- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

আশুরায় মর্সিয়া-ক্রন্দন কি ইসলামসম্মত?


আহলে বাইত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব সাহাবীকে ভালোবাসা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদার অন্যতম অংশ।হযরত হাসান ও হুসাইন (রা.) যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানিত কন্যা ফাতেমার (রা.) সন্তান এবং তাদের ফযীলতে বেশকিছু সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তাই প্রতিটি মুসলিমের উচিত তাদের মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসা। তাই আমাদেরও হযরত হাসান ও হুসাইনকে (রা.) অন্তর থেকে ভালোবাসি।

রাসূল (সা.)-এর আদরের এ দুই নাতির ফযীলতের ব্যাপারে অসংখ্য সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, (ক) বারা বিন আযিব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি, তিনি হাসান বিন আলীকে কাঁধে নিয়ে বলেছেন, হে আল্লাহ! আমি তাঁকে ভালবাসি। সুতরাং তুমিও তাকে ভালবাসো এবং যে তাকে ভালোবাসে তুমি তাকেও ভালোবাসো। (বুখারী)

(খ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হাসান ও হুসাইন জান্নাতবাসী যুবকদের সরদার হবেন। (তিরমিজী, সিলসিলায়ে আহাদীসে সহীহা, হাদীস নং-৭৯৬)

(গ) আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, হযরত হুসাইনের মাথা উবাইদুল্লাহর কাছে নিয়ে যাওয়া হলে সে তার মাথাকে একটি থালার মধ্যে রেখে একটি কাঠি হাতে নিয়ে তা নাকের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করিয়ে নাড়াচাড়া করছিল এবং তার সৌন্দর্য দেখে সম্ভবত কিছুটা বর্ণনাও করে ফেলেছিলেন।
হাদিসের শেষের দিকে আনাস (রা.) বলেন, হুসাইন (রা.) ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। (বুখারী)

(ঘ) আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, এরা দু’জন (হাসান ও হুসাইন রা.) আমার দুনিয়ার দু’টি ফুল। (বুখারী, হাদীস নং- ৫৯৯৪) তাদের ফযীলতে এমন আরও অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের প্রতি হৃদয়ের ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন।

ইসলাম সম্পর্কে স্বল্পজ্ঞানের অধিকারী একজন মুসলিম এ সব হাদিস পড়ে বা শুনে এবং সেই সঙ্গে কারবালা নিয়ে অনেক লেখকের কাল্পনিক ও মিথ্যা কাহিনী পড়ে আবেগময়ী হয়ে প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে পড়া কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।

তাই বলে রাসূলের (সা.) আদরের নাতি ও ফাতেমার (রা.) পুত্র হওয়ার কারণে অতি আবেগী হয়ে তাদের প্রতি ভালোবাসায় বাড়াবাড়ি করা এবং হযরত মুআবিয়া (রা.) বা অন্য কোনো সাহাবীর প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করা বা গালি দেয়া যাবে না।

মুসলমানদের এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, রাসূলের অন্য সাহাবীদের ফযীলতেও অসংখ্য সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

পবিত্র কোরআনেও তাদের ফযীলতে রয়েছে সুস্পষ্ট ঘোষণা। সুতরাং সব সাহাবীকেই ভালোবাসতে হবে। কারও ব্যাপারে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি করা চলবে না।
হযরত হাসান ও হুসাইন এবং আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসায় কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি না করে তাদের সর্বোচ্চ ভালোবাসতে হবে। কারণ আল্লাহ তায়ালা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে কোনো মুসলিমের মৃত্যুতে বিলাপ-উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা যাবে না। এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং একটি পাপের কাজ।

ইমাম হুসাইন (রা.) শহীদ হওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করে বিলাপ করা, শরীর জখম করা, গাল, মাথা ও বুক থাবড়ানো বা এ রকম অন্য কিছু করা জায়েজ নেই।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি মুসিবতে পড়ে নিজ গালে চপেটাঘাত করল এবং শরীরের কাপড় ছিঁড়ল, সে আমাদের দলের নয়। (বুখারী)

তিনি আরও বলেন, মুসিবতে পড়ে বিলাপকারী, মাথা মুণ্ডনকারী এবং কাপড় ও শরীর কর্তনকারীর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়, তাকে কিয়ামতের দিন খাজলীযুক্ত বা লোহার কাঁটাযুক্ত কোর্তা পড়ানো হবে এবং আলকাতরার প্রলেপ লাগানো পায়জামা পড়ানো হবে। (মুসলিম)

তিনি আরও বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলী যুগের চারটি স্বভাব বিদ্যমান রয়েছে। তারা তা ছাড়তে পারবে না।

(১) বংশমর্যাদা নিয়ে গর্ব করা,

(২) মানুষের বংশের নাম তুলে দুর্ণাম করা,

(৩) তারকারাজির মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা এবং

(৪) মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা।
একজন বিবেকবান মুসলিমের উপর আবশ্যক হচ্ছে সে যে কোনো ধরনের মুসিবতের সময় আল্লাহর নির্দেশিত কথা বলবে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। (সূরা বাকারা: ১৫৬)

হযরত হুসাইন (রা.)-এর মৃত্যুর পর তার পুত্র আলী বিন হুসাইন, মুহাম্মাদ এবং জাফর জীবিত ছিলেন। তাদের কেউ হুসাইন (রা.)-এর মৃত্যুতে মাতম করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তারা ছিলেন আমাদের হেদায়েতের ইমাম ও আদর্শ। বিলাপ করা, গাল ও বুকে চপেটাঘাত করা বা এ জাতীয় অন্য কোনো কাজ কখনই ইবাদত হতে পারে না।

আশুরার দিনে ক্রন্দনের ফযীলতে যে সব বর্ণনা উল্লেখ করা হয় তার কোনোটিই বিশুদ্ধ নয়। নির্ভরযোগ্য কোনো গ্রন্থে এমন কোনো বর্ণনা নেই। বিলাপ করা জাহেলী জামানার আচরণ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের তা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন।

নবীদৌহিত্রের শাহাদাতের মর্মান্তিক ঘটনায় আমরাও শোকাহত। তবে আমরা শোক প্রকাশ করব ইসলামের নির্দেশিত পন্থায়।