অবসরে যাওয়া সানাউল্লাহ স্যার’র বিষমুক্ত ফলের বাগান


বিশেষ প্রতিবেদক:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার রহনপুরা গ্রামের সানাউল্লাহ স্যারের বিষমুক্ত এই বাগানে কেবল  আম, কাঁঠাল, বেল, লেবু, পেয়ারা গাছ-ই নয়, এর শোভা বাড়িয়েছে নানা প্রজাতির পাখিও। সারাদিন এই বাগানে পাখিরা উড়াউড়ি করে। এটি এখন পাখিদেরও অভয়ারণ্য।  কোনো শ্রমিক নয়, নিজের হাতেই  বাগান পরিচর্যার কাজ করেন তিনি।

বাড়ির চারপাশে গড়া বাগানে আম দেখছেন সানাউল্লাহ্ মাস্টার

নিজের হাতে গড়া স্কুলেই সারাজীবন শিক্ষকতা করেছেন।সেই ‘গুঠইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি’ই চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার একমাত্র ‘মডেল’ স্কুলের স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ সাইকেলে চেপে স্কুলে যাতায়াত করেছেন সারাজীবন।শিক্ষকতা জীবনে ছুটির নজির নেই।

ঝড়-বৃষ্টি কী শীত-কোনো কিছুই তাঁর কাছে কখনো বাধা ছিল না। সাইকেলে চড়ে কালো ছাতা মাথার ওপর ফুটিয়ে চলেছেন স্কুলে।দায়িত্বের প্রতি তাঁর একাগ্রতা, কর্তব্যজ্ঞান ও নিষ্ঠা ও চলাফেরায় বিনয়াবনতের কারণে সবার কাছেই হয়ে উঠেছিলেন ‘প্রিয় স্যার’।

একাধিকবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। সেই সানাউল্লাহ্ স্যারই অবসরে গিয়ে বাড়ির চারপাশের পতিত জমিতে বিষমুক্ত বাগান গড়ে তুলেছেন। তাঁর বাগানের বিরল জাতের বেল, খোদ ফল গবেষণা কেন্দ্রের কাছেও নেই। সানাউল্লাহ্ মাস্টারের এই উদ্যোগে মুগ্ধ সবাই।

নিজের হাতে গড়া বাগান দেখাশোনা করেই অবসর কাটে সানাউল্লাহ্ মাস্টারের

তাঁর বাগান কেবল গাছেই নয়, এর শোভা বাড়িয়েছে নানা প্রজাতির পাখিও। সারাদিন এই বাগানে পাখিরা উড়াউড়ি করে। পাখিদের অভয়ারণ্য এটি। বাগানের পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে যেন  নেচে ওঠে মনটাও।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, সানাউল্লাহ্ মাস্টার এই বাগান কেবল স্বাস্থ্যকর ফলই দিচ্ছে না, পরিবেশ রক্ষা এটি সবুজ বেষ্টনী হিসেবেও কাজ করছে। যা অনুকরণীয়।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অবসরে যান তিনি। অবসরে থাকেন নি। বাড়ির চারপাশের প্রায় চার বিঘা পতিত জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন বাহারি ফলের বাগান। কোনো ধরনের কেমিক্যাল ছাড়া এসব ফল উৎপাদন করছেন।

এই বেলের ওজন সাড়ে ৩ কেজি। যার সুমিষ্ট ঘ্রাণ মুগ্ধ করবে যে কাউকেই

তাঁর বাগানে রয়েছে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসাপাত, আম্রপালি, ফজলি ও আশ্বিনাসহ নানা জাতের আম। আছে লেবু, পেয়ারা ও কাঠাঁলও। আর একটিমাত্র বেলের গাছ রয়েছে। যার একেকটি বেলের ওজন প্রায় চার কেজি পর্যন্ত। পাকলে হালকা হলুদ বর্ণ আর এর সুগন্ধে ভরে যায় মন।

সানাউল্লাহ্ মাস্টার জানান, ’৮৩ সালে এই বেলের গাছটি নিজহাতেই লাগিয়েছিলেন। প্রচুর ফল ধরে। কিন্তু শেষ অব্দি টিকে হয়তো ৫-৬টি। রোগ-বালাইয়ে ধীরে ধীরে ঝরে পড়ে।কিন্তু কোনো কীটনাশক ব্যবহার করেন না। তাঁর ইচ্ছে, এই দুর্লভ জাতের বেল ছড়িয়ে পড়ুক কৃষকদের মাঝে। কিন্তু কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।

বিষমুক্ত বাগানে এবার আমের ফলন বেশ

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান রহমান এই বেল দেখে অবাকই হয়েছেন। তিনি  ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, এটি বেলি জাতের বেল। এই বেল আমাদের ফল গবেষণা কেন্দ্রেও নেই। আমরা শিগগিরই এর চারা উৎপাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সৃজনশীল কাজের মাঝেই আছে জীবনের আনন্দ। আর তা করতে বয়স কোনো বাধা নয়- তা সমাজের কাছে অনন্য দৃষ্টান্ত সানাউল্লাহ্ মাস্টার।


শর্টলিংকঃ