Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

একাধিক এতিমকে হাফেজ বানিয়েছেন গওহর জাহান


সম্প্রতি অফিসে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন রাজশাহীর মেয়ে গওহর জাহান ।প্রাইম ব্যাংকের উত্তরার জসীমউদদীন রোড শাখা কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে তার মৃত্যুর দৃশ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ভিডিওটি।

গওহর জাহানের মৃত্যুতে ব্যথিত হয়েছে সারাদেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক জানিয়েছেন অনেকে।জানা গেছে, ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল গওহর জাহানের। এমন নাজুক শারীরিক অবস্থা নিয়েও ব্যাংকে নিয়মিত কাজ করছিলেন গওহর।

নিজের কোনো বাড়িঘর ছিল না তার। একাকি এ নারী নিজের ভাইয়ের বাড়িতেই থাকতেন। মাতৃস্নেহে আদর করতেন ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের।গণমাধ্যমকে এসব তথ্য দিয়েছেন গওহর জাহানের ভাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মারুফ নাওয়াজ।

কান্নারত কণ্ঠে মারুফ নাওয়াজ বলেন, অনেকদিন আগে ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল গওহরের। এ কথা শুনলে পাত্রপক্ষ পিছিয়ে যেত। তাই কখনো বিয়ে করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেয় আমার বোন। আমার সন্তানদের পরম যত্নে আগলে রাখতেন। আমার দুই ছেলেকে আব্বাজান বলে ডাকতেন। তাদের ছবি তার কর্মস্থলে ঝুলিয়ে রাখতেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন গওহর। দিনে রাতে যে কারো কোনো বিপদে ছুটে যেতেন। বিয়ে করেননি বলে নিজেকে মাদার তেরেসার সঙ্গে মেলাতেন। মাদার তেরেসা যেভাবে নিজের জীবন মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেছেন সেভাবে তিনিও নিজের জীবনকে উৎসর্গ করবেন বলে জানিয়েছেন। সেভাবেই চলার চেষ্টা করতেন তিনি।

মারুফ নাওয়াজ বলেন, গওহরের সহায়তায় একাধিক এতিম ছাত্র কোরআনে হাফেজ হয়েছেন।তিনি যোগ করেন, ভারতে গিয়ে  ওপেন হার্ট সার্জারি করেছিলেন গওহর। সেই চিকিৎসক তাকে মা বলে সম্বোধন করতো। মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগেও ভারতের সেই চিকিৎসক গহরকে ফের চেকআপের জন্য ভারত যেতে বলেন।

সময় না পেলে যে কোনো ভালো জায়গায় হার্ট চেকআপ করতে বারবার অনুরোধ করেন তিনি।এছাড়াও ছোট ভাই দুবাই থেকে টাকা পাঠিয়ে চেকআপ করতে যেতে অনেক অনুরোধ করে। ভারত যেতে ভিসার জন্য তার পাসপোর্ট জমাও দিই। কিন্তু এখন তো আর সেসবের দরকার নেই।

আপ্লুত কণ্ঠে মারুফ নাওয়াজ বলেন, বোন হলেও আমাদের মায়ের মতো ছিলেন গওহর। বোন হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। আমার ছোট দুই ভাইকে পড়ালেখা থেকে শুরু করে বিদেশে পাঠানো সবকিছুই করেছেন আমার এই বোন। আমার বিয়েতেও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সমাজ হিতৈষী এই নারীর বয়স হয়েছিল ৪৩ বছর। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী শহরের মহিষবাথান এলাকায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে ২০০১ সালে চাকরিতে যোগ দেন গওহর। অবিবাহিত গহর জাহান বড় ভাই মারুফের উত্তরার বাসায় থাকতেন।

তার বাবা মৃত মাওলানা নাওয়াজ ছিলেন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা। বৃদ্ধা মা নুরজাহান বেগম মেয়ে হারিয়ে শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না।সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কর্মস্থলেই মারা যান গওহর।

সেদিন ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, দুপুরে ওই নারী কর্মকর্তার ডেস্কে আসেন একজন নারী গ্রাহক। ওই নারী গ্রাহকের কাছ থেকে একটি কাগজ নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছিলেন গহর জাহান। এ সময় তিনবার পানি খান তিনি।এ ছাড়া একাধিকবার গালে, নাকে-মুখে, চোখে হাত দিতে দেখা যায়। হঠাৎ করেই টেবিলে মাথা রেখে নুইয়ে পড়েন তিনি।


Exit mobile version