আদালত চত্ত্বরে আঙুল উঁচিয়ে পুলিশবেষ্টিত জঙ্গিদের শ্লোগান!


বিশেষ প্রতিবেদক :

আদালতে রায় ঘোষণার পর এজলাশ কক্ষ থেকে বের হয়েই হাতের আঙুল উঁচিয়ে শ্লোগান দেয় রাজীব গান্ধীসহ দুই জঙ্গি। এসময় তারা পুলিশবেষ্টিত ছিল। এরপরও তারা একইসঙ্গে হাত তুলে বলে-‘আমাদের বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ/ দাওয়াতুল ইসলাম… বাকেয়া’। তারা পুলিশের প্রিজন ভ্যানে ওঠার সময়ও চিৎকার করে  বার বার বলতে থাকে- ‘হে মুজাহিদেরা তোমরা বসে থেকো না’। তবে পুলিশের শিথিলতার কারণেই জঙ্গিরা আদালত চত্ত্বরেও বার বার এরকম ঔদ্ধত্য  দেখাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা

পুলিশের মধ্যেই এভাবেই আঙুল উঁচিয়ে শ্লোগান দেয় জঙ্গি রাজীব গান্ধী

রোববার পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারী হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগে রাজশাহী বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চত্ত্বর ঘিরে রাখে পুলিশ। বেলা ১১টার আগেই একটি প্রিজন ভ্যানে করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সামনে আনা হয় পুরোহিত হত্যা মামলার অন্যতম আসামী জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী,  রমজান আলী, আলমগীর, হারেজ আলী ও খলিলুর রহমানকে। প্রিজন ভ্যান থেকে নেমেই ডান হাতের তর্জনী আঙুল উঁচিয়ে সদর্পে শ্লোগান দেয় জঙ্গি রাজীব।

প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়েই সরাসরি নেয়া এজলাশে। সেখানে তাদের পাঁচজনকেই আসামীর কাঠগড়ায় তোলা হয়। আসামীদের স্যান্ডেল খুলে রেখে কাঠগড়ায়  ওঠতে বলে পুলিশ।  কিন্ত জঙ্গি রাজীব গান্ধী কাঠগড়ায় ওঠার সময় নিজের পায়ের স্যান্ডেল খুলতে আপত্তি জানায়। পরে তাকে স্যান্ডেল খুলতে বাধ্য করে পুলিশ।

বেলা ১১টার পর পরই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার  রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শীর্ষ জঙ্গি নেতা জাহাঙ্গীর ওরফে রাজিব গান্ধীসহ চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার পর আদালত চত্ত্বরে পুলিশের সামনেই আঙুল উঁচিয়ে ঔদ্ধত্যস্বরে জিহাদের কথা বলে রাজীব গান্ধী ও তার এক সহযোগী।

এদিকে, আদালত চত্বরে রায় ঘোষণার আগে ও পরে হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড রাজিব গান্ধী ও তার এক সহযোগী বার বার হাত উঁচিয়ে নিজেদের মতবাদের কথা জানান দেয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন  সুশাসন বিষয়ক পর্যবেক্ষক সুব্রত কুমার পাল। তিনি বলছেন, এরআগেও  ঢাকায় আদালতে রায় ঘোষণার পর আইএসের টুপি পরে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল জঙ্গিরা। অথচ পুলিশের কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেও একই ধরনের ঘটনা ঘটলো রাজশাহীর আদালত প্রাঙ্গণে। পুলিশের শিথিলতার কারণেই জঙ্গিরা এমন দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশকে আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।

রায়ের পর পুলিশবেষ্টিত জঙ্গি রাজীব গান্ধীসহ দুই জঙ্গির আস্ফালন

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও এডিসি গোলাম রুহুল কুদ্দুস ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে জানান, জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী হলি আর্টিজান হামলার মাস্টারমাইন্ড। সারাদেশে যত জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছেতার অধিকাংশতেই জড়িত রাজীব। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র অন্যতম শীর্ষ নেতা। এজন্য রায় ঘোষণার আগেই আদালত চত্ত্বরজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এখানে পুলিশের  কোনো শিথিলতা ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে পুরোহিত ঘটনার চার বছর পর রাজশাহী বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণা হলো। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা আসামীরা হলো-জাহাঙ্গীর ওরফে রাজিব গান্ধী, রাজিবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাঁধন, আলমগীর হোসেন ও রমজান আলী। জেএমবির রংপুর অঞ্চলের প্রধান ছিলেন রাজিব গান্ধী। আইএসের সাথে তার সরাসরি যোগাযোগও ছিল। রাজিবের পরিকল্পনাতেই পুরোহিত যজ্ঞেশ্বরকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু। তিনি বলেন, রাজীব গান্ধী ভয়ংকর জঙ্গি। সে সিরিয়া গিয়ে যুদ্ধ করে এসেছে। তার পরিকল্পনা অনুয়ায়ীই যজ্ঞেশ্বরকে হত্যা করা হয়।

নিহত পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারী

২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মোটরসাইকেলে চড়ে এসে তিনব্যক্তি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানার সোনাপোতা গ্রামে পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর দাসাধিকারীকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে হত্যাকারীরা গোলাপ রামকান্ত নামে এক পূজারিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। পরে হামলাকারীরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।

উল্লেখ্য, পুরোহিত হত্যার এ ঘটনায় নিহতের ভাই একটি হত্যা মামলা করেন। পরে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে আরো দুটি মামলা করে পুলিশ। তবে হত্যা মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন খলিলুর রহমানসহ তিন আাসামী ।


শর্টলিংকঃ