অভিভাবকহীন পুঠিয়া বিএনপি, দিশেহারা তৃণমূল নেতাকর্মীরা


আবু হাসাদ কামাল, পুঠিয়া:

রাজশাহীর পুঠিয়ায় দলের মধ্যে গ্রুপিং লবিং-এর কারণে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন গুলো। ফলে দিশেহারা অবস্থায় রয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

তৃণমূলের অভিযোগ, জেলার নেতারা এককভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে গত ১৬ বছর থেকে এখানে দলীয় কোনো কাউন্সিল করা হয় না। বরং প্রভাবশালী ওই নেতারা নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে আত্নীয়করণ ও ভিন্ন মতের লোকজনদের দলে ভিড়িয়ে তাদের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলো বন্টন করেছেন।

এদিকে দলের শীর্ষ নেতাদের অবহেলার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক মামলা-হামলার শিকার হয়ে ত্যাগীদের মধ্যে অনেকেই নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন। আবার দলীয় কিছু স্বার্থান্বেষী নেতা বিশেষ সমঝোতায় বর্তমান ক্ষমতাসিন দলে জায়গা করে নিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ পুঠিয়া পিএন সরকারী স্কুল মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। পরের বছরের শুরুতে যুবদল ও ছাত্রদলেরও শেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রায় ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও দলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। বরং দলের শীর্ষ নেতাদের মন পছন্দের লোকজনের মাঝে দলীয় বড় পদ গুলো বন্টন করতে একাধিকবার পূনর্গঠন করা হয়েছে।

বর্তমানে উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন বিএনপি নামেমাত্র আহবায়ক কমিটির একটি তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের কারণে তা স্থগিত রয়েছে। আর ওই কমিটি যাচাই-বাচাই করতে চলতি বছরের শুরুতে রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেককে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়। এরপর দেশে করোনার প্রভাব দেখা দিলে তদন্ত কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।

এদিকে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ থেকে এই উপজেলায় বিএনপি সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রমে নেই। একই অবস্থা যুবদল ও ছাত্র দলের মাঝেও। পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল মিয়া অভিযোগ তুলে বলেন, দলের মধ্যে এখন আর সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম চলে না। বর্তমানে দলের মধ্যে একাধিক গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে দলের বড় একটি অংশ এখনো সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. নাদিম মোস্তাফার অনুসারি। বর্তমানে আবু সাঈদ চাঁদ জেলা বিএনপির আহবায়কের দ্বায়িত্বে আসার পর একটি অংশ তাকে অনুসরণ করছেন।

আবার গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলামেরও কিছু অনুসারী রয়েছে। দলের মধ্যে একাধিক গ্রুপিং লবিং এর কারণে এখন শুধু তেলবাজ, আত্নীয় করণ ও ভিন্ন দলের লোকজনের মাঝে দলীয় পদ বন্টন চলছে। আর তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক মামলা হামলার শিকার হলেও তাদেরকে কোনো সহায়তা করা হয় না। যার কারণে অনেকেই এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। আবার অনেক সুবিধাবাদীরা হামলা-মামলা এড়াতে বর্তমান ক্ষমতাসিন দলের লোকজনকে ম্যানেজ করে ওই দলে নাম লিখিয়েছেন।

জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রহমান ভুট্টো বলেন, এই আসনটি মূলত আ’লীগের। এখানে সাবেক সাংসদ নাদিম মোস্তফা ৯৬-এর নির্বাচনে আসনটি উদ্ধার করেন। সাংগঠনিক নিয়ম না মানলে দলের মধ্যে কোনো কার্যক্রমই সঠিক ভাবে চলতে পারে না। দলকে হাইবার নেশন থেকে মুক্ত করতে হলে প্রথমে আত্নীয় করণ, অরাজনৈতিক ও ভিন্ন দলের লোকজনের মাঝে দলীয় পদ বন্টন বন্ধ করতে হবে। এরপর অভ্যন্তরীন কোন্দল মিটিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনকে ঢেলে সাজাতে হবে।

তিনি আরো বলেন, কেবল ত্যাগী নেতারাই একজন কর্মী ও সমর্থকদের সার্বক্ষনিক পাশে থাকেন। তবে সাবেক এমপি ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. নাদিম মোস্তফার মুঠোফোনে দু’দিন থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে বর্তমান জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাইদ চাঁদ বলেন, দলে সাংগঠনিক নিয়মে দীর্ঘদিন থেকে কাউন্সিল না থাকায় কিছুটা বিভক্তি রয়েছে।

তবে আগামী ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে সীমিত আকারে দলকে নতুন ভাবে সাজানোর কাজ হবে। একই সময় যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটিও নতুন করে হবে। আর ওই কমিটিতে কোনো আত্নীয় করণ বা বহিরাগতদের ঠঁইি হবে না।


শর্টলিংকঃ