- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

ঈদের আনন্দ নেই বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের ঘরে


সাইদ সাজু, তানোর : 

চলতি বোরো মৌসুমে ধানের দাম কম হওয়ায় ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে কৃষকদের নাজেহাল ও শ্রমিক সংকটের মুখে পড়ে দিশেহারা হতে হয়েছিল। কিন্তু ঘরে ধান তোলার পর বাজারে গিয়ে দাম পাচ্ছেন না। ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের ঘরে ঈদের আনন্দ নেই। 

উপযুক্ত দাম না পেয়ে কৃষকরা লোকসানের মুখে দিশেহারা হয়ে পড়ায় এবার ঈদের খুশি ম্লান হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকরা ধানের ন্যায্য মুল্যে না পাওয়ায় পরিবার পরিজনের জন্য খুব বেশী প্রয়োজনীয় ছাড়া খুশির ঈদের কেনা-কাটা করতে পারছেন না তানোর উপজেলা প্রান্তিক চাষীরা। ফলে এখনো জমে উঠেনি গ্রামাঞ্চলে ঈদের বাজার।

প্রান্তিক কৃষকরা বোরো ধান চাষের জন্য বিভিন্ন দোকানে বাকিতে নেয়া সার, কীটনাশকের দোকানে শুরু হয়েছে হালখাতা তাই অন্য বছরের জন্য দোকানের বাকি পরিশোধ না করলে আর বাকি পাওয়া যাবেনা এই ভেবে একদিকে যেমন হালখাতা করতে হিমশিম ক্ষেতে হচ্ছে অন্যদিকে ঈদের কেনা-কাটা করা উয়ে উঠেছে কৃষকদের জন্য কষ্টকর। ঈদ বাজারে যেমন কৃষকদের আনা-গোনা নেই বললেই চলে তেমনি ভাবে হালখাতা করা ব্যবসায়ীদের দোকানেও উঠছে ব্যবসায়ীদের বাকি। কৃষকদের বাকিতে সার, কীটনাশক সরবরাহ করে এখন টাকা আদায় করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সামনে ঈদ, ধানের দামও কম, ঈদের আগে হালখাতা না করলে কৃষকেরা টাকা পয়সা খরচ করে ফেলতে পারে, এই ভেবে হালখাতা করে বিপাকে পড়েছেন তারা। টাকা আদায়ে হালখাতা করেও লাভ হচ্ছে না। টাকা পরিশোধ করতে আসছেন না কৃষকেরা। কেউ এলেও অর্ধেক পাওনা পরিশোধ করে পুনোরাই সময় নিচ্ছেন।

অপর দিকে কৃষকেরা বলছেন, রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরসহ পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো আবাদ ব্যাপক হারে চাষাবাদ হয়ে থাকে। এসব এলাকার প্রায় ৮০ ভাগ কৃষকেরা বোরো আবাদ করতে বাকিতে সেচ সার-কীটনাশক ও হালচাষ করে থাকেন। ধান উঠলে হালখাতার মাধ্যমে তা পরিশোধ করে থাকেন। কিন্ত এবার ধান উঠার শুরু থেকে দাম কম রয়েছে। যা বর্তমান বাজার অনুযায়ি ধান বিক্রি করলে আসল টাকায় উঠে আসবেনা চাষীদের। তাই অনেকেই দাম বাড়ার অপেক্ষায় আছেন।

গত সোমরাব রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডমালা বাজারের প্রায় ৫টি কীটনাশক ডিলার হালখাতার আয়োজন করেছিলেন। এর মধ্যে কীটনাশক ডিলার মেসার্স শিবলী ট্রেডার্সের মালিকের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে তিনি এলাকার প্রায় ৪শ’২০ জন কৃষকের কাছে প্রায় ২৫ লাখ টাকার সার, কীটনাশক বাকিতে দিয়েছেন। সোমবার ও মঙ্গলবার তার হালখাতা ছিল। ২ দিনে ৪শ’ ২০ জন কৃষকের মধ্যে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন কৃষক এসে হালখাতা করেছেন। এর মধ্যে কেউ পুরো টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। নাম মাত্র টাকা দিয়ে হালখাতা করেছেন।

তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ চালিত মিনি ডিপের মালিকরা বলছেন, বাকিতে কৃষকদেরকে বোরো ধানের জমিতে সেচ দিয়ে এখন টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন এবছর ধানের দাম কম হওয়ায় টাকা উঠাতে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকান গুলোতে বেচা কেনা অন্য বছরের চেয়ে অনেক কম হচ্ছে।