অর্ধশতাব্দী পরও মন কাড়ে প্যারিস রোড


হোসাইন মুহম্মদ সাজ্জাদ, রাবি:

১৯৬৬ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম শামসুল হক ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কাজলা গেট থেকে শের-ই-বাংলা হল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে লাগিয়েছিলেন গগণশিরীষ গাছগুলো। ক্রমে বড় হয়ে ওঠে গাছগুলো। যা মন কাড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বেড়াতে আসা পর্যটকদের। হিসেব অনুযায়ী ৫৩ বছর পেরিয়েছে বৃক্ষশোভিত রাস্তাটি। তবুও মন কাড়ে চিরযৌবনা প্যারিস রোড।

অর্ধশতাব্দী পেরিয়েও মন কাড়ে চিরযৌবনা প্যারিস রোড।

পিচঢালা মসৃণ রাস্তা। দুইপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে আকাশচুম্বি গগণশিরীষ গাছ। গাছগুলো শুধু রাস্তার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিই করে না, বহুদিনের ইতিহাস-ঐতিহ্য লালনও করে। প্রকৃতিপ্রেমীরা দলবেঁধে এই রাস্তা দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে।

শীতের সকালের মিষ্টি রোদ গাছের মাথায় এসে পড়েছে।  বিস্তীর্ণ শাখা-প্রশাখা ভেদ করে রোদ এসে পড়েছে রাস্তায়। উত্তরবঙ্গের উচ্চশিক্ষার বিদ্যার বাতিঘর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেই দেখা মিলবে সৌন্দর্য্যমণ্ডিত এই রাস্তাটির।

বৃষ্টিস্নাত প্যারিস রোড।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে ছেড়ে গেছেন ক্যাম্পাস।

প্রকৃতির নিয়মে তাদের অনেকেই বৃদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু চিরযৌবনা এই প্যারিস রোড এখনও নজর কাড়ছেন।

ইতিহাস-ঐতিহ্য, রোমান্টিকতার স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছগুলো।

জানা যায়, ক্যাম্পাসজুড়ে হরেক রকমের গাছ রয়েছে। যা এই মতিহারের চত্ত্বরকে সবুজ ও সুসজ্জিত করে রেখেছে।

তবে প্যারিস রোড শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে নয়, বাইরের দর্শনার্থীদের কাছেও প্রাণের জায়গায় পরিণত হয়েছে।

বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে রাস্তাটির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। বেড়াতে এসে  স্মৃতি ধরে রাখতে ক্যামেরাবন্দি হতে কেউই ভুল করেন না।

জানা যায়, ফিলিপাইন থেকে আনা হয় গাছগুলো। এ গুলোকে রেইন ট্রিও বলা হয়। রেইন ট্রি গাছগুলো বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।

এজন্য কেউ কেউ বলেন থাকেন তৎকালীন উপাচার্যের নির্দেশেই উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী মোহাম্মদ ইউনুস সিলেট অঞ্চল থেকে গাছগুলো নিয়ে এসেছিলেন।

তবে সৌন্দর্য্যবর্ধনের জন্য গাছগুলো যেখান থেকেই আনা হোক, রাস্তাটি দেখতে প্যারিস শহরের মতোই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই রাস্তাকে ‘প্যারিস রোড’ নামে চেনে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে পরিচিতি পেয়েছে গোটা দেশে। ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত অসংখ্য দর্শনার্থী কৌতুহলবশত এই প্যারিস রোডটিকে দেখতে আসেন।

কুষ্টিয়া থেকে ঘুরতে আসা হৃদয় নামের একজন বলেন, ‘প্যারিস রোড নামটি শুনেই খুব কৌতুহল লাগতো। অনেকদিন থেকে ইচ্ছা ছিলো এই রোডটি দেখতে আসার। রোডটির নামটিও খুব অদ্ভুত। নামের সাথে সৌন্দর্য্যরেও মিল রয়েছে। আমি রাস্তাটি দেখে মুগ্ধ।’

রাতের প্যারিস রোড।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আমিরুল আজাদ আমির বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বললেই যার নামটি মনসপটে প্রথমে ভেসে উঠে সেটা হলো প্যারিস রোড। রাস্তাটি শুধু প্রেমিক যুগলের আবেগের জায়গা নয়। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী আবেগ-অনুভূতির জায়গা। অতি সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে রাস্তাটির সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে। রাস্তাটি সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তানভীর আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে রাস্তাটি প্যারিসের মত মনে হয়। বিশেষ করে বসন্তকালে রাস্তাটির সৌন্দর্য্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে রাস্তাটি তার নিজস্ব সৌন্দর্য্য হারাতে বসেছে।’

আরও পড়ুন: পদ্মা-গড়াইয়ের সংসারে কবে আসবে নতুন অতিথি?

 

 


শর্টলিংকঃ