আসামিপক্ষের হুমকিতে তটস্থ স্কুলছাত্রী বর্ষার পরিবার


হাসান আদিব :

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় গত ২৩ এপ্রিলে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় অপহৃত হন স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষা। অভিযোগ ওঠে- সহপাঠীর সহায়তায় অপহরণের পর বর্ষাকে ধর্ষণ করে প্রতিবেশি বখাটে মুকুল হোসেন। এনিয়ে থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে অপমানিত হন বর্ষার বাবা।

আসামি পক্ষের হুমকিতে তটস্থ স্কুলছাত্রী বর্ষার পরিবার!

থানায় আইনি সহায়তা না পাওয়ার পর থেকে বর্ষাকে নিয়ে  নানাভাবে লাঞ্ছনা শুরু হয়। সমাজের মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য আর একপাক্ষিকভাবে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে দায়ী করায় বিষিয়ে ওঠে বর্ষার মনও। যা সইতে না পেরে গত ১৬ মে চিরকুট লেখে নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে বর্ষা।

বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ২৩ এপ্রিল অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় থানায় করা অভিযোগ বর্ষার আত্মহননের পর মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। পরে ১৭ মে আত্মহত্যার ঘটনায় আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। দুই মামলায় ১৫  আসামি জনকে করা হয়। এর মধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।

আর যথাযথ আইনি সহায়তা না দেওয়ায় মোহনপুর থানার ওসি আবুল হোসেনকে প্রত্যাহার করার পর সাময়িক বরখাস্তও করা হয়। ঘটনার পর প্রশাসনের সাড়া পাওয়ায় বিচার পাবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন মোহনপুরের বিলাপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান।

আরও পড়ুন স্কুলছাত্রী বর্ষা আত্মহনন মামলা: মোহনপুরের ওসি ক্লোজড

তবে ঘটনার তাৎক্ষণিকতা শেষ হতে না হতেই বর্ষার পরিবার পড়েছেন নতুন বিপাকে। গ্রেফতার হওয়া আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে গ্রামে ফিরে হুমকি-ধামকি আর কটু কথায় অতিষ্ঠ করে তুলছেন ভুক্তভোগী পরিবারটিকে।

মেয়ে হারানোর বেদনা কাটিয়ে না উঠতেই আসামি পক্ষের হয়রানি ও হুমকি-ধামকিতে স্থবির হয়ে পড়েছে বর্ষার পরিবারের ঈদ আয়োজনও। বিষয়টি পুলিশকে জানালেও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না বর্ষার পরিবার।

বর্ষার বাবা আব্দুল মান্নান ইউনিভার্সাল২৪নিউজ-কে বলেন, ‘মেয়েটি মারা যাওয়ার পর থেকে আমার পুরো ফ্যামিলি দুঃখ-কষ্টে ভেঙে পড়েছে। সংসারের কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়ার বলশক্তিও কারও নেই। সংসার-ই চলছে না বলা যায়। অথচ আজ বাদে কাল ঈদ!

আব্দুল মান্নান বলতে থাকেন, ‘এরকম কষ্টের মধ্যে- বর্ষার আত্মহত্যার ঘটনায় দোষী যারা, সেই সব আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে গ্রামে এসেছে। আসামি ইদ্রিস, রহমান, ইসাদুল, মকবুল ও সাইফুরের পরিবারের লোকজন আমার ফ্যামিলির মানুষদের ভয়-ভীতি ও হয়রানি করছে।

তিনি আরও বলেন, আমার আরও দুই মেয়ে রয়েছে। তারা বাড়ির বাইরে গেলেই বিভিন্ন কটু কথা বলছে এবং অশোভন আচরণ করছে। ফিরে এসে মেয়ে দুটো আমার কান্নায় ভেঙে পড়ছে। আর কতো বুঝিয়ে রাখবো ওদের। আমরা যাতে ভিটে মাটি ছেড়ে চলে যায়, সেই জন্য কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। আমি নিরূপায়, কী করবো কিছুই বুঝছি না।’

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম রোবাবর (০২ জুন) রাতে ইউনিভার্সাল২৪নিউজ-কে বলেন, ‘স্কুলছাত্রী বর্ষার আত্মহননের ঘটনার পর পুলিশ গুরুত্বসহকারে বিষয়টি তদন্ত করছে। গোয়েন্দা পুলিশ মামলা দু’টির তদন্ত করছে। মামলার তদন্ত কাজও বেশ এগিয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়েছে। তবে আমরা বর্ষার পরিবারের কোনো সদস্য যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছি। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যরাদের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে।

প্রসঙ্গত, আত্মহত্যার আগে স্কুলছাত্রী বর্ষা লিখে যাওয়া চিরকুটে উল্লেখ করেন, ‘একটা মেয়ের কাছে তার মান-সম্মানটাই সব চাইতে বড়।  আমি আমার লজ্জার কথা সবাইকে বলতে বলতে নিজের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেছি। প্রতিদিন এসব পর পুরুষের কাছে বলতে বলতে। আর পারছি না!

আরও পড়ুন – অপরাধীকে শাস্তি দিলেই তো মান সম্মান ফেরত পাব না : আত্মহত্যার আগে চিরকুটে স্কুলছাত্রী


শর্টলিংকঃ