Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

‘অতৃপ্ত আত্মা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিচার চাইবে’


ইউএনভি ডেস্ক:

‘যার সন্তান নেই, তার কিছু নেই। সন্তান হারানোর বেদনা যে কী কষ্টের, তা একজন মা-ই কেবল বুঝতে পারেন। যার যায়, তিনিই বোঝেন সন্তান হারানোর বেদনা। আমার সন্তানদের আট বছর আগে হারিয়েছি। এখনো বিচার পেলাম না। আমার অতৃপ্ত আত্মা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সন্তান হত্যার বিচার চাইবে।’

এভাবে সন্তান হারানোর বেদনার কথা বলেছেন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সরওয়ার ওরফে সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন সাগর সরওয়ার । একই সঙ্গে হত‌্যার শিকার হন তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনি ওরফে মেহেরুন রুনি।

সালেহা মনির বলেন, আট বছর হয়ে গেল, এখনো সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। তবে বিচার চাই। একদিন না একদিন বিচার তো হবেই। দীর্ঘদিন পর সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলাটি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সব হত্যার বিচার হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মামলার বিচার হচ্ছে না। ইচ্ছাকৃতভাবে বা অদৃশ্য কোনো কারণে মামলাটির বিচার হচ্ছে না। প্রতি ধার্য তারিখে র‌্যাব আদালতে যাচ্ছে। আদালত প্রতিবেদনের একটা তারিখ ধার্য করে দিচ্ছেন। এভাবেই চলে গেছে আট বছর। এ বিষয়ে আদালতকে ভূমিকা নিতে হবে। আদালত তদন্তের জন্য চূড়ান্ত একটি সময় বেঁধে দিতে পারেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিচার করতে পারেন। এখানে কোথাও কোনো গাফিলতি আছে। কী অন্যায় করেছে তারা (সাগর ও রুনি)? কোন অপরাধে তাদের খুন করা হলো? তারা কি রাষ্ট্রদ্রোহী, চোর না কি ডাকাত? যদি তারা রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে থাকে, তদন্ত করে দেখাক, আমি বিচার চাইব না।

সালেহা মনির বলেন, প্রত্যেক মায়ের সন্তানই সুসন্তান। আমার সাগরও আমার কাছে সুসন্তান। এই নবাবপুরের লোহা-লক্করের মধ্যে আমি সোনা বের করে এনেছিলাম। আমার সেই সোনাকে কী অপরাধে নৃশংসভাবে খুন করা হলো?

এখনো ছেলের কবর দেখতে যাননি সালেহা মনির। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। কবরের পাশে গিয়ে কী বলব? বিচার হচ্ছে না। তবে বিচার একদিন হবেই। দুনিয়ার বিচার না হলেও উপরে যিনি আছেন, তিনি অবশ্যই বিচার করবেন।

মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, এরা হতে পারে অন্য কোনো ক্ষেত্রে অপরাধী, তবে এ ঘটনায় নয়। কোনো চোর-ডাকাত তাদের খুন করেনি। এটা মিথ্যা অপবাদ। এখানে অনেক রহস্য আছে। সাত-আটজন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা দোষী না। মামলাটি নিয়ে অনেক নাটক হচ্ছে।

মামলাটির বাদী নিহত রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের আট বছর পার হয়ে গেল। সরকার বিচার দিচ্ছে না। বিচার তো দূরের কথা, কী কারণে কারা খুন করেছে, তাও জানতে পারলাম না। তদন্তেই আটকে আছে মামলাটি। সরকার বা তদন্ত সংস্থা আন্তরিক না। আমরা দুই পরিবারের স্বজনরা হতাশ।

সাগর-রুনির ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে গুলশানের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল (বিআইটি) স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। ক্রিকেট হওয়ার ইচ্ছা তার। বিকেএসপিতে পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। এখনো রেজাল্ট দেয়নি। স্কুল, প্রাইভেট, ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে ওর।

মেঘ বাবা-মার বিষয়ে কিছু জানতে চায় কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমনিতে ও একটু চাপা টাইপের। তারপরও মাঝে মধ্যে জানতে চায়। সাগর-রুনি হত‌্যাকাণ্ডের পরের দিন ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন।

আরও পড়তে পারেন  গণমাধ্যমে রাজশাহীর উন্নয়ন ও সম্ভাবনার খবর তুলে ধরার আহ্বান


Exit mobile version