‘আমাদের চার-পাঁচজনকে ঈদের নামাজও পড়তে দেয়নি এলাকাবাসী’


ইউএনভি ডেস্ক:
মহামারি করোনাভাইরাসের আতঙ্কে যখন আপনজনও কাছে ভিরছে না তখন করোনাসহ সব ধরনের রোগী নিয়ে এ হাসপাতাল থেকে ও হাসপাতালে ছুটছেন মাগুরার অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। পেশাগত দায়িত্ব শুধু নয় বরং রোগীকে যথাসময়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়াটাই তাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকতে নানা সমস্যার সম্মখীন হচ্ছেন তারা।

‘আমাদের চার-পাঁচজনকে ঈদের নামাজও পড়তে দেয়নি এলাকাবাসী’

এদেরই একজন জিহারুল ইসলাম(৪০)। বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার শত্রুজিতপুর ইউনিয়নের খাঁনপুর গ্রামে। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। পেশায় অ্যাম্বুলেন্স চালক। ১৮ বছর ধরে তিনি এ পেশায় নিয়োজিত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ পেশায় থেকে কুড়িয়েছেন মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা। বর্তমানে তিনি এ দুর্যোগকালীন সময়েও নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু পেশার কারণে বিভিন্ন সময় তাকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে নানান সমস্যা।

জিহারুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ কাজ করছেন সুনামের সঙ্গে। তবে এ বছর করোনার কারণে ঝুঁকি নিয়েই তাকে কাজ করতে হচ্ছে। এিেত তিনি শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষের কটূক্তির।তিনি বলেন, রোগী বহন করি বলে আমাদের ৪-৫ জন অ্যাম্বুলেন্স চালককে এবার ঈদের নামাজও পড়তে দেয়নি এলাকার মুরুব্বিরা। অ্যাম্বুলেন্সে যে কোনো রোগী বহন করলেই মানুষ তাদেরকে একটু আলাদা নজরে দেখচ্ছেন বলে জানান।

মাগুরার অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডের আরেক চালক ফারুক বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিনই ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পরিবারের সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে কাজে আসতে হয়। আবার কাজে এসেও সমাজের মানুষের কটূক্তি শুনতে হয়। এরপরেও তিনি মানুষের সেবায় কাজ করে চলেছেন।তিনি বলেন, সমাজের মানুষজন যে তাদের কটূক্তি করেন তারা একটু চিন্তা করে দেখেন না যে চালকরা তাদেরই আত্মীয়-স্বজনকে সেবা দিচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হয় মাগুরা জেলা অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক হোসেনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্স চালকরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগী বহন করে যাচ্ছেন। কিন্তু কেউ তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তাও করেন না। চালকরা ফোন পেলেই ছুটে যান রোগীদের কাছে। কে করোনা আক্রান্ত আর কে করোনা আক্রান্ত নয় সেটা জানতেও চান না রোগীদের কাছে। অর্থের চেয়ে সেবাই মূল লক্ষ্য তাদের কাছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশের এ পরিস্থিতিতে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চালকদের কিছু মাস্ক, সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতাও পাননি তারা।

এসব বিষয়ে মাগুরার সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের ভূমিকা অপরিসীম। তবে মাগুরা অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডে যে ২৫/৩০টি অ্যাম্বুলেন্স আছে তাদের কেউ এখন পর্যন্ত করোনা রোগী বা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত কোনো ব্যক্তির মরদেহ বহন করেননি। এমনটা প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ সরবরাহ করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের প্রতি ভালো ব্যবহার করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।


শর্টলিংকঃ