে পোষ্য কোটার যে বিধান নিজ স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালু রেখেছে তা কোন আইন মেনে?

বাবা কিংবা মায়ের চাকরির মেধায় অকৃতকার্যদের ভর্তি করানো শুধু বৈষম্য তৈরি করে না, বরং এটি আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থার পরিপন্থি। আমি চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অনৈতিক চর্চা বন্ধ হোক। পোষ্য কোটার আড়ালে পরিবারতন্ত্র গড়ার সকল কৌশল নিপাত যাক।

লেখক : জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত


শর্টলিংকঃ