অর্থের চাপে নাজেহাল শিক্ষার্থী-অভিভাবক


ইউএনভি ডেস্ক:

কুমিল্লায় স্কুল-কলেজে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ভর্তি ফি’সহ বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকার দলের নেতা, শিক্ষা সেক্টরের বিভিন্ন কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এমন নৈরাজ্য চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ফলে করোনা মহামারীতে এ অতিরিক্ত অর্থের চাপে নাজেহাল হচ্ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে চরম খেসারত দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। সন্তানদের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব হজম করছেন অভিভাবকরা।

জানা গেছে, কুমিল্লা জেলায় ২১০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছয় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন, ৬৪০টি মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয় এবং ১৫৭টি কলেজ রয়েছে। নামিদামি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতো সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একই কায়দায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

করোনা মহামারীতে জনজীবন বিপর্যস্ত। এ দুর্যোগেও সরকারের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেও অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের পাঠদান না করেই বেতন ও অনলাইন পরীক্ষার নামে ফি আদায় করছে। করোনা মহামারীতে বেতন মওকুফসহ বিভিন্ন ধরনের ফি আদায় বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেও কোনো ফল পায়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সরকারের এক পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এবারের ভর্তি কার্যে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রশংসাপত্রসহ কোনো ধরনের প্রমাণ্যপত্র জমা/গ্রহণের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সরকারি এ নীতিমালা লঙ্ঘন করে এসবের জন্যও অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এ অভিযোগ জানান নগরীর কয়েকটি কলেজের ভুক্তভোগীরা।

অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষও। শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানিয়েছে, এমপিওভুক্ত মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকায় অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেশন চার্জসহ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি এক হাজার টাকা। পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা ভর্তি বাবদ আদায় করতে পারবে।

কিন্তু সরকারের এ নীতিমালা মেনে নগরীর কোনো কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ভর্তি করছেন না। নিচ্ছেন সাড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। জানা গেছে, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করেছেন বুড়িচং সোনার বাংলা কলেজ, নগরীর রূপসী বাংলা কলেজ, রেসিডেন্সিয়াল কলেজ, ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কুমিল্লা কমার্স কলেজ, কুমিল্লা বিজ্ঞান কলেজ, ক্যামব্রিয়ান কলেজ (কোটবাড়ি), সিটি কলেজ (কোটবাড়ি), পাঠশালা কলেজ, মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজ, নিমসার কলেজ, বুড়িচং এরশাদ কলেজ, আবু তাহের কলেজ, ড. মোশাররফ হোসেন কলেজ, ড. মোশাররফ ফাউন্ডেশন কলেজ, অধ্যক্ষ আবদুল মুজিদ কলেজ, শ্রীকাইল সরকারি কলেজ, কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজ, মুরাদনগর নোমান আহাম্মেদ ডিগ্রি কলেজসহ জেলার অধিকাংশ কলেজ কর্তৃপক্ষ। যদিও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের অভিযোগগুলো অস্বীকার করে অর্থ আদায়ের খাতগুলোর স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।

এ বিষয়ে সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ, রূপসী বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ ইয়াছিনুর রহমান ইয়াছিন বলেন, সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে আমরা ভর্তি ফি বাবদ কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করিনি। যৌক্তিক কারণ ছাড়া আমরা কোনো অর্থ আদায় করি না। ভর্তি ফি’র নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজ এবং কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজসহ কয়েকটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি বাবদ ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে ২ হাজার ৫০৯ টাকা, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ২ হাজার ৩৬৯ টাকা করে আদায় করেছেন। কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে এ বছর বিজ্ঞানে ভর্তি ফি আদায় করছে ২ হাজার ৫২০ টাকা, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ২ হাজার ৪২০ টাকা। কুমিল্লা সরকারি কলেজে এ বছর বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাসহ তিন শাখায় ভর্তি ফি ২ হাজার ৩৬৭ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জামাল নাছের বলেন, সরকারের পরিপত্র মেনেই আমরা একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছি। পরিবহন, অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারী ও নৈশ প্রহরী, অতিথি শিক্ষক এবং মসজিদ ফিসহ আরও একাধিক খাত মিলিয়ে ভর্তি ফি’র সঙ্গে ২ হাজার ৪২০-৫২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো ফি নেয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুস সালাম বলেন, পরিপত্র ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অনেক অভিযোগই আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি। তবে কোনো শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক এখনও সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসেনি। কোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাবক সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করলে আমরা অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির বিরুদ্ধে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

-যুগান্তর


শর্টলিংকঃ