আ’লীগের অভিমানী দলছুটরা ছোট দলের বড় নেতা


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে কিংবা তার আদর্শের অনুসারী হয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ। যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাদের কেউ ‘অভিমানে’ দল ছেড়েছেন।

কেউবা হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় পদ। এরপর গঠন করেছেন নিজের আলাদা দল। কেউ আবার যোগ দিয়েছেন অন্য কোনো দলে। তবে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাজনীতির মাঠে আলাদা করে তেমন কোনো বিকল্প দাঁড় করাতে পারেননি। বরং তারা এখনও ‘ছোট’ দলের ‘বড়’ নেতা হয়েই আছেন।

‘অভিমানী’ দলছুট নেতারা বঙ্গবন্ধুকেই এখনও আদর্শ মানেন। তবে সময়ের ফেরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তারাই ‘সবচেয়ে বেশি আওয়ামীবিরোধী’। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে তারাই গড়ে তোলেন নির্বাচনী জোট- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনের পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো কর্মকাণ্ড নেই, এ জোট যেন ‘কাগজে-কলমে’ই আছে!

ড. কামাল হোসেন : বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছিলেন ড. কামাল হোসেন। ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী। হয়েছিলেন দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য। পরবর্তীতে অভিমানে আওয়ামী লীগ থেকে চলে গেছেন অনেক দূরে। গড়ে তুলেছেন নিজের রাজনৈতিক দল- গণফোরাম।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্যসহ বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে গঠন করেন সরকারবিরোধী নির্বাচনী জোট- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই জোটের শীর্ষনেতা হিসেবে নির্বাচনে নেতৃত্ব দেন। ড. কামাল হোসেন এখন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় বিরোধী প্ল্যাটফর্মের প্রধান নেতা।

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন ড. কামাল। ১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্বের সঙ্গে তার বিরোধ বাঁধে। ১৯৯২ সালের ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে বাদ পড়েন ড. কামাল। তাকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। এরই জের ধরে তিনি গঠন করেন ‘অরাজনৈতিক সংগঠন’ গণতান্ত্রিক ফোরাম।

১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট গণতান্ত্রিক ফোরাম থেকে ‘তান্ত্রিক’ শব্দাংশ ফেলে দিয়ে গণফোরাম নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং এদিন সকালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়ে দেন তার পদত্যাগের চিঠি।

আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধুকেই এখনও আদর্শ হিসেবে রেখেছেন ড. কামাল হোসেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ২৪ আগস্ট আলোচনা সভার আয়োজন করে গণফোরাম।

সভায় ড. কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু কারও একক পিতা নন, তিনি জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু কোনো একক দলের নয়, তিনি সবার। এ দেশে এখন বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে তার আদর্শের উল্টো কাজ হচ্ছে। তিনি যে আদর্শ আমাদের মধ্যে রেখে গেছেন তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

শেখ শহীদুল ইসলাম : ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ শহীদুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি, জাতীয় ছাত্রলীগের প্রধান, জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার বিএলএফ’র মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন।

মাদারীপুর-৩ আসন হতে তিনি ২ বার জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সাল হতে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শিক্ষা ও বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ে, গণপূর্ত ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব। জেপি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক।

শেখ শহীদুল ইসলাম শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে আদর্শের রাজনীতি যেমন আছে তেমনি আবার ভোটের রাজনীতিও আছে। স্বাভাবিকভাবে আদর্শের রাজনীতির যে প্রক্রিয়া সেটা বাংলাদেশে অনেকটাই অনুপস্থিত। এটা শুধু যে আওয়ামী লীগের জন্য তা নয় সবার জন্যই।

সেজন্য আওয়ামী লীগও ভোটের রাজনীতির দিকে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। ভোটের রাজনীতির কারণে কখনও কখনও তারা এমন কারও সঙ্গে সমঝোতা করছে, যা তাদের আদর্শের সঙ্গে যায় না। যেমন হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমঝোতা। এটা তাদের আদর্শের সঙ্গে যায় না। কিন্তু ভোটের রাজনীতির জন্য করতে হয়েছে।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী : বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন তিনি। পরে দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান শেষে ১৯৯০ সালে দেশে ফিরে আবারও সক্রিয় হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টাঙ্গাইলের বাসাইল-সখীপুর আসন থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন কাদের সিদ্দিকী। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। তখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি।

পরবর্তীতে মতবিরোধের কারণে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় কাদের সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। নির্বাচন কমিশনে তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করার আবেদন করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশন আসনটি শূন্য ঘোষণা করে।

১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ ছেড়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেন কাদের সিদ্দিকী। উপনির্বাচনে কাদের সিদ্দিকী গামছা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এরপর থেকে তিনি নিজের গড়া দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয় কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। নির্বাচনের পরে আবার জোট থেকে বেরিয়ে যায়।

জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও ড. কামালের সঙ্গে এখনও ‘ভালোবাসার’ সম্পর্ক আগের মতোই আছে বলে মনে করেন কাদের সিদ্দিকী। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ২৬ আগস্ট আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেছি।

কিন্তু ড. কামাল হোসেনের ভালোবাসা থেকে প্রত্যাহার করিনি। আজকের এ আলোচনাই জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আলাদা হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভেবেছিলাম ঐক্যফ্রন্টে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু নির্বাচনের আগে দেখলাম বিএনপির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে সরিয়ে তারেক রহমানকে ক্ষমতায় আনতে আমি কোনোদিন রাজনীতি করিনি। খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই একজন নেতা। কিন্তু তারেক রহমান নয়।

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ যোগ দেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে। পরে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর কাছে পরাজিত হন। নির্বাচনের পরেও গণফোরামের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন আবু সাইয়িদ। যোগ দিচ্ছেন নানান অনুষ্ঠানে।

১৯৯৬ সাল থেকে পাঁচ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন আবু সাইয়িদ। ওয়ান-ইলেভেনের পর দলে সংস্কারপন্থী হিসেবে আখ্যা পাওয়া এই নেতা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে আবু সাইয়িদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। কিন্তু সেবারও নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকুর কাছে হেরে যান। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হয়েছিলেন অধ্যাপক সাইয়িদ।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন দুর্নীতি উচ্ছেদ, ক্ষেতে খামারে উৎপাদন বৃদ্ধি আর জন্ম নিয়ন্ত্রণের। এক নম্বরে ছিল দুর্নীতি উচ্ছেদ। বঙ্গবন্ধুর আমলে প্রায় ৩৩ জন এমপিকে দুর্নীতি ও অসদাচরণের কারণে দল ও এমপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু আজকে দেশে দুর্নীতির মহাউৎসব চলছে। সেই ক্ষেত্রে যদি সুষ্ঠুভাবে অনুসন্ধান করা যায়, দেখা যাবে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিই দুর্নীতিতে আক্রান্ত। রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। দেশে আইনের শাসন নেই। বরং এখন শাসন করার জন্য আইন তৈরি করা হচ্ছে। ধনী-গরিবের বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে। এগুলো তো বঙ্গবন্ধু চাননি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন গণতন্ত্র। কিন্তু আজ কোথায় গণতন্ত্র? বর্তমান আওয়ামী লীগের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের যোজন যোজন পার্থক্য।

সুলতান মনসুর : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। ১৯৭৫-এর পট পরিবর্তনের কঠিন সময়ের পর আওয়ামী লীগের সর্বপ্রথম যে জয় আসে তা ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদের হাত ধরে।

১৯৮৯ সালে ডাকসুর ভিপি পদে তার বিজয় ছিল ’৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনো জয়। সেই জয়ের মাধ্যমে তার নেতৃত্বে ’৭৫-এর পর প্রথম বঙ্গবন্ধুর ছবি স্থান পায় ডাকসু ভবনে।

এর ঠিক ৩০ বছর পরে সুলতান মনসুর এমপি নির্বাচিত হলেন বঙ্গবন্ধুর দলের প্রতীক নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে। আওয়ামী লীগের এক সময়ের এই সাংগঠনিক সম্পাদক লড়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে। তবে নির্বাচিত হয়েই ছুটে গিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে।

সুলতান মনসুর শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির জনক। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা। তাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা এটা সর্বসম্মত। জাতির পিতা হিসেবে তিনি মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন। কাজেই তার আদর্শ থেকে দূরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

মাহমুদুর রহমান মান্না : নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন তিনি।

এর আগে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এই আসন থেকে পরপর দুবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। সেসময় ভোটে হারলেও কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে আসেন মান্না।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির সময়ও দলের ওই পদেই ছিলেন তিনি। তাকে ওয়ান-ইলেভেনের ‘কুশীলব’ বলে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতারা। ‘বিতর্কিত ভূমিকা পালনের’ অভিযোগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। পরে গড়ে তোলেন নাগরিক ঐক্য।

মান্না ১৯৭২ সালে চাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৭৬ সালে জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৯ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন তিনি।

ডাকসু থেকে তার নামও মুছে ফেলে ছাত্রলীগের নেতারা। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জেলেও যেতে হয় তাকে। জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন মাহমুদুর রহমান মান্না। বর্তমানে তিনি ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সারির নেতা হিসেবে সক্রিয় আছেন।

জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না শনিবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আগে গণতন্ত্রের জন্য যে লড়াই করেছিলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ আর সেই পথে নেই। তারা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করেছে।

আপনিও তো এক সময় আওয়ামী লীগ করতেন- আওয়ামী লীগ করায় কিংবা আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসায় কোনো অনুশোচনা বা দুঃখ আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ করতাম এজন্য আমার কোনো অনুশোচনা নেই। আমি ভালো মনে করেই আওয়ামী লীগ করতাম। ছেড়ে এসেছি, তাতেও আমার কোনো অনুশোচনা নেই। আমি মনে করি- যে দল যেনতেন প্রকারে, ছলেবলে কৌশলে ক্ষমতায় থাকতে চায়, তার সঙ্গে আমি থাকব না।

কারণ এটা গণতন্ত্র নয়। তবে দুঃখ একটা হয়। সেটা হচ্ছে- আওয়ামী লীগ তো এদেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেয়া দল। বঙ্গবন্ধু এদেশের রাজনীতিতে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। সেই দল এখন এই দেশকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেটা দেখে কষ্ট লাগে।

এছাড়া আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাও এখন আওয়ামী লীগের বিরোধী শিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন নুরে আলম সিদ্দিকী। বর্তমানে তিনি প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক।

১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী। তিনি পরবর্তী সময় জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। বেশ কয়েকবার এমপিও হন জাতীয় পার্টির টিকিটে।

পরে জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ছাত্রলীগের এক সময়ের সভাপতি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এখন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের এক সময়ের সভাপতি শাহ্ মো. আবু জাফর এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।

আওয়ামী যুবলীগের এক সময়ের চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু পরবর্তীতে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। কৃতজ্ঞতা-যুগান্তর


শর্টলিংকঃ