একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় রাবি ভিসিকে তুলাধুনা


বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তোপের মুখে পড়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান।মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন সিনেট ভবনে উপাচার্যের সভাপতিত্বে শিক্ষা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়।সেখানে সিদ্ধান্তের বাইরে কয়েকজন শিক্ষককে স্বশরীরে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় তোপের মুখে পড়েন উপাচার্য।

রাবি উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান (ফাইল ফটো)

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় স্বশরীরে উপস্থিতির পাশাপাশি অনলাইনে জুম অ্যাপের মাধ্যমেও অংশ নেওয়ার নিয়ম করা হয়। একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে বিভাগগুলোর সভাপতি, অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং ছয়জন নির্বাচিত সদস্যকে সভাস্থলে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অধ্যাপককে অনলাইনে সভায় যুক্ত হতে বলা হয়।

উপাচার্য এ বিষয়ে শিক্ষকদের চিঠি ইস্যু করেন।
একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্ধারিত সদস্যের বাইরে অন্যদের অনলাইনের যুক্ত হতে বলা হলেও ক্যাম্পাসে উপাচার্যপন্থী কয়েকজন অধ্যাপক স্বশরীরে সভাস্থলে যোগ দেন।

এ নিয়ে উপাচার্যের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম টিপু ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক একরাম উল্যাহ, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসাইনসহ কয়েকজন অধ্যাপক এ নিয়ে আপত্তি তোলেন। এসময় উপাচার্যের সঙ্গে তাদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ঘটে।

অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি এখানে আমাদের সম্মানিত কিছু সদস্যদের দেখছি। তারা এখানে আসতে পারেন না। তাদের আপনি এখানে আসার অনুমতি দিয়েছেন, তাহলে অন্য অধ্যাপক‌ যারা অনলাইনে যুক্ত হয়েছেন, তাদের স্বশরীরে এখানে আসার অনুমতি দিচ্ছেন না কেন?

তার প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সভার আগে তারা আমাকে ফোন করেছেন। অনলাইনে অংশ নেওয়ার জন্য তাদের কাছে প্রয়োজনীয় ডিভাইস বা ইন্টারনেটের সমস্যা রয়েছে। অনলাইনে কীভাবে অংশ নিতে হয়, সেটা অনেকে জানেন না। যারা যারা আমাকে এ সমস্যার বিষয়ে জানিয়ে ফোন করেছেন, তাদের এখানে স্বশরীরে আসতে বলেছি।

পরে অধ্যাপক টিপু বলেন, তারা অনলাইন অংশ নিতে পারছেন না, সেটা বড় বিষয় নয়। আপনি আদেশ দিয়েছেন, কিন্তু আপনি নিজেই সেটা ভঙ্গ করছেন।

এতে উপাচার্য ক্ষেপে গিয়ে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট আছে, আপনারা একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হতে দেবেন না। কোরাম পূর্ণ হতে দেবেন না। এমনটা করলে আপনারা সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন বলে বিবেচিত হবেন।

প্রত্যুত্তরে অধ্যাপক টিপু বলেন, আপনি হুমকি দিচ্ছেন কেন? একাডেমিক কাউন্সিলে প্রতিটি শিক্ষকের স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করার অধিকার আছে। আপনি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এখানে কয়েকজনকে নিয়ে এসেছেন। আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আপনি নিজের প্রতিজ্ঞা নিজেই ভঙ্গ করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের যে পরিণতি হয়েছে, আপনার স্বেচ্ছাচারিতার জন্য হয়েছে।

এসময় উপাচার্য ‘স্বেচ্ছাচারী’ শব্দটি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানান। এতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অধ্যাপক টিপু বলেন, আমি প্রত্যাহার করব না। আপনি এটি কর্মের মাধ্যমে অর্জন করেছেন। সভার এজেন্ডার বাইরে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা না করার জন্যও উপাচার্যকে তিনি অনুরোধ করেন।

জানতে চাইলে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম টিপু  বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় কারা কারা স্বশরীরে অংশ নিতে পারবেন, সে বিষয়ে উপাচার্য আমাদের চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে নিজের পক্ষের লোকজন নিয়ে গেছেন।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, উপাচার্য তার পক্ষের লোকজন ডেকে নিয়ে এসেছেন। ইউজিসি যেহেতু উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাই তিনি ভয় পেয়েছিলেন, সভায় হয়তো কেউ তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। যেন তিনি সংখ্যার জোরে সব কিছু পাস করতে পারেন, এজন্য নিজের পক্ষের লোকজন নিয়ে এসেছেন। তিনি আমাদের চিঠি দিয়ে অনলাইনে অংশ নিতে বলেছেন, কিন্তু নিজের পক্ষের লোকজন সেখানে নিয়ে গেছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সভার শুরুতে জুমে দেখলাম উপাচার্য আমার স্পিকার বন্ধ করে রেখেছেন। কোনোভাবেই চালু করতে পারছিলাম না। আমি যেন কথা বলতে না পারি, তাই হয়তো এটা করেছিলেন। পরে আমি স্বশরীরে সিনেট ভবনে গিয়ে সভায় অংশ নিয়েছি।


শর্টলিংকঃ