- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

আসন্ন বাজেটে তামাকজাত পণ্যের দাম কি আদৌ বাড়ছে?


আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যের ওপর উচ্চহারে কর বৃদ্ধির দাবিতে তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন ও এনজিও কয়েক মাস থেকে নানা কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে তামাকজাতপণ্যের কর কিংবা দাম কি আদৌ বাড়ছে?

বাজেট প্রণয়নের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে উচ্চহারে তামাকের কর বৃদ্ধির সম্ভাবনা যেন ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে। কেননা- অর্থমন্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক বৈঠকে আগামী বাজেটে কোনো পণ্যের দাম একটি টাকাও বাড়ানো হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

কিছুদিন আগে এনবিআর’র সঙ্গে তামাকের বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিগণ বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকেও জনস্বাস্থ্যের বিষয়কে প্রাধান্য না দিয়ে কর্তৃপক্ষ তামাক কোম্পানির পক্ষেই সাফাই গেয়েছে। ফলে আসন্ন বাজেট বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর’র বক্তব্যে তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন ও এনজিওগুলো হতাশা প্রকাশ করছে।

জনগণের স্বার্থেই তো প্রতিবছর বাজেট প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বার বার একটি খাতে জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্যবিরোধী বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। সেটি হলো- বাজেটে মাথাপিছু আয়ের তুলনায় তামাকের কর ও দাম অধিকহারে বাড়ানো হচ্ছে না। এতে করে সরকারও বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আসন্ন বাজেটে যদি তামাকের কর বাড়ানো হয় তাহলে দেশে প্রায় ৩.২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী (১.৩ মিলিয়ন সিগারেট ধূমপায়ী এবং ১.৯ মিলিয়ন বিড়ি ধূমপায়ী) ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে। সিগারেটের ব্যবহার ১৪% থেকে হ্রাস পেয়ে প্রায় ১২.৫% এবং বিড়ির ব্যবহার ৫% থেকে হ্রাস পেয়ে ৩.৪% হবে। দীর্ঘমেয়াদে ১ মিলিয়ন বর্তমান ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। ৬ হাজার ৬৮০ কোটি থেকে ১১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার মধ্যে (জিডিপি’র ০.৪ শতাংশ পর্যন্ত) অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। কিন্তু দেশের জনগণ ও জনগণের সরকারের কল্যাণ কি আমরা আদৌ চাচ্ছি?

গত ৩০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী এনবিআর’র পরামর্শক সভায় বলেছেন- আসন্ন বাজেটে কোনো পণ্যের কর কিংবা দাম একটি টাকাও বাড়ানো হবে না। আমরা তার এমন উদ্যোগকে অবশ্যই সাধুুবাদ জানাই। বাজেট প্রণয়নের সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তর অনেক বিষয় মাথায় রেখেই বাজেট প্রণয়ন করে। জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যেরমূল্য যাতে সহনশীল পর্যায়ে থাকে সেই বিষয়টি দেখা হয়। চাল, ডাল, কাপড়-চোপড়, প্রয়োজনীয় গৃহসামগ্রী এসবের দাম বাড়ল না কমল জনগণ মূলত সেটাই দেখতে চায়। এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানায়। তখন তারা এমন বাজেটকে বলে গণবিরোধী বাজেট।

কিন্তু অর্থমন্ত্রীর জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই- এমন একটি দ্রব্য আছে যেটি নিত্যপ্রয়োজনীয় নয় কিংবা নিত্যদিন ব্যবহার হলেও তা স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো নয়। আর সেটি হচ্ছে তামাকজাত দ্রব্য। এটির মধ্যে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুল অন্যতম। এই তামাকজাতদ্রব্য প্রতিদিন ব্যবহৃত হয় বটে কিন্তু এগুলো যে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সে বিষয়ে কেউ দ্বিমত করবেন না। এমনকি খোদ ব্যবহারকারীরাও স্বীকার করবেন, এ দ্রব্যের ব্যবহার তার শরীরের জন্য এবং আর্থিকভাবে কত ক্ষতি বয়ে আনছে।

প্রতিবছর তামাকপণ্যের ব্যবহারে অন্তত সোয়া লাখ লোকের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে এবং আরো চার লাখ মানুষ পঙ্গুত্বের জীবন যাপন করছে। তামাকের কারণে চিকিৎসা সেবায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। তাই অধিকাহারে তামাকের কর ও দাম বাড়ালে এর চাহিদা তথা ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে আসলে এটি নিঃসন্দেহে দেশের তথা দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর। আশা করছি, তামাকের ক্ষতির ভয়াবহতার দিকটি বিবেচনায় এনে আসন্ন বাজেটে তামাকের কর ও মূল্য বাড়ানোর বিষয়টি অর্থমন্ত্রী ভেবে দেখবেন।

তামাক খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তামাক ব্যবহারের কারণে রোগের চিকিৎসায় সরকারের ব্যয় হয় তার দ্বিগুণ অর্থ। তামাককে এখনো অন্যান্য নেশাদ্রব্যের মতো অবৈধ পণ্য হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়নি বটে, কিন্তু এ পণ্য যে ক্ষতিকর ও এর নিয়ন্ত্রণ দরকার, তার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক সনদ রয়েছে, যা ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল বা এফসিটিসি নামে পরিচিত। বাংলাদেশ এফসিটিসির স্বাক্ষরকারী দেশ।

তাই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, তামাকদ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। এই নিয়ন্ত্রণের একটি উপায় হচ্ছে- তামাক ব্যবহার কমাবার জন্য কার্যকরভাবে কর আরোপ করা। তাই আমরা আসন্ন বাজেটে উচ্চহারে করারোপ করার কথা বার বার বলছি।

আসন্ন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে পরামর্শ করে তামাকপণ্যের কর যাতে বৃদ্ধি করা হয় এজন্য অর্থমন্ত্রীর নিকট আমরা কিছু সুপারিশ তুলে ধরছি। সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ২টিতে নিয়ে আসা। বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দেওয়া। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করা এবং সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য থাকবে।

জনগণের জীবণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকজাতপণ্যের ব্যবহার কমাতে আসন্ন বাজেটে কর বাড়ানোর বিষয়টি উঠে আসবে অর্থমন্ত্রীর নিকট এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শরীফ সুমন : সাংবাদিক