Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

আম নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষীরা : হারাতে পারে বিশ্ববাজারও


এমএ আমিন রিংকু, বাঘা থেকে ফিরে :

করোনার কারণে এবার কপাল পুড়তে পারে রাজশাহীর আমচাষীদের।  মাত্র মাসখানেকের মধ্যেই আম পাকতে শুরু হবে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে লকডাউন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আম বাজারজাত করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই উদ্বিগ্ন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে এবার ইউরোপেও আমের বাজার হারাবে বাংলাদেশ।  

আম পাকার সময় যত ঘনিয়ে আসছে,  ততই যেন দীর্ঘ হচ্ছে সাধারণ ছুটি। করোনা সতর্কতায় সবকিছুই প্রায় অচল। কিন্তু এখনো হাল ছাড়েন নি চাষীরা। সমানতালে পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। তাড়া আছে বাজার ধরার। কিন্তু করোনার কারণে এবার বাজার বসবে কি না তা নিয়েও সংশয়ে আছেন তারা।

রাজশাহী জেলায় সবচেয়ে বেশি আমের বাগান বাঘা উপজেলায়। পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আমচাষী মো. মনির সরকার তার আম বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত। তিনি জানান, মুকুল যা হয়েছে তাতে আল্লাহ আম ভালই দিয়েছে। বতর্মানে দেশের যে পরিবেশ তাতে আম মানুষ খাবে নাকি গাছেই থাকবে-এনিয়ে তো টেনশনে আছি। এই উপজেলার গৌরাঙ্গপুর গ্রামের জুয়েল রানা বলেন, এ উপজেলায় ধানের জমির চেয়েও বেশি আমেরবাগান। অঅমের দিকে কৃষকদের চাহিদা বশি। কারণ ধানের চেয়ে আমের দাম বেশি থাকে। কিন্তু এবার তো পরিস্থিতি সেরকম নেই। তাই দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।

একই এলাকার আবু বকর সিদ্দিক জানান, করোনায় কৃষকদের আমের স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসেছে। তাই সরকার যদি আম বাজারজাত করতে এখনই উদ্যোগ না নেয় তাহলে বাঁচার আর পথ  থাকবে না। চরম লোকসান হবে।

এদিকে, কেবল চাষীরাই নয়, করোনায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও।সারাবছরের আয়-রোজগারের জন্য আমের ওপরই ভরসা করেন বহু ব্যবসায়ী। ঋণ নিয়ে বাগান কিনে রাখেন আগেভাগেই। কিন্তু এবার করোনার কারণে উদ্বেগে তারা। বাঘার দেবত্তোরবিনোদপুর এলাকার  আম ব্যবসায়ী আফসার আলী বলছিলেন, আমরা ঋণ নিয়ে আগাম বাগান কিনে রাখি। কিন্তু এরপর বাগান পরিচর্যায় বিপুল টাকা খরচ করতে হয়।কিন্তু এবার যদি আম বিক্রি না হয়, তাহলে তো সব টাকায় আমাদের লোকসান হয়ে যাবে।

গেল কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের আম যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু করোনার কারণে বিশ্ববাজারও স্থবির। আকাশ পথে আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্য আনা-নেয়ায়ও বন্ধ। এনিয়ে হতাশায় আছেন রপ্তানিকারকরা। তারা জানান, দেশের মধ্যে ইউরোপের বাজারে সবচে’ বেশি আম পাঠানো হয় রাজশাহী থেকে।  কিন্তু করোনায় বিশ্ববাজার ধরা যাবে কি না তা নিয়েও কাটছে না সংশয়।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, আমের বাজার নিয়ে আমরাও এবার দুশ্চিন্তায় আছি। রাজশাহী থেকেই মোটামোটি সারাদেশেই আম যায়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি এবার কী হবে তা ভাবনার বিষয়। তবে পুঠিয়ার বানেশ্বরে আমের মোকামে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে আমের বাজার বসানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের  মো. শামসুল হক জানান,  গেল বছর রাজশাহী থেকে প্রায় ৩৭টন আম পাঠানো হয়েছিল ইউরোপের বাজারে। এবার টার্গেট ধরা হয়েছে ৫০টন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আম পাঠানো হবে। আর দেশের মধ্যে আমবাজারজাত করতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, রাজশাহী জেলায় এবার ১৭হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।


Exit mobile version