ইউনাইটেডে আগুন: নিহতের স্বজনের মামলা দায়ের


ইউএনভি ডেস্ক:

রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের অবহেলার কারণে আইসোলেশন ইউনিটে আগুনের ঘটনা ঘটে। এই অভিযোগে রাজধানীর গুলশান থানায় একটি মামলা করেছেন একজন নিহতের স্বজন।বুধবার রাতে মামলাটি করা হয় বলে নিশ্চিত করেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান।


গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, মামলাটি করেছেন নিহত অ্যান্থনি ভের্নন পলের মেয়ের জামাই রোনাল্ড মিকি গোমেজ। মামলায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, এমডি, সিইও, পরিচালক, করোনা ইউনিটে সে সময় কর্মরত ডাক্তার-নার্স, সেফটি ও সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।

ওসি কামরুজ্জামান বলেন, আগুনের পেছনে ইউনাইটেড হাসপাতালের অবহেলাকে দোষারোপ করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে মামলাটি করা হয়েছে। পুলিশ মামলার তদন্ত করছে।

এদিকে মামলার বাদী রোনাল্ড মিকি গোমেজ বলেন, আমি তাদের অবহেলাগুলো তুলে ধরে থানায় একটি অভিযোগ দেই। পরে সেটিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।উল্লেখ্য, গত ২৭ মে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে (মূল ভবনের বাইরে স্থাপিত) আগুন লাগে। এ ঘটনায় পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

যাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন- রিয়াজুল আলম (৪৫), খােদেজা বেগম (৭০), ভেরুন এন্থনি পল (৭৪), মাে. মনির হােসেন (৭৫) ও মাে. মাহাবুব (৫০)। তারা সবাই হাসপাতালের আইসােলেশন ইউনিটে করােনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন।

এ ঘটনায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতাল সংলগ্ন তবে মূল ভবনের বাইরের আইসােলেশন ইউনিটে সম্ভবত শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি হয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন আইসােলেশন ইউনিটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল ও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বাতাসের তীব্রতায় আগুন প্রচণ্ড দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়ার ফলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে ভর্তি পাঁচজন রােগীকে বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয়নি এবং ভেতরে থাকা এই পাঁচজন রােগী মৃত্যুবরণ করেন। তারা করােনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন।

এতে আরও বলা হয়, দমকল বাহিনীকে তাৎক্ষণিক খবর দেয়া হয়। হাসপাতালের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও দমকল বাহিনীর সহায়তায় ১৫-২০ মিনিটে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে দমকল বাহিনী তদন্ত করছে এবং ইউনাইটেড হসপিটাল কর্তৃপক্ষ এ সম্পর্কে তাদের পূর্ণ সহায়তা প্রদান করছে।

ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স সদরদফতর এ ঘটনার তদন্তের জন্য উপ-পরিচালক (ঢাকা) দেবাশিস বর্ধনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। পাশাপাশি একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ইউনাইটেডের করোনা ইউনিট ও এর আশপাশে ছিল না অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা

ওই দিন আগুনের বিষয়ে আইসোলেশন ইউনিটের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের উপ-পরিচালক ও ফায়ারের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান দেবাশিস বর্ধন বলেন, এই ইউনিটটা খুবই রিস্কি ছিল। যে পাঁচজন মারা গেছেন তারা সানসেটের ঠিক নিচে ছিলেন। আর বাইরে একটা এক্সটেনশন আছে টিনশেডের। অস্থায়ীভাবে তৈরি ওই ইউনিটের পার্টিশনগুলো পার্টেক্স জাতীয়, যা অতিদাহ্য। আগুন যখন লেগেছে তাৎক্ষণিকভাবে একসঙ্গে পুরোটায় লেগে গেছে। এ কারণে একটা রোগীও বের হতে পারেনি।

পরদিন সকালে করোনারোগীদের জন্য তৈরি করা ইউনাইটেড হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে আইসোলেশন ইউনিটের জন্য ব্যবহৃত ১২টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ৯টিই মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিআইডির ফরেন্সিক টিম।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ওইভাবে ছিল না। কিন্তু করোনা ইউনিটের পাশেই ফায়ার হাইড্রেন্ট ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বোধয় ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবহার করতে পারেনি। তাই প্রথমে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’

ফায়ার সার্ভিসকে ডাকতে ২৫ মিনিট বিলম্ব

ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, হাসপাতালে আগুনের সূত্রপাত হয় বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে। আর ফায়ার সার্ভিস বলছে, তাদের কাছে আগুনের সংবাদ আসে ৯টা ৫৫ মিনিটে। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিতে ২৫ মিনিট কেন সময় লেগেছিল? ফোন দেয়া কার দায়িত্ব ছিল, আর এই ২৫ মিনিটে কেন আগুন নেভানো যায়নি? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয়নি ইউনাইটেড হাসপাতাল।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, আমরা ৯টা ৫৫ তে আগুনের সংবাদ পেয়ে ১০টা ৪ মিনিটে ইউনাইটেডে প্রবেশ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করি। ফায়ার এসেই দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে। যেই স্থানে আগুন লেগেছে, সেখানে আমরা আগেও মহড়া করেছিলাম।


শর্টলিংকঃ