Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

একটি নামই বদলে দিয়েছে গোদাগাড়ী ভূমি অফিসের চিত্র


গোদাগাড়ী প্রতিনিধি:

অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকা ফিকে একতলা পুরাতন একটি ভবন। কার্যালয়ের উঠান, বারান্দায়, এমনকি ভেতরে টুল বা চেয়ারে বসা বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড়। কে দালাল আর কে এই কার্যালয়ের চাকুরে তা এক সময় বোঝা দায় ছিল।

গোদাগাড়ী ভূমি অফিসে দালালদের পেছনে ঘুরে ঘুরে জমির নামজারি বা বন্দোবস্তের কাজ করতে হতো। সাধারণ মানুষের মনে ছিল দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ,নামজারি আবেদন করে কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে লেগে যেত বছর। সেবা নিতে আসা মানুষের অভিযোগ,অনুযোগ আমলে নেওয়ার মত ছিল না কেও। রকমই ছিল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা ভূমি অফিসের চিত্র।

কিন্তু সেই চিত্র আর নেই। ভূমি কার্যালয় নিয়ে মানুষের নেতিবাচক ধারণা পাল্টে দিয়েছেন একজন সহকারী কমিশনার (এসি-ল্যান্ড)। তিনি হলেন মোছাঃ নাজমুন নাহার। যোগদানের ৩ মাসের মধ্যে ৪-৫ হাজার নামজারি কেস নিষ্পত্তি করে তাকে লাগিয়ে দিয়েছেন। যেখানে নিজের জমি খারিজ করতে সময় লাগবে ৬ মাস থেকে ১ বছর সেই খারিজ সম্পূর্ণ করতে সময় লাগে মাত্র ২৮ দিন। উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের চিরচেনা জটিলতা দূর করে দিয়েছে, এই একটি নাম। উপজেলা ভূমি কার্যালয়কে জেলার মধ্যে সবচেয়ে ডিজিটাল ও আধুনিক করে গড়ে তুলেছেন মোছাঃ নাজমুন নাহার, যা হতে পারে রাজশাহী জেলার অনুকরণীয়।

৩৫ তম বিসিএসে প্রশাসনিক ক্যাডার হিসেবে প্রথম ২০১৭ সালের মে মাসে সাতক্ষীরায় সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করে এখানে ২০১৯ সালের ৪ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন । এরপর ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করে ২০২০ সালের ২৩ পলাই পর্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে (২৮ জুলাই) রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি নানামুখী উদ্যোগ নেন। শুরুতেই পুরো অফিস ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় এনে কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দালাল মুক্ত করেন। উপজেলা ভূমি অফিসের নবনির্মিত ভবনের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্যেও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিটিজেন কর্নার, সেবা প্রার্থীদের বসার জন্য ও গণশুনানি করার জন্য রুমের ব্যাবস্থা, দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান এবং পতাকা মঞ্চ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। আরও একটি অভিনব উদ্যোগ হচ্ছে সেবা প্রার্থীদের সিরিয়ালের জন্য টোকেন সিস্টেম চালু করুন। এসি ল্যান্ডের কক্ষ ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কক্ষেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
সার্বিক ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল সেবা প্রদান কার্যক্রম চালু হয়েছে এ কার্যালয়ে। উদ্যোগটি সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে। ই-নামজারির কাজ চলছে পুরো উদ্যমে। এখন বিশ্বের যেকোনো স্থানে বসে অনলাইনে নামজারির জন্য আবেদন করতে পারবেন সেবাপ্রার্থীরা। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইলে ফিরতি খুদে বার্তার মাধ্যমে তাকে নিশ্চিত করা হচ্ছে। ই-হাজিরা স্থাপনের মাধ্যমে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অফিস হাজিরা নিশ্চিত হয়েছে।

উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে কথা হয় আব্দুল মতিন নামের এক সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে। তিনি জানান, আগে দালালের জন্য এ অফিসে ঢোকাই যেত না। আর এখন অফিসে কোনো দালাল নেই। আমরা সরাসরি এসে সরকারি ফি জমা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করে সঠিক সময়ে সেবা পাচ্ছি।

অন্য এক সেবাপ্রার্থী সালেহা বললেন, ভূমি অফিসের কাজ মানেই দালালের দৌরাত্ম্য। দিনের পর দিন হয়রানি। কর্মচারীদের অবজ্ঞার পাশাপাশি বাড়তি খরচ। কিন্তু এখানে এসে আমার ধারণা পাল্টে গেছে। আর এই বদলের পেছনের মানুষটি হলেন এসি ল্যান্ড মোছাঃ নাজমুন নাহার।

এ ছাড়াও এলাকার সাধারণ মানুষ সকাল-সন্ধ্যা তার কাছে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসে তিনি তাৎক্ষণিক সেই সমস্যাগুলো সমাধান করেন। জটিল সমস্যা গুলোকে ইউনিয়ন ভূমি অফিস অনুযায়ী ভাগ করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের সমস্যার সমাধান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। অনেক ক্ষেত্রেই এসি ল্যান্ড নিজে ছুটে যান সমস্যা সমাধান করতে।

উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে এসি ল্যান্ডের কাছে কোনো সেবা প্রার্থীর যেতে অনুমতি লাগে না। এমনকি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে বিভ্রান্ত অপেক্ষমাণ কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে নিজ কক্ষ থেকে বাইরে এসে তাঁর সমস্যার কথা শুনে তাঁর সেবা নিশ্চিত করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছাঃ নাজমুন নাহার জানান,গোদাগাড়ী একটি বড় উপজেলা হওয়াই অফিসে আগত সেবা প্রার্থীদের সংখ্যাও অত্যাধিক। যোগদানের পর আমি লক্ষ্য করি অফিস সহকারীদের রুমের সামনে সেবা প্রার্থীদের জটলা লেগেই থাকে এজন্য টোকেন সিস্টেম চালু করেছি যার একপাশে সহকারীদের নাম এবং অপর পাশে ক্রমিক নাম্বার দেওয়া রয়েছে। সেবা প্রার্থীরা নির্দিষ্ট সহকারীর কাছ থেকে আগমনের ক্রমিক অনুযায়ী টোকেন গ্রহণ করে অপেক্ষা করতে পারবেন। একটা সময় ছিল, কর্মকর্তারা কক্ষে বসে বেল চাপতেন। বাইরে অপেক্ষমাণ সেবাপ্রার্থীরা ভারী পর্দা সরিয়ে এক এক করে কক্ষে ঢুকতেন। তাঁর আগে অফিস সহায়কের কাছে অনুমতি নিতে হতো। আমি প্রথমে এসেই এই পর্দা সরিয়েছি। সেবাপ্রার্থী ও সেবাদানকারীর মধ্যে ফারাক সৃষ্টির কোনো সুযোগ রাখিনি।

এসি ল্যান্ড আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আধুনিক ও সেবামুখী ভূমি অফিস বিনির্মাণের প্রত্যয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত সময়ে সেবা প্রদানই আমার লক্ষ্য।


Exit mobile version