আতঙ্কে অভিনয়শিল্পীরা


ইউএনভি ডেস্ক:

করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়েছিল নাটক ও সিনেমার শুটিং। তবে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সর্বসম্মতভাবে শুটিং শুরুর অনুমতি দেয়া হলে নাটকের শুটিং শুরু হয় আগে। দেরিতে হলেও এখন সিনেমার শুটিংও শুরু হয়েছে। কিন্তু শুটিং করার সময় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার বিষয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে।


এটি কার্যকর হচ্ছে কি-না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটিও কাজ করছে। শুটিং শুরু হওয়ার পর কিছুদিন স্বাভাবিকভাবে কাজ করেছেন সবাই। কিন্তু গত ঈদের আগে থেকেই শুটিং ইউনিটে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছিল।

গত কোরবানির ঈদের আগে একটি বিশেষ নাটকে অভিনয় করছিলেন অপূর্ব ও মেহজাবিন। সেই ইউনিটের মেকাপম্যানসহ দুইজনের করোনা পজেটিভ হওয়ার পর কোয়ারেন্টিনে চলে গিয়েছিলেন অপূর্ব ও মেহজাবিন। তবে সেই যাত্রায় তারা রক্ষা পান। কোনো কোনো নাটকের অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে ইউনিটের সবার করোনা টেস্ট করে শুটিং করার কথাও শোনা গেছে।

সম্প্রতি শুটিং ইউনিটে করোনা আতঙ্ক আবারও ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। গত সপ্তাহে ‘মানি মেশিন’ নামের একটি ওয়েব ফিল্মের শুটিং হয়েছে রাজধানীর উত্তরায়। মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের পরিচালনায় সেটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে তাহসান ও তানজিন তিশা অভিনয় করেছেন। সেই ওয়েবফিল্মের শুটিং শেষে করোনায়

অক্রান্ত হন তানজিন তিশা। তার কয়েকদিন পর করোনা পজেটিভ হন তাহসান। সর্বশেষ নির্মাতা রাজও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, একই ইউনিটে কাজ করার কারণে তাদের মধ্যে করোনা ছড়িয়েছে। একসঙ্গে এ তিনজনের করোনায় অক্রান্ত হওয়ার খবরে বিনোদন জগতে এবং শুটিং ইউনিটগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে কেউ কেউ মনোবল না হারিয়ে ইতিবাচক চিন্তাও করছেন। সেই ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী মনিরা মিঠু। তিনি বলেন, ‘আমিও ওদের সঙ্গে অভিনয় করেছি। কিন্তু ১৩ দিন অতিক্রম হওয়ার পরও আমি সুস্থ আছি। করোনায় কেউ আক্রান্ত হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। শুধু সচেতন থাকলেই করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।’

এদিকে কক্সবাজার থেকে শাহীন সুমন পরিচালিত ‘মাফিয়া’ নামের একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে ঢাকায় ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন। যদিও তার করোনা টেস্টে ফলাফল নেগেটিভ এসেছে, তারপরও তার মধ্যে করোনার উপসর্গ রয়েই গেছে। একই কাজ থেকে ফিরে অভিনেত্রী মৌ খান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

ঠিক এ অবস্থায় কেউ কেউ শুটিং থেকে বিরতি নেয়ার চিন্তাও করছেন। বর্তমান সময়ের কাজ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম বলেন, ‘আমি তো করোনাভাইরাস দেশে আসার পর থেকেই বলা যায় শুটিং বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু বিশেষ অনুরোধে অল্প কিছু কাজ করেছি। পরিবার ও আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীরা সাবধানে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের কথা মাথায় রেখেই আমিও কম কাজ করছি। শুটিং গেলে এক ধরনের আতঙ্ক তো থাকেই। তাই সাবধানেই কাজ করছি।’

অভিনেতা অপূর্ব নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন এখন। তিনি বলেন, ‘কিছুটা ভয় তো থাকেই। তারপরও প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই অভিনয় করে যাচ্ছি। অভিনয় যেহেতু পেশা, তাই কতদিনই আর বসে থাকব। করোনার মধ্যেও প্রচুর কাজের চাপ যাচ্ছে আমার। যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছি সতর্ক হয়ে অভিনয় করতে। সবাইকে সাবধানে কাজ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

’ শুটিংয়ের বর্তমান পরিবেশ নিয়ে সাফা কবির বলেন, ‘বাইরে বের হলেই নিজেকে অনিরাপদ মনে করি। আর শুটিং সেটে যতই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করুক না কেন, অনেক দিকই অনিরাপদ থেকে যায়। তাই আমার নিরাপত্তার বিষয়টি আমি সাজিয়ে নিয়েই কাজ করছি। করোনা পরিস্থিতি যথেষ্ট খারাপ অবস্থায় আছে।’

এদিকে করোনার মধ্যেই সিনেমার শুটিং করেছেন সিয়াম। সেটি শেষ করে কয়েকটি বিজ্ঞাপনের কাজও করতে দেখা গেছে এ অভিনেতাকে। তিনি করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকার বিষয়ে বলেন, ‘সম্প্রতি অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন নামের একটি ছবির শুটিং শেষ করেছি। এ ছবির প্রত্যেকটি মানুষকেই আমার কাছে সচেতন মনে হয়েছে। প্রত্যেকেই সর্বোচ্চ সচেতন হয়ে কাজ করেছেন। তারপরও আমার নিরাপত্তা নিয়ে আমি সচেতন ছিলাম। প্রত্যেকটি শুটিং সেটেই যদি এভাবে সচেতন হয়ে কাজ করে তাহলে সবাই নিরাপদেই থাকবেন বলে মনে করি আমি।’


শর্টলিংকঃ