অবশেষে খুকির দায়িত্ব নিল রাজশাহী জেলা প্রশাসন


নিজস্ব প্রতিবেদক:

অবশেষে সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সংবাদপত্র বিক্রেতা দিল আফরোজ খুকির পাশে দাঁড়াল রাজশাহী জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে খুকির বাসায় যান। এরপর খুকির দেখভালের সব দায়িত্ব নেয় জেলা প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী শহরের একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা খুকি। তিনি ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বেচে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ১১ বছর আগের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর অনেকেই খুকির খোঁজ খবর নিচ্ছেন। খুকি প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে পত্রিকার এজেন্ট ও স্থানীয় পত্রিকার সার্কুলেশন থেকে পত্রিকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন নগরীতে। খুকির হাতের পত্রিকা পড়ে তারা, খুকির জীবনের গল্প কারো পড়া হয়ে ওঠে না। সংবাদপত্র বিক্রেতা খুকি কোনো সময় কারও কাছে হাত পাতেননি। তিনি নিজেই কর্ম করে নিজের জীবন যাপন করেন।

খুকি সম্পর্কে প্রতিবেশীরা বলছেন, কিশোরী বয়সে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে খুকির বিয়ে হয়েছিল। মাস যেতে না যেতেই স্বামী মারা যান। ১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন তাঁকে গৃহছাড়া করেন। ভাইদের আপত্তিতে বাবার বাড়িতে তার জায়গা হয়নি। এর পর থেকেই কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। বাবার কাছ থেকে পাওয়া জমিতে বাড়ি তৈরি করে একাই থাকেন। কারো কাছ থেকে কোনো সহায়তা নেন না। পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

সংগ্রামী এই নারীর জীবনের গল্প শুনতে চাইলে খুকি খোলা কাগজ-কে বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন রাজশাহী জেলা আনসার অ্যাডজুটেন্ট এবং মা ছিলেন সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষিকা। অল্প বয়সে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সবাই আমাকে ঠকিয়েছে এবং পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। সেজন্য নিজেই নিজের বেঁচে থাকার পথ নিজেই তৈরি করেছি।আর খেয়ে পরে যতটুক থাকে সেগুলোও আমার মত কাউকে দিয়ে দেই। আমার প্রশান্তি এখানেই।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘খুকির তেমন ডিমান্ড নেই। তার বাসা আছে, জমি আছে। শুধু তার প্রয়োজন আদর-যত্ন নেওয়া। এ ছাড়া যে বাড়িটা আছে তা বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বাসাটাকে পুরোপুরি বসবাসের উপযোগী করে তুলছি। এখন অনেকেই খুকির পাশে দাঁড়াতে চাচ্ছে। জেলা প্রশাসন থেকে খুকিকে প্রতি মাসে বাজার খরচ দেওয়া হবে ও তাকে দেখভাল করা হবে। কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে খুকিকে সহায়তা করতে চান, তবে করতে পারেন, যদি তিনি তা নেন। কেননা কারো আর্থিক সহায়তাই এই নারী নিতে চান না।’

 

 


শর্টলিংকঃ