‘ইয়েলো’ জোনে রাজশাহী সিটি, তানোর ও চারঘাট


বিশেষ প্রতিবেদক :

জোনভিত্তিক সতর্কতায় ‘ইয়েলো’তে পড়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকা ও জেলার তানোর এবং চারঘাট উপজেলা। প্রতি লাখে ৩-৯ জন সংক্রমিত হলেই ইয়েলো জোন। সেই হিসেবে এ তিন এলাকা এখন ইয়েলো জোনে। মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে এ  তথ্য জানিয়েছেন। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক।

ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য বলছেন, ১৪ দিনের মধ্যে নমুনা পরীক্ষায় প্রতি ১ লাখে ৩-৯ জন শনাক্ত করোনা রোগী পাওয়া গেলে ওই এলাকা ইয়েলো জোন হিসেবে গণ্য হবে। এই হিসেব অনুযায়ী রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকা, তানোর ও চারঘাট উপজেলা ইয়েলো জোনের মধ্যে পড়ছে।  এই তিন এলাকাকে ইয়েলো জোন  চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএফএম আঞ্জুমান আরা বেগম ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় লোকসংখ্যা আট লাখ। কিন্তু সংক্রমিত ৪৯জন। বর্তমানে তিন সুস্থ ও একজন মারা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জোনভিত্তিক বৈশিষ্ট্যের হিসেবে সিটি কর্পোরেশন এলাকা ইয়েলো জোনে এখন।

তবে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক জানিয়েছেন,  এ পর্যন্ত রাজশাহী সিটি ও জেলায় ১৪৫জন সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু এরই মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। যেমন তানোরে মোট সংক্রমিত হয়েছিল ১৭জন। কিন্তু ১২জনই এখন সুস্থ। চারঘাটে করোনা রোগীর সংখ্যা ১৪। তবে সুস্থ হয়েছেন দুই জন। কাজেই জোনভিত্তিক ভাগ এভাবে করা ঠিক হবে না।

তবে তিনি আরো বলেন, রাজশাহীতে জনসংখ্যা ৩০লাখ। এরমধ্যে অন্তত ৩০০জন সংক্রমিত হলে ইয়েলো জোন বলা যাবে।যদিও প্রতিদিনই পরিসংখ্যান পরিবর্তন হচ্ছে। সংক্রমণ বাড়ছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর সিভিল সার্জনের  কার্যালয় থেকে জানানো হয়,  সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এ পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছে ৪৯জন, বাঘা উপজেলায় ১১জন, চারঘাটে ১৪জন, পুঠিয়া ১১জন, দূর্গাপুরে ৫জন, বাগমারা ১০জন মোহনপুরে ১৯জন, তানোরে ১৭জন, পবায় ৮জন ও গোদাগাড়ীতে এক জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাইডলাইনে বলা হয়, তিন পদ্ধতিতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা যাবে। এগুলো হলো-

প্রাথমিক নির্দেশক হিসেবে পূর্ববর্তী ১৪ দিনের মধ্যে পরীক্ষাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতি ১ লাখে কতজন করোনা পজিটিভ রোগী চিহ্নিত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক নির্দেশক হচ্ছে- পূর্ববর্তী ১৪ দিনের মধ্যে কেসের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে, সংক্রমণ বৃদ্ধির হার, রোগের লক্ষণভিত্তিক নজরদারি, অভ্যন্তরীণ অধিক সঞ্চরণশীলতা, অধিক দারিদ্র্য, খাবারের অপ্রতুলতা, নমুনা পজিটিভের হার (মোট পরীক্ষিত নমুনার মধ্যে কত শতাংশ পজিটিভ), পরীক্ষিত নমুনার রিপোর্ট প্রদানে বিলম্ব (স্যাম্পল সংগ্রহের পর কতদিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া এবং শনাক্ত করা হচ্ছে এবং পরীক্ষার পর্যাপ্ততা।

এছাড়া কোন অঞ্চলসমূহ অঞ্চলায়নের অন্তর্ভুক্ত হবে সেই বিষয়ে গাইডলাইনে বলা হয়, বাংলাদেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদ, মহানগরী, ওয়ার্ড, মহল্লা সকল কিছু এই অঞ্চলায়নের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই অঞ্চলায়নের সময় মহানগরীগুলোর ক্ষেত্রে, ইপিআই এলাকা বা অন্য কোনও সহজ পদ্ধতি [আকৃতিগত, প্রকৃতিগত অথবা সুবিধা মতো সীমানা] ব্যবহার করা হবে, যাতে করে অঞ্চলগুলোকে সুনির্দিষ্ট করা যায়।

ঢাকা মহানগরীর ছাড়া অন্যান্য এলাকায় পূর্ববর্তী ১৪ দিনের মধ্যে পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতি ১ লাখে ১০ জন বা এর অধিক শনাক্ত করোনা রোগী পাওয়া গেলে ওই এলাকা রেড জোন হিসেবে গণ্য হবে।একইভাবে প্রতি ১ লাখে ৩-৯ জন শনাক্ত করোনা রোগী পাওয়া গেলে ওই এলাকা ইয়েলো জোন হিসেবে গণ্য হবে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর রেড এবং ইয়েলো জোনের বাইরে দেশের বাকি ভৌগোলিক অংশকে গ্রিন বা সবুজ জোন বলছে। এখানে দুই ধরনের এলাকা আছে। যে সকল এলাকায় জোনিংয়ের শুরু থেকে কোনও কোভিড-১৯ রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি এবং যেসব এলাকায় পূর্ববর্তী ১৪ দিনে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ৩ জনের কম সংখ্যক ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে।

জোনিংয়ের নির্দেশনায় স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, এই অঞ্চলভিত্তিক রঙ পরিবর্তনের সময় অবশ্যই পূর্ববর্তী ১৪ দিনের ডাটা পর্যালোচনা করতে হবে। কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল গ্রুপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনায় এনে জোনিংয়ের নীতিমালা নির্ধারণ করবেন। নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমগুলো পরিচালনার জন্য প্রতি এলাকাভিত্তিক লোকাল কোভিড-১৯ কমিটি গঠন করা হবে। সব ধরনের জোনের জন্যেই একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠিত হবে, যারা নিয়মিত স্থানীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন এবং তাদের প্রাপ্ত তথ্যগুলো স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানাবেন। সেসব তথ্য উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় কমিটি উক্ত জোনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।


শর্টলিংকঃ