ইনকোর্স ও উপস্থিতির নম্বর তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত সর্বনাশ করতে পারে


‘কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া নব্য সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলো ইনকোর্স ও উপস্থিতির নম্বর প্রদানে দায়িত্বের অপব্যবহার করে যাচ্ছে বলে মনে করছেজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় । পদ্ধতিটি বাতিলের পূর্বে তা আরোও পরিমার্জন করার লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে এ বিষয়ে কর্মশালা বা মতবিনিময় করতে পারতেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা দিন দিন বাড়াতে হবে। অথচ সেটি সংকুচিত করা হচ্ছে ।’

গত ৮  ফেব্রুয়ারি ২০২০ খ্রি. একাডেমিক সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে প্রচলিত ইনকোর্স পরীক্ষা বাতিলসহ উপস্থিতির বিপরীতে দেয় নম্বর বিধান তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর যখন নিজ দেশ ও বর্হিবিশ্বের নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জোর দিচ্ছে, তখন মন্দের ভাল ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে ইনকোর্স ও উপস্থিতির নম্বর প্রদানে শিক্ষকদের ওপর প্রত্যক্ষ দোষ চাপিয়ে বা এর অপব্যবহার হচ্ছে এই অযুহাত দেখিয়েসেটি বাতিল- মনে করি, মানসম্মত শিক্ষার ন্যূনতম মানদণ্ডকে ভূলন্ঠিত করা হল। কোনো অভিযোগ থাকলে তা  যাচাই  করা জরুরি ছিল।

বিভাগীয়, জেলা এমন কী উপজেলায় অবস্হিত পুরাতন সরকারি কলেজগুলো যখন ইনকোর্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির ওপর কড়া নজর দেয়াসহ একটি সুন্দর অবস্হানে পৌঁছতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন এই সিদ্ধান্ত অংশীজনকে হতাশাগ্রস্ত করল। এমন কী কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান উপস্থিতি সন্তোষজনক না থাকলে ফরমপূরণের সুযোগ না দেয়ার ঝুঁকি নিয়েছে এবং এখনও নিচ্ছে।

আমার ব্যক্তিগত ধারণা হল,কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া নব্য সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলো ইনকোর্স ও উপস্থিতির নম্বর প্রদানে দায়িত্বের অপব্যবহার করে যাচ্ছে বলে জাতীয বিশ্ববিদ্যালয় মনে করছে। পদ্ধতিটি বাতিলের পূর্বে তা আরোও পরিমার্জন করার নিমিত্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে এই বিষয়ে একাধিকভাবে কর্মশালা বা মতবিনিময় করতে পারতেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই তাই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা দিন দিন বাড়াতে হবে অথচ সেটি সংকুচিত করা হচ্ছে এবং মূল্যায়নের সব ভার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বহন করতে যাচ্ছে যেটি উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে মোটেও প্রযোজ্য নয়।

অনার্স ও মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও সক্ষমতা বাড়াতে হলে তাকে ক্লাস প্রেজেন্টেশন,অ্যাসাইনমেন্ট,ব্যবহারিক, মাঠকর্ম, গবেষণা এমনকি আধুনিকভাবে দক্ষ করতে হলে আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ইনকোর্স ও উপস্থিতির নম্বর শুধু বাতিল নয় বরং এদুটিকে চালু রেখে উল্লিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করে প্রতিষ্ঠানের ওপর আরোও ক্ষমতা অর্পণ করতে হবে। একজন শিক্ষার্থী ক্লাস না করে ১ বছর পর পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে পারে কিন্ত সে পূর্বাপরের চেয়েও বিকলাঙ্গ হবে।কোনোরকম পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া চাপিয়ে দেয়াএকটি অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত জাতিকে সর্বনাশ করতে পারে সেটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিন্ত সামান্য ভাবে নি।

সকল পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করে সেটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জেনেও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কিভাবে নিতে পারল তা হতবাক করেছে সমগ্র জাতিকে।আমার অনুরোধ ইনকোর্স ও উপস্থিতির নম্বর প্রদানে কোন্ ধরণের প্রতিষ্ঠান কিভাবে ও কেন বিচ্যুতি করছে তা গভীর অনুসন্ধানসহ কার্যকর ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিচ্যুতির কারণে সারাদেশের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা মোটেও কাম্য নয়।

আমার সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন সহকর্মীগণকে অনুরোধ জানাব,আমাদের পেশাগত অস্তিত্ব ও শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ইনকোর্স পরীক্ষা ও উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ন্যুনতম যে বাধ্যবোধকতা আছে তা বহাল রাখাসহ প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাকে আরোও সুসংহত করতে কার্যকরী ও সাহসী ভূমিকা অব্যাহত রাখতে।অনার্স ও মাস্টার্স শিক্ষার অবাধ সম্প্রসারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করেছে, সেটির মান ধরে রাখতে হলে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন আর এটি না করে ঠুনকো প্রেসক্রিপশন কখনও সমাধান বয়ে আনবে না। একজন শিক্ষক হিসেবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। কারণ,মাঠ পর্যায়ে আমরাই শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পৃক্ত। তাদের কোনটি ভাল, কোনটি মন্দ আমরা অবহিত।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যক্ষ ও অভিজ্ঞদের নিয়ে দ্রুত কর্মশালায় মিলিত হয়ে তাঁদের মতামত গ্রহণপূর্বক অবিলম্বে বিচ্যুতির কারণ ও এর সমাধান বের করে প্রচলিত ইনকোর্স ও উপস্থিতি বহালরাখাসহ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ক্ষেত্রে যুগোপযোগী আরোও নতুন কর্মপদ্ধতি সৃষ্টি করবে সে প্রত্যাশা ও আবেদন মাননীয় উপাচার্যের মহোদয়ের নিকট।

লেখক : অধ্যক্ষ, রাজশাহী কলেজ


শর্টলিংকঃ