আজাদি সংগ্রামের উজ্জীবক


দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচারে যুগে যুগে মানুষ নির্যাতিত নিগৃহীত, শোষিত ও বঞ্চিত হয়েছে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ স্বেচ্ছাচারী প্রবণতার শিকার হয়ে পৃথিবীতে বহু দেশের, বহু মানুষের স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহ ব্যাহত হয়েছে ও হচ্ছে। তাদের বহন করে আসতে হচ্ছে চরম দুঃখ-যন্ত্রণার গ্লানি। অজ্ঞতা-অক্ষমতার কারণে ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অধিকাংশ মানুষ সবলের জুলুম-নিপীড়ন সহ্য করতে থাকলেও একটি সময় আসে, যখন তাদের মধ্য থেকেই এমন সব ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে, যারা আরো দশজনের ন্যায় অত্যাচারীর জুলুম-নিপীড়ন নীরবে মেনে নিতে প্রস্তুত হয় না। বরং সেই জুলুমের বিরুদ্ধে হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। রুখে দাঁড়ায় ওইসব মজলুম মানুষের পক্ষ হয়ে জালিম কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশের এ মাটিও অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো সন্তান কম জন্ম দেয়নি। মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশও বাংলাভূমির সেই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরগুলোরই একটি। যিনি আজীবন তার জন্মস্থান সিরাজগঞ্জেরই কৃতীসন্তান নিজ পূর্বসূরি ইসমাইল হোসেন সিরাজী ও মওলানা ভাসানীসহ দেশের অন্যান্য পূর্বসূরির মতো মজলুম জনতার পক্ষ হয়ে কথা বলেছেন। অবিভক্ত কি বিভক্ত ভারত উভয় অবস্থাতেই এ দেশের মানুষের আজাদির জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি বহিরাগত দখলদার জালিমশাহী উত্খাতে সংগ্রাম ও আন্দোলন করেছেন।

তাদের স্থানীয় অত্যাচারী দোসর হিসেবে যেসব জমিদার ও ইংরেজ কর্মচারী এ দেশের রাজ্যহারা সম্পদহারা মুসলমানদের নানাভাবে শোষণ করত, তাদের বিরুদ্ধে তেজদীপ্ত সংগ্রামের ইতিহাস রেখে গেছেন। জনদরদ ও জননেতৃত্বের অম্লান নিদর্শন বিশ শতকের সূচনায় নবাব স্যার সলিমুল্লাহর চেষ্টায় বঙ্গদেশ বিভক্ত হলে (১৯০৪ খ্রি.) বাংলা-আসামের মুসলমানদের মাঝে নবজীবনের যে সাড়া জাগে, সে সময় থেকেই একদিকে বিদেশী ইংরেজ ও অন্যদিকে প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের আধিপত্য থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য এ দেশের মুসলমানদের শেরেবাংলা মৌলভী এ কে ফজলুল হক, মওলানা মুহাম্মদ আকরম খাঁ প্রমুখ নেতা মুসলিম সমাজকে সংগঠিত করে আত্মনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত করার সাধনায় নিয়োজিত ছিলেন, তাদের নেতৃত্বের ফলেই পরবর্তীকালে খাজা নাজিমুদ্দিন এবং হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মুসলিম সমাজকে আরো সংহত করে তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায় করতে সচেষ্ট হন।

মাওলানা তর্কবাগীশও এদের ধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতি ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছিলেন। অবশ্য তিনি বিশেষভাবে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ভাবধারায় প্রভাবিত ছিলেন। সেই প্রভাবেই তিনি মুসলিম সমাজকে তার যথোপযুক্ত আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। এ দেশীয় মুসলিম সমাজ যাতে কারো কাছে নত না হয়, এজন্য তিনি ছিলেন সর্বদাই সতর্ক এবং দৃঢ়সংকল্প। স্বাধীনতা ও ইংরেজ শাসনবিরোধী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র সুবিখ্যাত ইসলামী প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ ও ছাহারানপুরে তিনি শিক্ষা লাভ করেন। সেখান থেকে শিক্ষা লাভের পর লাহোরের এশায়াতে ইসলাম কলেজে শিক্ষা লাভের সময় তিনি তর্কবাগীশ খেতাব লাভ করেন। তর্কবাগীশের নেতৃত্ব তিনটি ঐতিহ্য ধারায় সমৃদ্ধ ছিল। (১) পীর দরবেশ ওলামা মাশাইয়েখদের ধারা (২) অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশবিরোধী মুক্তি সংগ্রাম ও (৩) কৃষক শোষক সুদখোর মহাজন ও ইংরেজ তাঁবেদার কৃষক শোষক জমিদারি প্রথাবিরোধী সংগ্রামের ঐতিহ্য। জাতির যেসব কৃতী সন্তান দেশের মানুষের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে গেছেন, তাদের অবস্থান যার যেখানেই থাক, ইতিহাসের পাতায় তাদের অবদান এজন্যই ধরে রাখতে হয়, যেন তা নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে ও তারা সঠিক দিক-নির্দেশনা খুঁজে পায়।

পাঠ্যপুস্তকগুলোতেও এজন্যই তাদের ধরে রাখতে হয়। মাওলানা তর্কবাগীশ তিনটি শাসনকালের সাক্ষী ও তখনকার জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেই সক্রিয় ও সোচ্চারভাবে জড়িত ছিলেন। ইংরেজ আমল, পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ। ইংরেজ আমলের যেই বিরাট ত্যাগের ঘটনাটি তাকে জাতীয় জীবনে অধিক খ্যাতি ও আলোচনায় আনে, তা হলো ইংরেজবিরোধী ঐতিহাসিক সলঙ্গার রক্তাক্ত ঘটনার ইতিহাস। বৃহত্তর পাবনার সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গার বড় হাটে ২৭ জানুয়ারি, ১৯২২ সালে ইংরেজবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবী কর্মী নিয়ে তর্কবাগীশ বিদেশী পণ্য বর্জনের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছিলেন। তখন ইংরেজ সরকারের পুলিশের গুলিতে সেই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক। মাওলানা তর্কবাগীশ সেদিন আহত ও রক্তাক্ত হয়েছিলেন। মাওলানা তর্কবাগীশের পাকিস্তান আমলের অবদানমূলক কাজগুলোর মধ্যে প্রধান ছিল ভাষা আন্দোলনে অ্যাসেম্বলির ভেতর-বাইরে সংগ্রাম এবং ভাষা আন্দোলনে কারাবরণ।

দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশবিরোধী আজাদি সংগ্রামে সলঙ্গা হত্যাকাণ্ডকে নিষ্ঠুরতম ও বৃহৎ হত্যাকাণ্ড বলা চলে। আর এ হত্যাকাণ্ডই উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান উজ্জীবক ঘটনা ছিল। নানা কারণে ইতিহাসের বিকৃতির দরুন সলঙ্গা তার যথার্থ স্থান পায়নি। পরশ্রীকাতর এক শ্রেণীর লেখকের সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা হেতু সংবাদপত্রে, প্রচার মাধ্যমে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে এ কারণেই সলঙ্গা তার ব্যাপকতা নিয়ে উজ্জ্বল হতে পারেনি, এর যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। ঐতিহাসিক সলঙ্গা বিদ্রোহ ছিল মাওলানা তর্কবাগীশের জীবনকালের এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। ইংরেজবিরোধী এ বিদ্রোহে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা মূলত উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান উজ্জীবক ঘটনা হিসেবে কাজ করেছিল।

১৯২৩ সালে তিনি সলঙ্গা ঘটনায় কারা মুক্তি লাভ করেন। জালিয়ানওয়ালাবাগে ইংরেজ হত্যাকাণ্ডের খবর যেমন তখনকার ভারতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়, তেমনি সলঙ্গার এ গণহত্যার খবরও তখনকার কলকাতার দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ হয়। কিশোর তর্কবাগীশের দ্বিতীয় আঘাতটি ছিল সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে, যে অনাচার মুসলিম সমাজে অবক্ষয় ডেকে এনেছিল। তাদের জাতীয়তাবাদী চেতনাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিল। এ কিশোর বালক গোটা শেরপুর এলাকায় এক অভূতপূর্ব জনজাগরণের সৃষ্টি ছিলেন।

উত্তরবঙ্গের রায়ত-খাতক আন্দোলন সংগঠিত করে এ তর্কবাগীশ ঋণ সালিশি বোর্ড গঠনের বীজও বপন করেন। ঋণভারে জর্জরিত গরিব কৃষকদের ঋণের বোঝা মুক্তির জন্য ঋণ সালিশি বোর্ড গঠনের উদ্দেশ্যে ১৯৩৩ সালে জানুয়ারিতে মাওলানা তর্কবাগীশ চাঁচকৈড়ের কৃষক কনফারেন্সের উদ্যোগ নেন। তিনি এজন্য গ্রাম থেকে তরুণ-যুবকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করেন। তারা ওই কনফারেন্সের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডাল-চাল ও প্রয়োজনীয় কাঠ ইত্যাদি সংগ্রহ করে। প্রস্তুতি পর্ব যখন পুরোপুরি শেষ হয়, তখনই ১৯৩৩ সালের ১২ জানুয়ারি রাজশাহীর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৪ ধারা জারি করে কনফারেন্সের কাজ স্থগিত করে দেন। পরে বহু চেষ্টার পর ফেব্রুয়ারিতে অনুমতি পাওয়া যায়।

সেই কনফারেন্সে তত্কালীন বৃহত্তর বাংলার শিক্ষামন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন এবং হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ও অন্য নেতৃস্থানীরা উপস্থিত হন। কনফারেন্সে মাওলানা তর্কবাগীশ তার সুদীর্ঘ ভাষণে বলেন, আমরা বিরাট আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এজন্য সমবেত হয়েছি যে, মরণ পথের যাত্রী দল কৃষক সমাজ আজ বাঁচতে চায়। তারা নিজেদের ওপর থেকে ঋণের মহা বোঝা সরাতে বদ্ধপরিকর। মূলত এই কনফারেন্সের পরই এ দেশের কৃষক সমাজের ঘাড়ে আপতিত বিরাট ঋণ সমস্যা দূরীকরণের জন্য ঐতিহাসিক ঋণ সালিশি বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের প্রচেষ্টায় বঙ্গীয় আইন পরিষদের ঋণ সালিশি বোর্ড গঠনের আইন পাস হয়। তাতে কৃষককুল ২৪০ কোটি টাকার ঋণ মুক্ত হয়। যদিও ইতিহাসে বাংলার রায়ত-খাতক আন্দোলনের মতো মুসলিম কৃষকদের আন্দোলনের কথা নেই, কিন্তু এতে তর্কবাগীশের রয়েছে বিরাট অবদান।

স্বাধীনতার পর মাওলানা তর্কবাগীশের উদ্যোগেই মাদ্রাসা শিক্ষা পুনরায় চালু করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তিনি ছিলেন প্রথম চেয়ারম্যান। সে হিসেবে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তবোচিতভাবে গড়ে তুলতে তিনি ছিলেন সচেষ্ট। তার উদ্যোগেই ওই সময় ইসলামী একাডেমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে রূপ নেয়। মাওলানা আলাউদ্দিন আল-আজহারীর নেতৃত্বে রেডিও বাংলাদেশের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে আরবি সংবাদসহ অনুষ্ঠান প্রচারের যে সূচনা হয়, তাও সম্ভব হয়েছিল মাওলানা তর্কবাগীশের সহযোগিতায়। রেডিও-টেলিভিশনে কুরআন তিলাওয়াত ও ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচারের নিয়মও পুনরায় চালু করানোর ব্যাপারে তার ভূমিকা প্রধান ছিল। তিনি তার সিরাজগঞ্জ জেলার গ্রামের বাড়িতে ইসলামী চিন্তাবিদদের দাওয়াত দিয়ে এক মহাসম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। সে সভায় তিনি ইসলামী সমাজের মূলনীতি এমন বলিষ্ঠ ভাষায় তুলে ধরেন যে রমজানের মাস হলেও রাতের দীর্ঘ অংশ পর্যন্ত তার এবং অন্যান্য ওলামায়ে কেরামের বক্তৃতা শ্রোতারা শুনেছেন।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন ও তর্কবাগীশ: ভাষা আন্দোলনে গ্রেফতারকৃত মাওলানা তর্কবাগীশ কারাগারে থাকা অবস্থায়ই তাকে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য করে নেয়া হয়েছিল। ১৮ মাস পর ’৫৩ সালের ৩১ জুন কারাগার থেকে মাওলানা তর্কবাগীশ মুক্তি পান। এ সময়টিতে পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল অত্যন্ত জোরদার। সেই আন্দোলনের ফলে ’৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হলে মওলানা ভাসানী এবং সোহ্রাওয়ার্দী নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ, শেরেবাংলা মৌলভী এ কে ফজলুল হকের শ্রমিক পার্টি, মাওলানা আতাহার আলীর নেতৃত্বাধীনে নেজামে ইসলাম পার্টি, আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীনে খেলাফতে রাব্বানী ও মাহমুদ আলীর নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রী দলের সমন্বয়ে নির্বাচনী মোর্চা ঐতিহাসিক যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের কাছে চরম পরাজয় বরণ করে। ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র নয়টি আসন মুসলিম লীগ পায়, অবশিষ্ট সব আসনেই যুক্তফ্রন্ট জয়ী হয়।

মাওলানা আব্দুর রশীদ যুক্তফ্রন্ট গঠনেও বিরাট ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আটজন প্রতিদ্বন্দ্ব্বীকে পরাজিত করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। ১৯৫৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তফ্রন্টের পার্লামেন্টারি পার্টির সভা যদিও শেরেবাংলার সভাপতিত্বেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের জহির উদ্দিনের প্রস্তাবনা ও শেখ মুজিবের সমর্থনে মাওলানা তর্কবাগীশ সভাপতিত্ব করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে বন্ধ মাদ্রাসা শিক্ষা পুনরায় চালুকরণে তর্কবাগীশের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন।

রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর মাওলানা তর্কবাগীশ মোনাজাত পরিচালনা করেন। মুক্তিপাগল বিশাল জনসমুদ্র সেই মোনাজাতে শরিক হয়। নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর তিন দিনব্যাপী আলোচনা বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর ২৫ মার্চ রাত থেকেই ইয়াহিয়ার নির্দেশে রাজধানী ঢাকায় সামরিক অভিযান শুরু হয়। পাক সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড শুরু করে। সে যেন অঘোষিত এক যুদ্ধ।

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ দুপুরে মাওলানা তর্কবাগীশ ঢাকার বনগ্রাম লেনের বাড়ি থেকে সপরিবারে ঢাকা ত্যাগ করেন। যুদ্ধের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার বাসভবনটি লুট ও বেদখল হয়ে যায়। গ্রামের দ্বিতল বাড়িটি পাকবাহিনী জ্বালিয়ে দেয়। ঢাকার বাসভবনে যেসব মূল্যবান গ্রন্থ, ছবি, উপহারসামগ্রী ছিল, সবকিছু লুট হয়ে যায়। স্বাধীনতাযুদ্ধের নয় মাস মাওলানা তর্কবাগীশকে অন্য সবার মতো দুঃসহ জীবন যাপন করতে হয়। ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি রাত ৮টায় তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ফিরে আসেন এবং মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।

সুত্রঃ বনিক বার্তা


শর্টলিংকঃ