Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

উপহারের শিশুখাদ্য খাচ্ছে তেলাপোকা-ইঁদুরে


ইউএনভি ডেস্ক:

করোনা মহামারিতে লকডাউন চলাকালে নারায়ণগঞ্জে শিশুদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া খাদ্য উপহারের (শিশুখাদ্য) একটি বড় অংশ বিতরণ না করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি কক্ষে ফেলে রাখা হয়েছে। নিচতলার ওই কক্ষের মেঝেতে রাখা এসব খাদ্যসামগ্রী নষ্ট হতে শুরু করেছে। ইঁদুর ও তেলাপোকায় কেটে ফেলেছে প্যাকেটগুলো।

করোনা দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন উপহার বিতরণ না করে এভাবে নষ্ট করায় সমালোচনাও হচ্ছে। তবে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলছেন, শিশুখাদ্য এত দিন থাকার কথা নয়। এত দিন থাকলে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। সমকালের পক্ষ থেকে ছবি ও ভিডিও দেখালে তিনি বলেন, জেলায় কতজন শিশুকে খাদ্য দেওয়া হয়েছে, তার হিসাব না দেখে বলতে পারছি না। যদি শিশুখাদ্য থেকে থাকে, তাহলে বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।

গত ১২ মে জেলা প্রশাসকের পক্ষে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিশুখাদ্যের জন্য নারায়ণগঞ্জে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ টাকা সিটি করপোরেশন এলাকাসহ সব উপজেলায় বণ্টন করা হবে। এর আগে এই শিশুখাদ্য বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গত ১২ এপ্রিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এতে বলা হয়েছে, ত্রাণসামগ্রী ও শিশুখাদ্য মোড়ক বা প্যাকেট বা বস্তায় বিতরণ করতে হবে। মোড়ক বা প্যাকেট বা বস্তার গায়ে প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার’ লিখতে হবে। মোড়ক বা প্যাকেট বা বস্তার গায়ে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’সংবলিত গোল সিল ব্যবহার করতে হবে। ত্রাণসামগ্রী ও শিশুখাদ্য উত্তোলন এবং বিতরণে সংশ্নিষ্ট ট্যাগ অফিসাররা সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষে কয়েক মাস ধরে শিশুখাদ্যের হাজারখানেক প্যাকেট পড়ে আছে। এসব প্যাকেটের গায়ে সাদা কাগজে লেখা রয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার’।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনামতে এসব প্যাকেটে খেজুর, বিস্কুট, ফর্টিফায়েড তেল, ব্রাউন চিনি, সুজি, মসুর ডাল, সাগু, ফর্টিফায়েড চাল, পানিশোধন ট্যাবলেট ও বাদাম থাকার কথা। তবে জানালা দিয়ে দেখা গেছে, শিশুখাদ্যের মধ্যে নুডলস, দুধ, সেরেলাক, গুঁড়া চকলেটসহ নানা ধরনের খাবার রয়েছে।

যে কক্ষে এসব প্যাকেট পড়ে রয়েছে, তার চারপাশে কাচের জানালা। জানালাগুলোর অধিকাংশের কাচই ভাঙা। এই ভাঙা জানালা দিয়ে ধুলোবালি ও বৃষ্টির পানি এসে খাবারগুলো নষ্ট হচ্ছে। তা ছাড়া খাবারগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলেও তা বোঝার উপায় নেই। ফেলে রাখা শিশুখাদ্যের ওপর ধুলোবালির আস্তরণ ও তেলাপোকা কিলবিল করছে।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ডিসি অফিসের লোকজন এসে ওই কক্ষটিতে প্রবেশ করেন। এরপর বাজারের ব্যাগে ভরে প্যাকেট নিয়ে যান। এক মাস ধরে এভাবেই বাজারের ব্যাগে করে খাদ্য নিতে দেখেছে অনেকেই। ওই কক্ষে শিশুখাদ্যের পাশে অন্যান্য ত্রাণভর্তি বস্তাও রয়েছে। এসব বস্তা থেকে সব সময় দুর্গন্ধ বের হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, শিশুখাদ্যের সঙ্গে থাকা বস্তাবন্দি ত্রাণসামগ্রীও এত দিনে পচে গেছে। তারা বলেন, ত্রাণ ও শিশুখাদ্য দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ না করে এভাবে নষ্ট করে ফেলা বা গোপনে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া ঠিক নয়। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এবং দরিদ্র শিশুরা সরকারের দেওয়া এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

এ বিষয়ে জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রেজাউল করিম সমকালকে বলেন, তিনি জেলায় নতুন যোগদান করেছেন। তাই জানেন না, খাদ্যগুলো কার বা কোন অফিসের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তিনি দাবি করেন, তার অধীনে শুধু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্নিষ্ট ত্রাণসামগ্রী থাকে। তবে জেলা প্রশাসনের অপর একটি সূত্রের দাবি, করোনা একটি বৈশ্বিক দুর্যোগ। তাই সরকার প্রদত্ত সবকিছুই জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অধীনেই থাকার কথা। জেলা প্রশাসক শুধু বণ্টনের দায়িত্বে থাকেন।


Exit mobile version