- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

আইসিটি ডিভিশনে ভুয়া পদে কে এই টিনা জাবীন?


সরকারের আইসিটি ডিভিশনে টিনা জাবীন নামে একজন নারী উদ্যোক্তা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজেকে স্টার্টআপ বাংলাদেশের ইনভেস্টর অ্যাডভাইজর হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলেও একই পরিচয় দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগে এই নামে কোনো পদই নাই।

স্টার্টআপ বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে অ্যাডভাইজর বোর্ডের ১৫ জন এবং সিকেলশন কমিটিতে ১৫ জনের নাম রয়েছে; তবে সেখানেও নেই টিনা জাবীনের নাম।

তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ইনভেস্টমেন্ট ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশীপ একাডেমি (আইডিয়া) প্রজেক্ট সূত্রে জানা গেছে, গতবছর প্রকল্প শুরু হওয়ার সময় টিনা জাবীনকে আইডিয়া প্রজেক্টের সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে অস্থায়ীভাবে ৬ মাসের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়।

নিয়োগপ্রাপ্তির পর তার বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। নিয়ম অনুযায়ী, কনসালটেন্টদের রিপোর্ট দেয়ার বিষয়ে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হলেও তিনি তা কখনই করেননি। এছাড়া কোনো অনুমতি ছাড়াই দেশের বাইরে চলে যেতেন। এসব কারণে তাকে ৬ মাস পর পুনরায় নিয়োগ অনুমোদন করা হয়নি।

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনেক প্রোগ্রামেই নিয়মিত দেখা যায় টিনা জাবীনকে। দেশের বাইরে সরকারি সফরেও প্রতিমন্ত্রীর বহরে দেখা গেছে তাকে। টেলিভিশন টকশো ছাড়াও নানান অনুষ্ঠানে তিনি নিজেকে স্টার্টআপ বাংলাদেশের ইনভেস্টর অ্যাডভাইজর হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

তার এই পরিচয় কতটা সত্য? এ বিষয়ে জানতে আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সৈয়দ মজিবুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি  বলেন, ‘নানান অভিযোগের কারণে টিনা জাবীনকে ৬ মাস পর পুনরায় কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ না দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য তার স্থলাভিষিক্ত নতুন কনসালটেন্ট নেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।’

পুনরায় নিয়োগ না দেয়ার আর কী কারণ আছে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখানে প্রতিটি কনসালটেন্টকে ৬ মাসের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। সে ভাল পারফর্মেন্স না করলে তাকে পুনরায় আর নিয়োগ দেয়া হয় না।’

তিনি বলেন, ‘নতুন কনসালটেন্ট নেয়ার জন্য আবেদন নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে উপযুক্ত কাউকে না পাওয়ার কারণে আবারও এই পদের জন্য আবেদন নেয়া হচ্ছে। পদটি এখন খালি রয়েছে।’

টিনা জাবীন প্রকাশ্যেই নিজেকে স্টার্টআপ বাংলাদেশের ইনভেস্টর অ্যাডভাইজর হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। উনি কি সেখানে নতুন পদে যোগ দিয়েছেন? উত্তরে সৈয়দ মজিবুল হক বলেন, ‘এই নামেই এখানে কোনো পদই নাই। তাহলে উনি কীভাবে এখানে আছেন সেটা আমার জানা নেই।’

টিনা জাবীন এখন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কোনো পদে আছেন কিনা জানয়ে যোগাযোগ করা হলে আইসিটি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘তিনি এখন মন্ত্রণালয়য়ের কোনো পদে নেই। তবে তিনি মন্ত্রণালয়কে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।’

টিনা জাবীন আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কোন দায়িত্বে আছেন জানতে  যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আইডিয়া প্রজেক্টে একদম শুরু থেকেই আছি। স্টার্টআপ বাংলাদেশের ইনভেস্টর অ্যাডভাইজর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’ কিন্তু এ নামে তো কোনো পদই নেই; এমন প্রসঙ্গ নিয়ে আসলে তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন।

আগে আইডিয়া প্রজেক্টের সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে ছিলেন। কিন্তু আপনার পারফর্মেন্স ভাল না হওয়ার কারণে ৬ মাস পর পুনঃনিয়োগ দেয়া হয়নি বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে টিনা জাবীন বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোন কমেন্ট দিতে পারবো না। কোনো কিছু জানার দরকার হলে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’

প্রসঙ্গত, ১৯ আগস্ট স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড নামে সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন একটি সরকারি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানির নীতিগত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদ। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠার পর স্টার্টআপ মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে সিড স্টেজে সর্বোচ্চ এক কোটি এবং গ্রোথ গাইডেড স্টার্টআপ রাউন্ডে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে।

স্টার্টআপ বাংলাদেশের অ্যাডভাইজর বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং সিকেলশন কমিটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক।