- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

বেঁচে থাকার যুদ্ধে পা হারানো সংগ্রামী মানিকের গল্প


আমানুল হক আমান, বাঘা :

মানিক ফকির বলেন, বয়স হয়ে যাচ্ছে। এক পা দিয়ে ভ্যান চালাতে অসুবিধা হচ্ছে। সমাজের কোন সুহৃদয় ব্যক্তি আর্থিক সহযোগিতা করলে আড়ানী বাজারে একটি দোকান দিতে পারতাম। এত কষ্ট আর সহ্য হয় না।

  এক পায়েই ভ্যান চালাচ্ছে মানিক ফকির

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাহাপুর মহল্লার বাসিন্দা মানিক ফকির (৪৮)। তাঁর জন্ম এক হতদরিদ্র পরিবারে। ৮ ভাই বোনের মধ্যে মানিক চতুর্থ। স্বাভাবিক আর ১০টি শিশুর মতো তিনি জন্মে নেয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মাত্র ১৬ বছর বয়সে তাকে একটি পা হারাতে হয়।

ভ্যান চালক বাবার উপার্জনে সংসার ঠিকমত চলতো না। তাই বাবার ভ্যান চালানোর পাশাপাশি বাঁশের ঝুড়ি বানাতেন। আর সেই ঝুড়ি বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতো মানিক ফকির। প্রতিদিনের মতো তিনি রাজশাহী শহর থেকে ঝুড়ি বিক্রি করে ট্রেন যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু মাঝ পথে ঘটে বড় এক দুর্ঘটনা।

রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা পার্বতীপুরগামী উত্তরা ট্রেন নন্দনগাছি ও কালাবিপাড়ার মাঝামাঝিতে এসে লাইনচ্যুত হয়। এ দূর্ঘটনায় সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান ফিরে বুঝতে পারেন তিনি বেঁচে আছেন এবং দেখেন বুক পর্যন্ত মাটির মধ্যে পুঁতে আছে। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করেন। কিন্তু দেখা যায় ততক্ষণে তাঁর ১টি পা কাটা পড়েছে।

তারপর চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। ট্রেনের টিকিট থাকায় রেল কর্তৃপক্ষ তাঁর চিকিৎসার খরচ চালান। দীর্ঘ ৩ মাস রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকার পর বাড়ি ফিরে আসেন। অভাবের সংসারে বাবার সাথে হাল ধরার চেষ্টা করেন। তাই বাবার সাথে শুরু করেন ঝুড়ি বানানোর কাজ।

এরই মধ্যে বাবা মারা যায়। সংসারের দায়িত্ব পড়ে তার উপরে। ঝুড়ি বিক্রি করে সংসার চলেনা। অবশেষে ভ্যানটি বিক্রি করে পরিবারের সকলকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান এবং গার্মেন্টসে কাজ শুরু করেন। সেখানে সিঁড়ি বেয়ে উঠা নামার সমস্যার কারনে আবার গ্রামে চলে আসেন মানিক ফকির। আবারো শুরু করেন বাবার শেখানো ঝুড়ি বানানোর কাজ। এ কাজে সাহায্য করতো তাঁর স্ত্রী ফিরোজা বেগম।

বর্তমানে প্লাষ্টিকের যুগে বাঁশের তৈরী ঝুড়ি চলে না। তাই তিনি আবার শুরু করেন ভ্যান চালানোর কাজ। আগের ভ্যান নেই। বর্তমানে তিনি ১৫০ টাকা জমা দিয়ে ভ্যান চালান। যাত্রী বহন করে যে টাকা পান তা দিয়ে কোন মতে সংসার চলে। তাঁর এক ছেলে এক মেয়ে। দুই সন্তানকে ইতিমধ্যে বিয়ে দিয়েছে। সব দুঃখ কষ্টকে পেছনে ফেলে মানিক ফকিরের কোন মতে চলছে দিন।

এ বিষয়ে আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলী বলেন, দারিদ্রের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে মানিক ফকির হয়ে উঠে চরম বিদ্রোহী। তিনি এক পা হারিয়েও নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছে পরিবারের দায়িত্ব। তবে তাকে পৌরসভা থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, মানিক ফকির বেকার যুবকদের জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম। বিপদে দিশেহারা না হয়ে ধৈর্য্য ধরে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। মানিক ফকিরের মতো দৃঢ় মনোবল নিয়ে প্রতিটি মানুষ সামনে এগিয়ে যাক।