আইএস সত্যিকার শান্তির ইসলাম নয় : তসলিমা নাসরিন


ইউএনভি ডেস্ক:
সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও এর সঙ্গে জড়িত শামীমা প্রসঙ্গে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তসলিমা নাসরিন মনে করেন, আইএসে যোগদান করা অনেক জঙ্গি তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আইএস যে সত্যিকার শান্তির ইসলাম নয়, সেটি তারা অনুধাবন করতে পেরেছেন।

তসলিমা নাসরিন

তবে শামীমার সে বোধদয় হয়নি বলে তিনি মনে করেন। কোন দেশে হতে পারে শামীমার ঠাঁই, সে বিষয়েও নিজের মত জানিয়েছেন।
তসলিমা নাসরিনের সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো- ‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, পৃথিবীর ১১১ দেশের অন্তত ৪১ হাজার ৪৯০ জন মানুষ আইএসে আকৃষ্ট হয়েছে।

তারা ইরাকে আর সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যের নাগরিকই যোগ দিয়েছে প্রায় ৬ হাজার। বর্বরতা, নৃশংসতা হয়তো মানুষের রক্তেই। তা না হলে এত মানুষ কেন খুন করার জন্য উন্মাদ হয়েছে!

আইএসের পতন নিশ্চিত হওয়ার পর অনেক সন্ত্রাসী যার যার দেশে ফিরে গেছে। ১৮০০ জন সন্ত্রাসী ফিরে গেছে ইউরোপে। অবশ্য এখনও ইরাক ও সিরিয়ায় ১৪ হাজার থেকে ১৮ হাজার সন্ত্রাসী রয়েছে। এরাও একসময় নিশ্চিহ্ন হবে।

এটি ঠিক যে, অনেকে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। আইএসের মতো বর্বর দলের সঙ্গে ভেড়াটা যে তাদের উচিত হয়নি, সেটি বোধগম্য হয়েছে অনেকের। আইএস যে সত্যিকার শান্তির ইসলাম নয়, বরং অশান্তি আর অস্থিরতার, সেটি অনুধাবন করতে পেরেছে তারা।

কিন্তু সেটি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমের এখনও বোধগম্য হয়নি, এখনও তার ঘোর কাটেনি। ডাস্টবিনে মানুষের কাটা মুণ্ডু দেখেও যে তার কোনো অনুশোচনা বা অনুতাপ হয়নি, সেটি সে আজও বেশ গর্ব করে বলে।আইএসের হত্যার রাজনীতি নিয়ে তার কোনো সংশয় নেই, আশঙ্কা নেই। সে বরং মনে করে এটিই সত্যিকারের ইসলাম।

শামীমা অনুতপ্ত তো নয়ই; বরং গর্বিত কণ্ঠেই বলেছে- আইএসে যোগ দিয়ে সে ভুল করেনি। চোখের সামনে দুই সন্তানের মৃত্যু হলো। তার পরও তার একবারও আক্ষেপ হয় না কেন সে সিরিয়া এসেছিল। সে এখনও বিশ্বাস করে আইএসের আদর্শে। যুক্তরাজ্যে তার ফিরে যেতে চাওয়ার একমাত্র কারণ তার পুত্র যেন বেঁচে থাকে, দুই সন্তান হারানোর পর তার এই আকুতি। পুত্রটি তার এবং আইএসের এক ওলন্দাজ সন্ত্রাসীর সন্তান।

উগ্র সালাফি আদর্শে বিশ্বাস করা শামীমা কেন সালাফিদের সৌদি আরবে আশ্রয় চাইছে না, তা আমি বুঝতে পারছি না। এত এত নিরীহ নিরপরাধ অমুসলিম খুন করার পরও অমুসলিমদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করার পরও বাস করার জন্য তারা সেই অমুসলিমদের দেশকেই বেছে নেয়।

কী ভীষণ বৈপরীত্য তাদের কথায় ও কাজে! যুক্তরাজ্য শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করার পর সে এখন তার স্বামীর দেশ নেদারল্যান্ডসে যাওয়ার চেষ্টা করবে, নিজেই বলেছে।যদি নেদারল্যান্ডসও তাকে অনুমতি না দেয়, তা হলে? তা হলেও কি সে বলবে না আইএসে যোগ দিয়ে সে ভুল করেছিল? শামীমা তার করুণ পরিণতির জন্য নিজেকে নয়, বরং যুক্তরাজ্যকেই দোষ দিচ্ছে।

শামীমা যুক্তরাজ্যে ফিরে গেলে, আমার ভয় হয়, সে হয়তো বোরকার আড়ালে বোমা নিয়ে ভিড়ের রাস্তায় বা মেট্রোরেলে যাবে মানুষ খুন করতে। তা হলে কী চরম ডানপন্থীদের মতো বলব- সন্ত্রাসীদের বা জিহাদিদের মেরে ফেলো? না, তা বলব না। সকলেরই বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আমি বরং চাইছি- শামীমা তার আদর্শে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বাস করুক। বিধর্মীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে বিধর্মীদের দেশ যুক্তরাজ্যে যাওয়াটা নিরাপদ নয়।

শামীমা এবং আরও যারা আইএস জঙ্গি রাষ্ট্রহীন অবস্থায় ইরাকে বা সিরিয়ায় পড়ে আছে, যারা ইউরোপ আমেরিকার নাগরিকত্ব হারিয়েছে, ইউরোপ বা আমেরিকায় নয়, তাদের চেষ্টা করতে হবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে বাস করার।

বিশেষ করে যেসব দেশে শরিয়া আইন কায়েম আছে। ওসব দেশেই তারা মনের শান্তি ও সুখ সব পাবে। বোরকা পরে চলাফেরা করলে ওসব দেশে কেউ টিপ্পনি কাটবে না। ইউরোপের মতো বোরখা নিষিদ্ধ করার আইন জারি হবে না। কেউ তাদের সন্ত্রাসী বলে হামলা করবে না। মুসলিম সমাজে ওরা সহজে মিশে যেতে পারবে। তাই সবাই মিলে ওদের ইউরোপ আমেরিকায় ফেরত পাঠানোর পরিবর্তে শরিয়া আইনের দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করুন।’


শর্টলিংকঃ