‘অবৈধ ছাত্রকে’ হলছাড়া করে বিপাকে রাবির মতিহার হল প্রাধ্যক্ষ


রাবি সংবাদদাতা:

নিয়ম অনুযায়ী আবাসিক হলে কোনো ছাত্রকে সিটে উঠানোর সকল দায়িত্ব হল প্রাধ্যক্ষের। মতিহার হলে ছাত্রলীগের একজন কর্মী অবৈধভাবে হলে ওঠার পর, তাকে বের করে বৈধ ছাত্রকে তুলে দেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আলী আসগর। তবে প্রাধ্যক্ষের অভিযোগ- রাবি প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান সেখানে গিয়ে প্রাধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়াই নিয়মবর্হিভূতভাবে ছাত্রলীগের কর্মীকে ফের কক্ষে তুলে দিয়েছেন।

কিন্তু প্রক্টরের দাবি- তিনি কোনো ছাত্রকে হলে তুলে দেন নি। শনিবার প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে বসে তাদেরকে (ছাত্রলীগ নেতাকর্মী) বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দিয়েছি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। ফাইল ছবি।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলের একটি কক্ষে বৈধতা ছাড়াই ছাত্রলীগের এক কর্মী জোর করে হলে ওঠার পর তাকে পুলিশের মধ্যস্থতায় বের করে দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আলী আসগর। এ ঘটনায় ওই কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

তবে ওই ছাত্র ফের হলের কক্ষে অবস্থান করছেন। প্রাধ্যক্ষের অভিযোগ- ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান গিয়ে ওই অবৈধ ছাত্রকে (ছাত্রলীগ কর্মী) ফের ওই কক্ষে তুলে দিয়েছেন।’ এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হলটিতে এমন ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, জনি মিয়া নামের এক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলী আসগর। জনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারারিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। তিনি ওই হলের ১২০ নম্বর কক্ষে উঠেছিলেন।

হল সূত্রে জানা গেছে, হলটির ১২০ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ইউসুফ আলীর মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) হল ত্যাগ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নির্দেশে ছাত্রলীগ কর্মী মোহন ওই সিটে জনিকে তুলে দেয়। এরপর পুলিশের উপস্থিতিতে প্রাধ্যক্ষ ওই শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়।

রাবির মতিহার হল। ফাইল ছবি।

পরে জনি বিষয়টি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জানালে রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুন জামিল সুস্ময়ের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী নিয়ে হলের ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে তারা ১২০ নম্বর কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান ঘটনাস্থলে এসে জনিকে ফের ১২০ নম্বর কক্ষে তুলে দিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘ওই রুমে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে উঠানো হয়। পরে হলের প্রাধ্যক্ষ পুলিশ নিয়ে এসে তাকে বের করে দেয়। প্রক্টরকে বিষয়টি জানানো হলে, তিনি ওই শিক্ষার্থীকে রুমে তুলে দেন।’ তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে দাবি করেন রুনু।

জানতে চাইলে মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আলী আসগর বলেন, শুক্রবার বিকেলে হলের ১২০ নম্বর কক্ষ থেকে অবৈধভাবে ওঠা এক ছাত্রকে বের করে দেয়া হয়। সে চলতি শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। অথচ তৃতীয় বর্ষ, চতুর্থ বর্ষের অনেক ছাত্রও আবেদন করে হলে সিট পাচ্ছেন না। হলের সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য অবৈধভাবে ওঠা ওই ছাত্রকে বের করে দেয়া হয়। এটাই নিয়ম।

প্রাধ্যক্ষ আরও বলেন, আমি হল থেকে বিকেলে চলে আসার পর অন্য হলের ছাত্ররা সেখানে এসে নাকি বিক্ষোভ করেছে। বিষয়টি আমি পরে জেনেছি। কিন্তু আশ্চর্য হয়েছি, আমার অনুপস্থিতিতে প্রক্টর মহোদয় অনাবাসিক এবং অবৈধ ছাত্রকে হলে তুলে দিয়ে এসেছেন। অনাবাসিক কোনো ছাত্রকে হলে তুলে দেওয়ার এখতিয়ার প্রক্টর মহোদয়ের নেই। এটা সম্পূর্ণ নিয়ম কানুনের বাইরে।

জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে বিক্ষোভ করছে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রাধ্যক্ষকে কল দিই, তবে তিনি ফোন ধরেন নি। পরে আমরা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেয় যে, শনিবার প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বসে বিষয়টি মীমাংসা করে নেবে।’


শর্টলিংকঃ