ইবি ছাত্রলীগ সম্পাদকের চাঞ্চল্যকর অডিও ভাইরাল, সমালোচনার ঝড়


ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সাথে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হয়েছে। অডিওতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে একাধিক ফেসবুক একাউন্ট থেকে ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটি প্রকাশ করা হয়।

এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় অডিওটি। তবে পরে ওই ফেসবুক একাউন্টগুলো আর খুজে পাওয়া যায়নি। অডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে আলোচনার ঝড়।

অডিওতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা তৈরির বিষয়ে এক ব্যক্তির সাথে কথা বলে রাকিব। টাঙ্গাইলের এক ধনী পরিবাবের ছেলে মাহমুদুলকে নেতা বানানোর কথা হয়। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শোভন ও রাব্বানীর দুই লাইনেই কনফার্ম করতে পারবে বলে দাবি করে রাকিব। নিজেকে গোলাম রাব্বানী কর্তৃক নিযুক্ত এই অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রতিনিধিও দাবি করে সে।

কথা হয় নিজের নেতা হতে গিয়ে কাঠখড় পুড়ানোর বিষয়ে। নেতা হতে গিয়ে বিভিন্ন খাতে ৪০ লাখ টাকা খরচের কথা উঠে আসে তার কথায়। যা কিনা ছয় মাসেই দ্বিগুন হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করে রাকিব। তকে কথোপকথের অপর প্রান্তের অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায় নি। অডিওটি ঈদুল আজহার আগের বলে ধারণা করা হচ্ছে। অডিও ক্লিপটি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

পাঠকদের জন্য অডিও ক্লিপটির কথোপকথোন হুবহু তুলে ধরা হলো:

‘অজ্ঞাত ব্যক্তি: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওই ছেলেটা, ওর বাড়ি টাঙ্গাইল।

রাকিব: নতুন এই কমিটিতে পোস্ট কি হইছে?

অজ্ঞাত ব্যক্তি: কি সম্পাদক যেন! সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সেক্রেটারীর সাথে ভালো সম্পর্ক, ভিসির সাথে ভাল সম্পর্ক। ঠিক আছে? তোমার মতই ভিসির সাথে ভাল সম্পর্ক। আর… টাঙ্গাইলের ওই ছেলে, ওই ছেলের হচ্ছে টাকা পয়সার অভাব নাই। সেই পরিবারের ছেলে নেতা হবে। কি পলিসি খাটাবো?

রাকিব: ঢাকা যায়ে খাটতে হয়। খাটতে বলতে কি, বহুত কাঠ খড়ি আছে,,,, তবে এখন আমার যে হিসাব নিকাশ, রাব্বানী ভাইয়ের সাথে আমার যে সম্পর্ক, এ আঞ্চলিক যে বিষয়টা আমি যদি ভাইরে বলি ভাই আমার কথা শুনবে। ভাই আমাকে অলরেডি বলেছে।

অজ্ঞাত ব্যক্তি: বিষয়টা হচ্ছে আমি বারবারই যে কথাটা বলেছি রাব্বানীর তোমার লবিংটা মেইনটেইন করতেই হবে..

রাকিব: আমি বলি, আমি আপনারে বলি ওরে নেতা হতে হলে, ভিসি স্যার যদি বলে তাহলে ও নেতা হতে পারবে। আর ভিসি স্যারের সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। ভিসি স্যার রে আমি এখন পযর্ন্ত কারো নাম বলিনাই।

অজ্ঞাত ব্যক্তি: আর কথা হচ্ছে তোমার মেইনলি যে জিনিষটা দেখতে চাই। বাঁধন যেহেতু লোকাল।

রাকিব: বাঁধন যা বলবে নে তাই শুনব নে।

অজ্ঞাত ব্যক্তি: ওনার সাথে ইয়ে সব তোমার ঠিকঠাক রাখা দরকার। বলিছে বিশ্ববিদ্যালয় দেখবে। এখন ধরও তোমার আমার দুইটা কাজ হচ্ছে খুব জরুরী। এখন আমার যে কারণে হয় ইয়েস অর নো নেগেটিভ ওদের তিনচার দিনের ভিতরে তোমারও জোর আছে একটা, আমারও জোর আছে।

রাকিব: হুমম..

অজ্ঞাত ব্যক্তি: ঠিক আছে? সেই ব্যাপারটা ওদের সাথে সেভাবে কথা বলা যায়। ওরা খুব নাছোড়। যে ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমরা খাব। কারণ সরাসরি হচ্ছে রাব্বানী লাইনে আসুক ওই লাইনে গেলেই তোমার ধর, তোমার ধর এর ভিতরে যে ইনভেস্টম্যান্ট সেটাও কিন্তু তোমার থেকে যাবে।

রাকিব: এই ইনভেস্টম্যান্টটা বাদ দেন। . . .

অজ্ঞাত ব্যক্তি: যোগাযোগটোগ আছে। মুটামুটি না তো মনে কর হট সম্পর্ক হতে হবে। এখন মূলত ও যে জায়গাতে, মেইনলি বড়লোকের ছেলে তো! ঠিক আছে?

রাকিব: হুমমম

অজ্ঞাত ব্যক্তি: ও এদিকে রাজনীতির সাথে হচ্ছে কমিটিতে টমিটিতে আছে বাদবাকি টাকা পয়সা দিয়ে হচ্ছে ও বের হয়ে আসবে। যে কারণে এত ইয়ে করা। আমার কাছে বলছে টাকা পয়সার কোনো সমস্যা নাই। ঠিক আছে?

রাকিব: আচ্ছা! আপনে ওরে আমারে একটু ফোন দিতে বলেন, আমার নাম্বারটা দিয়ে একটু ফোন দিতে কন। আমি ওর সাথে একটু ডিরেক্ট কথা বলি…

অজ্ঞাত ব্যক্তি: ও আচ্ছা.. আর এমনি আমার কাছে একটু প্রাথমিক ধারণা চাইছে। ঠিক আছে? আমার কাছে নরমালি জিজ্ঞেস করছে হচ্ছে ফুফাতো ভাইয়ের মাধমে। যে যে হচ্ছে টাকা পয়সা? আমি বললাম যে টাকা পয়সা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। টাকা পয়সার একটা ধারণা দিতে বলছে। কাজ হতে হবে, কাজ হতে হবে..

রাকিব: হুমম.. কাজ হতে হবে।

অজ্ঞাত ব্যক্তি: তোমার ইয়ে সম্পর্কে তুমি যেভাবে বলছিলে আরকি, বিভিন্নভাবে কমিটি ভাঙ্গা তারপর গড়া, তারপর অন্যান্য ঝামেলা, প্রিন্ট ট্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তোমারতো একটা বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে গেছে।

রাকিব: হুমম.. হিউজ.. হিউজ..

অজ্ঞাত ব্যক্তি: সেই ফিগার তো আমি জানি, তা প্রায় মনে হয় চল্লিশের কাছে হবে..!
রাকিব: হুমম..

অজ্ঞাত ব্যক্তি: এসব নিয়ে ওর হচ্ছে কোনো আপত্তি নাই, ওর কথা হচ্ছে যে কোনোভাবে হতে হবে। এখন কোন লাইনে হবে সেটা বড় কথা না, এখন করবা তুমি.. হতে হবে।

রাকিব: হুম হতে হবে..

অজ্ঞাত ব্যক্তি: এখন ধরো সেক্ষেত্রে তোমারো, তুমি যেহেতু খরচ পত্র করি আসছো, আমি চাই তোমার এই খরচটা পুরণ হোক। ঠিক আছে?

রাকিব: না ভাই শোনেন কোনো ছেলেরে ইয়ে করতে গেলে… । এখন আমার যা খরচ হইছে এটা কোনো ব্যপার না। ওইটা ছয় মাস গেলে সব ডাবল হয়ে যাবে, সমস্যা নাই। কিন্তু ওরে হচ্ছে ফোন দিতে কন আমি গিয়ে হচ্ছে এক জায়গায় দেখা করে আসবোনি।

অজ্ঞাত ব্যক্তি: শোভন বা রাব্বানী দুইটা লাইনই তো তুমি কনফার্ম করতে পারবা?

রাকিব: হ্যাঁ, হ্যাঁ কনফার্ম করতে হবে।

অজ্ঞাত ব্যক্তি: না সেটা না বলছি যে শোভন বা রাব্বানী দুইটা লাইনই তো তুমি কনফার্ম করতে পারবা?

রাকিব: হ্যাঁ, হ্যাঁ পারব, দুইটাই পারবো।

অজ্ঞাত ব্যক্তি: সে জন্যই বলছি যে টাকার লাইনে ওর টাকার কোরো সমস্যা নাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার সাথে কথা বলার কথা বলতেছি। ঠিক আছে?

রাকিব: হুমম..

অজ্ঞাত ব্যক্তি: আর সেটা যদি তুমি মনে করো সেক্ষেত্রে তুমি বলবা যে টাকার লাইনে হলে এভাবে কিভাবে কি করতে হয় সেটা তোমার দায়িত্ব তুমি শোভনরে দিয়ে না রাব্বানীরে দিয়ে করবা, ওর মেইনলি সর্বশেষ যে কথা আমারে বলেছে ঠিক আছে? সে কথাটা এরকম ওর মুটামুটি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা আছে, রাজনৈতিক পরিবার, ও নেতা হবে টাকা কোনো ব্যপার না। কোন ভাবে কি করবা, রাব্বানীর কাছে গোপন থাকবে কি করবা? এইটা পরে হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে আমি তোমাকে বলতেছি। তুমি….

রাকিব: ও যদি টাকা দিয়ে কমিটি করতে না চায়, তাহলে আমি অরেক জায়গায় কিছু করব।

এর আগে সম্প্রতি তার ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের আরেকটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। সেখানে বিশ^বিদ্যালয়ের ড্রাইভার নিয়োগ নিয়ে এক ব্যক্তির সাথে দেনদরবারের তথ্য উঠে আসে। এঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে রাকিব। ডায়েরীতে রাকিব দাবি করেন তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে কন্ঠ নকল করে এসব অডিও তৈরী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগকর্মী তম্ময় শাহা টনি বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদকের অডিওর কথা শুনেছি। দ্বায়িত্বশীল পর্যায়ের কারো থেকে ছাত্রলীগ এমনটা আশা করে না। সাধারণ কর্মী হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অডিও ক্লিপের বিষয়ে সত্য ঘটনা নিশ্চিত করে সকলের নিকট উপস্থাপন করা হোক।’

সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘অডিওটা আমার না। আমার ভয়েজের মত নকল করে অডিও বানানো হয়েছে। আমার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘অডিওটা আমি শুনেছি। এর সত্যতা যাছাইয়ের জন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে।’

বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাসহ সব সব মহল এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ ঘটনার সমালোচনা করে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করছেন অনেকেই। ক্যাম্পাসের সর্বত্র এখন আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে এই অডিও ক্লিপ। ৪০ লাখ থেকে ৬ মাসে টাকা দ্বিগুণ বিষয়টি নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে সর্বত্র।

অডিওটি শুনুন এখানেঃ


শর্টলিংকঃ