অভিযানের পর ফেডারেশনের অনেক কর্মকর্তার মধ্যে আতঙ্ক


দুর্নীতি ও অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর আতঙ্কে রয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে ক্লাব পাড়ার ক্যাসিনো উচ্ছেদ অভিযানের পর ক্রীড়াঙ্গনের অনেকের মধ্যেই ভীতি ছড়িয়েছে। এর বাইরে নেই ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোও। কারণ, অনেক ক্রীড়া ফেডারেশনে বড় বড় পদে ক্লাব প্রতিনিধিরা আছেন।

 

 

 

ফেডারেশনগুলোয় এমন প্রতিনিধিও আছেন, যাদের ক্লাব ইতিমধ্যে সিলগালা হয়ে গেছে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে। সে সব কর্মকর্তা বিভিন্ন ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও এখন আসা-যাওয়া অনেকটাই বন্ধ। অনেকে আছেন দেশের বাইরে। কেউ কেউ দিয়েছেন গাঢাকা।

দেশের অর্ধশতাধিক ক্রীড়া ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনের বেশিরভাগের কার্যালয়ই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম এবং পল্টন ময়দানের আশপাশের এলাকায়। বড় ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর মধ্যে ফুটবল মতিঝিলে, ক্রিকেট বোর্ড, সাঁতার মিরপুরে, বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশন গুলশানে, টেনিস রমনায় ও বাস্কেটবল ধানমন্ডিতে। বাকি প্রায় সব কার্যালয়ই পল্টন ময়দান সংলগ্ন স্থাপনাগুলোতে।

সাধারণত বিকেল থেকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত ফেডারেশন কার্যালয়গুলোতে কর্মকর্তাদের আনাগোনা থাকে। তবে ক্লাব পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে দুর্নীতি ও অবৈধ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর ফেডারেশনের কার্যালয়গুলো আগের মতো জমছে না।

ফেডারেশনগুলোর কার্যালয় ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কারো খোঁজ করলেই ফেডারেশনের স্টাফদের কাছ থেকে জবাব, ‘স্যার তো আসেন না বেশ কয়েক দিন ধরে।’

ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে কয়জনকে আটক করেছে তাদের মধ্যে ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাও আছেন। যে কয়টি ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ছিল সেই ক্লাবগুলোর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা আছেন ফেডারেশনের বড় পদেও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকও।

অবৈধ ক্যাসিনো থাকায় সিলগালা করে দেয়া ক্লাবগুলোর মধ্যে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশনের সভাপতি। ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। মমিনুল হক সাঈদ আছেন দেশের বাইরে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের কার্যালয়ে র‌্যাবের অভিযান দিয়ে শুরু হয় অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য উচ্ছেদ। এর চারদিন পর ২২ সেপ্টেম্বর পুলিশ একযোগে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্যাসিনো।

ফকিরাপুল, আরামবাগ ও মতিঝিলের যে ছয় ক্লাব থেকে অবৈধ ক্যাসিনো উচ্ছেদ করা হয়েছে তার মধ্যে মোহামেডান ছাড়া বাকি পাঁচ ক্লাব সিলগালা করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মোহামেডানের শুধু ক্যাসিনো ঘরটিই সিলগালা করা। ক্লাবের অন্য সবকিছুই খোলা। আজ (মঙ্গলবার) শুরু হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের দলবদল। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের দলবদলে অংশ নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।


শর্টলিংকঃ