Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

ঈশ্বরদীর একটি বিদ্যালয়ে গোপনে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা:

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের রিয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরখাস্থ আহবান করলেও আবেদনকারীদের না জানিয়ে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে অনৈতিক লেনদেনের মাধাম্যে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আবেদনকারীরা।


লিখিত অভিযোগে জানা যায়, রিয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের জন্য দরখাস্থ আহবান করে ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল একটি জাতীয় ও সরকারী বিজ্ঞাপন তালিকা ভুক্ত না এমন একটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ৫০০ টাকার ব্যাংকড্রাফটের মাধ্যমে ১৪ জন প্রার্থী ওই পদে আবেদন করেন। কিন্তু র্দীঘদিনেও আবেদনকারীদের কোন নিয়োগ পরীক্ষার কার্ড ইস্যু বা তাদের সাথে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোন ধরণের যোগাযোগ করা হয়নি।

সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের বেতন শীটে অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে নাদিমুল হায়দার ওরফে শিমুল সরদার নাম দেখে হতবাত হয়ে পরে অন্যান্য আবেদন কারীরা। একই সাথে এমপিওতে (মান্থলি প্রেমেন্ট অর্ডার) নাদিমুল হায়দার ওরফে শিমুল সরদারের নাম অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগে থেকে আরো জানা যায়, ওই পদে আবেদনকারীদের মধ্যে ৫ জন স্মাতক , ১ জন সম্মান ও ৮ জন প্রার্থী সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে এইচএসসি পাশ। প্রার্থীদের শিক্ষাগত সকল যোগ্যতা যাচাইবাচাইকালে দেখা যায়, নিয়োগ প্রাপ্ত নাদিমুল হায়দার (শিমুল সরদার) ওই স্কুল থেকে ২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ন হন।

২০০২ সালে তিনি সিরাজগঞ্জের চৌহালীর একটি স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সেখানেও অনুত্তীর্ণ হন। ২০০৪ সালে যশোর বোর্ডের অধীনে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার একটি স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০০৬ সালে সাধারণ শিক্ষা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলে ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, নিয়োগকৃত নাদিমুল হায়দার ওরফে শিমুল সরদার আলোচিত ৫ জানুয়ারির পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি, নাশকতার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন মামলায় তিনি জেল খেটেছেন। পাবনা জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি ও ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রদলের ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক) ছিলেন।

অপর একটি লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং দাতা সদস্যরা অনৈতিক ম্যানেজ হয়ে অস্বচ্ছভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। অথচ প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি এবং অন্যান্য সদস্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি বিএনপি-জামাতের ঘাঁটি করার লক্ষ্যে অসৎ উদ্দেশ্যে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাংচুর, বোমা হামলা, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিদের উপর হামলা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ নানা নাশকতার মাস্টার মাইন্ড নাদিমুল হায়দার ওরফে শিমুল সরদারকে নিয়োগে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, নাদিমুল হায়দার ওরফে শিমুল সরদারের নিয়োগ পাকাপোক্ত ভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে নিয়োগের আগেই তার ভাই নাঈম হায়দার ওরফে নিপু সরদারকে স্কুলের কোঅপ্ট সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তারা অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম নিজেও ফুফাতো ভাইকে ওই পদে নিয়োগের জন্য নানা অপতৎপরতা চালান।

মোটা অংকের টাকা লেনদেনের বিষয়টিও উঠে আসে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি তার আত্মীয়কে ওই পদে নিয়োগ দিতে পারেননি বিদ্যালন পরিচালনা কমিটির কারণে। গোপনে ও অনৈতিক ভাবে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছে, সেখানে প্রতিষ্ঠান প্রধান, ম্যানেজিং কমিটি, জিডি’র প্রতিনিধি ও শিক্ষা অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজস রয়েছে বলেও স্থানীয়রা দাবী করেন।

ওই পদের আবেদনকারী একাধিক প্রার্থী জানান, ৫০০ টাকার ব্যাংকড্রাফটের মাধ্যমে আমরা অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটরের পদে আবেদন করেছি। কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও ইন্টারভিউ কার্ড পাইনি। পরে শুনেছি আমাদের সাথে আবেদন করা নাদিমুল হায়দার নামের একজনের নিয়োগ হয়েছে। ইতোমধ্যে এমপিও অনুমোদন হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্কুলটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মান্না সরদার বলেন, নিয়ম মেনেই ওই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আবেদনকারীরা যথাসময়ে কোন প্রকার যোগাযোগ করেননি। যারা করেছেন, তাদের নিয়েই এই নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়।

ঈশ্বরদী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সেলিম আকতার বলেন, নিয়োগ বোর্ডে আমিও ছিলাম। নিয়োগ পরিক্ষার কার্ড পাওয়া না পাওয়ার সাতে শিক্ষা অফিসের কোন সম্পর্ক নেই। এই ওই প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব। তবে ৫’শ টাকার ব্যাংকড্রাফটসহ আবেদন করে করে নিয়োগ পরীক্ষার কার্ড না পওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা থাকতে পারে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

নিয়োগপ্রাপ্ত নাদিমুল হায়দার ওরফে শিমুল সরদার বলেন, এই পদে প্রথমবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হলেও সেটি বাতিল হয়ে যায়। দ্বিতীয়বারের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমার চাকুরি হয়েছে। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি স্থানীয় ভাবে যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার বিরুদ্ধে পাবনা জেলার কোন থানায় কোন প্রকার মামলা নেই। আমার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানান জন্য তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তিনি পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধির খালাতো ভাই পরিচয় দিয়ে বলেন, প্রথম বিজ্ঞাপনের আবেদনকারীদের সাথে যোগযোগ করেই পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। এখানে অনৈতিক বা আর্থিক লেনদেনের বিষয় জড়িত নয়। আর কে কোন দল করে, কার বিরুদ্ধে কয়টি মামলা আছে নিয়োগের সময়ে এটা দেখা হয়নি।


Exit mobile version