আটকের নাটক সাজিয়ে ডিবি পুলিশের অর্থ আদায়


ইউএনভি ডেস্ক:

বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় মেয়ে জামাতাকে আটকের নাটক সাজিয়ে শাশুড়ির কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

পটুয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশের এসআইসহ কয়েক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে।

ভুক্তভোগীরা জানান, দাবি অনুযায়ী সব অর্থ পরিশোধ না করায় মিথ্যা মামলা, এলাকা ত্যাগ, ভয়-ভীতিও প্রদর্শন করেছে অভিযুক্ত ওই পুলিশ সদস্যসহ তাদের একটি দালাল চক্র। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশে কর্মরত এসআই রফিকুল ইসলাম, সদস্য ইব্রাহীম ও মামুনকে অভিযুক্ত করে নিয়াজ মোর্শেদ শুভ নামে এক যুবক এসপির কাছে লিখিত অভিযোগের সঙ্গে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কিছু আলামতও দাখিল করেছেন।

ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় পটুয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশ সদস্য ইব্রাহীম ভিকটিম শুভকে ফোন করে অবস্থান নিশ্চিত করে। এরপর ডিবি পুলিশের এসআই রফিকের সঙ্গে শুভর ফোনালাপ করিয়ে শহরের বনানী এলাকায় থেকে শুভকে তুলে লঞ্চঘাটস্থ আবাসিক হোটেল কিসমতে নিয়ে যায়। হোটেল কিসমতের একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে সম্প্রতিকালে শহরের মাদক ব্যবসায়ী মলিকে থাপ্পর দেয়ার অজুহাতে শুভকের চরথাপ্পর মারা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের ওই অভিযানে এসআই রফিক, পুলিশ সদস্য ইব্রাহীম ও মামুন ব্যতীত আরো এক বহিরাগত যুবককে পুলিশ পরিচয়ে অভিযানে অংশ ঘটায়। অথচ ওই যুবকের সঙ্গে পুলিশের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সূত্র দাবি করেন। এসআই রফিক টিমে লোক সঙ্কট থাকায় ওই যুবককে পুলিশ পরিচয়ে ভাড়ায় আনা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

হোটেল কক্ষে অবরুদ্ধ করে মোবাইল ফোন নিয়ে শুভ’র শাশুড়ি লাইজু আক্তারকে ফোন করে জানায়, শুভকে মাদকসহ আটক করা হয়েছে। ছাড়াতে হলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। পুলিশের ফোন পেয়ে শুভ’র শাশুড়ি চমকে ওঠে শুভ’র সাথে কথা বলতে চাইলে কথা বলতে দেয়া হয়নি। দুই-তিন ঘন্টার রফাদফার এক পর্যায় দুই লাখ টাকা মুক্তিপনে শুভকে ছেড়ে দেয়ার চুক্তি হলে ওই রাতেই শুভ’র শাশুড়ি দিকব্দিক ছোটাছুটি এবং ঘরে থাকা একটি ব্যাংক ভেঙে ৪৫ হাজার টাকা যায়-জোগার করে। একই সময়ে শুভ’র বিকাশ থেকে আরো ১২ হাজার টাকাসহ মোট ৫৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। বাকি ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা পরদিন সকালে র্নিধারিত স্থানে পৌছে দেয়ার চুক্তিতে শুভর মোবাইল সীম ও ম্যানি ব্যাগ জব্দ করে রাত ১টার দিকে শুভকে ছেড়ে দেয়া হয়। শুভ‘র অভিযোগ-শুভ‘র ব্যবহৃত ফোন নিয়ে শুভকে আটকের নাটক সাজিয়ে কৌশলে তার শ্বাশুড়ির কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

ঘটনার দুইদিন পরে ৭ অক্টোবর বাকি টাকা না দেয়ায় শুভ‘র শ্বাশুড়ীকে সড়কে অবরুদ্ধ করে প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও হুমকী দেয়ার ঘটনায় চরম আতংকে রয়েছে ভুক্তভোগীরা।

শুভ‘র শ্বাশুরীর অভিযোগ, গত ৫ অক্টোবর আনুমানিক সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশ ইব্রাহীম ফোন করে জানায়, তার জামাতা শুভকে জিনিসসহ আটক করছি। দ্রুত পাঁচ লাখ টাকা নিয়া আসেন। ‘টাকা না দিলে শুভকে চালান দিমু।’ অনেক অনুনয়ের পরে দুই লাখ টাকায় শুভকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়। পরে ওই রাতে ঘরে সংরক্ষিত একটি ব্যাংক এবং ধারদেনা করে ৪৫ হাজার টাকা জোগার করে এসআই রফিক গংদের হাতে দিলে দুই লাখের বাকি টাকা পরদিন দেয়ার চুক্তিতে শুভকে ছেড়ে দেয়।

ছেড়ে দেয়ার একদিন পর শুভ‘র শ্বাশুরী লাইজুর কর্মস্থল শহরের পিটিআই রোড এ্যাপোলো হসপিটালে বাকি টাকা আদায়ে যায় ডিবি পুলিশ সদস্যরা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা না দেয়ায় ৭ অক্টোবর সকালে শুভ‘র শ্বাশুরী লাইজু আক্তার কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল সড়কস্থ এলাকায় মটরসাইকেল নিয়ে ধাওয়া করে তার গতিরোধ করে ইব্রাহীম। এসময় টাকা না দেয়ার অপরাধে প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে ডিবি পুলিশ সদস্য ইব্রাহীম। শুধু গালমন্দ নয়-যে কোন উপায়ে মাদক মামলায় ফাসিয়ে জেলে পাঠানো এবং শহর ছাড়া করার হুমকি দেয়া হয় লাইজুকে।

ওই দিন রাতেই পৌনে ১১টার দিকে-০১৭১৭৪০৭৮৪৭ নম্বর থেকে সাংবাদিক পরিচয়ে শুভকে ফোন করে বাকি টাকা পরিশোধ ডিবি পুলিশের সাথে সমন্বয় করার পরামর্শ দেয়। ওই দালাল চক্রটির ৮ মিনিট ২৬ মিনিট কথোপকথনে শুভকে হুমকী-ধামকী দেয়ার একটি অডিও রের্কড প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

এছাড়াও টাকা হাতিয়ে নেয়া, হুমকী দেয়ার একাধিক ফোনালাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই তিন যুবকের মধ্য একজনের নাম জলিলুর রহমান সোহেল। এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ডিবি পুলিশ সদস্য ইব্রাহীম বলেন-ওই ভাবেই কোন কিছু‘ই হয়নি। ওরা বানোয়াট করছে।

অভিযুক্ত ডিবি এসআই রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি এ ধরনের না। মূলত একটি ফেন্সিডিলের চালান ধরা হয়। চালানের টাকা লেনদেনের বিষয়টি শুভ জানে তাই তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তবে পরে শুনেছি ইব্রাহিম নাকি শুভ’র শাশুড়ীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে শুভ অভিযোগ করেছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহোদয় তদন্ত করছেন।

এব্যাপারে তদন্তকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি চিঠি পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


শর্টলিংকঃ