‘আদর্শের কসম’ টিকল না সভাপতি- সেক্রেটারির


বিতর্ক যেন আর পিছুই ছাড়ছে না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে চাঁদা দাবির গুরুতর অভিযোগের পর এবার দলের ‘আদর্শের কসম’ খেয়েও তা রক্ষা না করার অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি তারা পূর্ণ করেননি। উল্টো পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের নিম্ন পদে পদায়ন করে অপমান করেছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

অনেক যাছাই-বাছাইয়ের পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাদ্দাম হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়।

ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ইউনিট। নতুন নেতৃত্ব আসার পর হলগুলোতে তৈরি হয় চার নেতা কেন্দ্রিক বলয়। যার কারণে পূর্ববর্তী নেতাদের অনুসারী হল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা কার্যত শক্তিহীন হয়ে পড়েন। কিন্তু এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৩১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগের শীর্ষ চার নেতা নির্বাচনের কৌশল ঠিক করতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) অডিটরিয়ামে সভা ডাকেন। বেশি রাত হওয়ায় ছাত্রী হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

যেখানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী হল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের হল সংসদের প্যানেলে না রাখার জন্য নিজেদের ভুল স্বীকার করেন। পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যোগ্যতা অনুযায়ী সবাইকে মূল্যায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন।

ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, বুয়েট অডিটরিয়ামে বঙ্গবন্ধুর নামে শপথ করে রাব্বানী বলেছিলেন- নির্বাচনের পরে ১৫ দিনের মধ্যে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। কিন্তু কমিটি গঠন করা হলো ১৩ মে। হল সংসদের প্যানেলে না রাখায় তারা অনুতপ্ত হন। আবার মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে বলেন।

‘পাশপাশি পরোক্ষভাবে হুমকি দিয়ে বলা হয়, প্যানেল হারলে সব দায়ভার হল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের। আমরা তো আদর্শ, দেশরত্ন শেখ হাসিনার কথার প্রতি অবিচল। সবাই কাজও করেছে। কিন্তু কমিটি ঘোষণার সময় অনেক পরিশ্রমীকে কমিটিতে রাখা হলো না, অনেককে উপ-সম্পাদক দেওয়া হলো যারা আমার সমবয়সী। এভাবে লজ্জ্বা দেওয়া হলো। তাহলে জাতির পিতার নামে শপথ করে এই ওয়াদা কেন দিলেন?’

অপরদিকে ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটিতে দেখা গেছে, ১৮ টি হলের ৩৬ জন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ১৫ জনকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আবার যাদের রাখা হয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় পাঁচ জনকে উপ-সম্পাদক করা হয়েছে। বাদ পড়াদের মধ্যে রয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন রহমান, অমর একুশে হল শাখার সাধারণ সম্পাদক এহসান উল্লাহ, শহীদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি সাকিব হাসান, সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন রিফাত, জগন্নাথ হল শাখার সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাস, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, সূর্য সেন হল শাখার সভাপতি মো. গোলাম সরোয়ার, বিজয় একাত্তর হল শাখার সভাপতি ফকির রাসেল, সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদার, ফজলুল হক মুসলিম হল শাখার সভাপতি শাহরিয়ার সিদ্দীকি শিশিম, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, কবি জসীম উদ্‌দীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান, রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী ইসলাম, বেগম সুফিয়া কামাল হল শাখার সভাপতি ইফফাত জাহান ঈশা, সাধারণ সম্পাদক সারজিয়া শারমিন শম্পা।

বাদ পড়াদের অনেকে অপমানে রাজনীতি ছেড়েছেন, আবার অনেকে পদবঞ্চিতদের ব্যানারে আন্দোলন করে সক্রিয় থেকেছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ না পাওয়া কবি জসীম উদ্‌দীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, সেদিনের সভায় সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক সবাইকে সাক্ষী রেখে দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন- হলের সভাপতি-সাধরণ সম্পাদককে প্যানেলে (হল সংসদ) যে মনোনয়ন দেয় নাই তা চরম ভুল ছিল।

‘তারা বলেন, জাতির পিতার নামে শপথ করে বলছি- পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রত্যেককে পদ দেওয়া হবে। প্রত্যেককে বলা মানে হলো- একজনকেও বাদ দেওয়া হবে না।’

অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখার সভাপতি থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপ-ছাত্রবৃত্তি সম্পাদকের পদ পেয়েছেন ইউসূফ উল্লাহ খান। জানতে চাইলে  তিনি বলেন, সেদিনের বৈঠক ছিল ইলেকশন পার পাওয়ার টেকনিক মাত্র। দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের আদর্শ ধারণ করে কাজ করলেও আক্ষেপ হতাশা নিয়ে বিদায় নিতে হচ্ছে প্রিয় সংগঠন থেকে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বক্তব্যের জন্য তাদের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা তা ধরেননি।


শর্টলিংকঃ