এনজিও’র আড়ালে অর্থ সংগ্রহে নেমেছে জামায়াত


ইউএন ডেস্ক নিউজ:

জামায়াত সমর্থিত কৃষিবিদ মোস্তাক আহমেদ খাঁ ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তুরস্কের উগ্রপন্থীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এ অর্থ তিনি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে জঙ্গিবাদ বিস্তারে ব্যয় করেন। 

এনজিওর আড়ালে জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে বিদেশি উগ্রপন্থীদের কাছ থেকে সহজে অর্থ সংগ্রহ এবং জঙ্গি বিস্তারে আরও এনজিও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল জামায়াত সমর্থিত কৃষিবিদদের সমন্বয়ে গঠিত ‘কৃষিবিদ ব্লকের’। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কৃষিবিদ মোস্তাক এসব কথা জানান।

জামায়াত সমর্থিত এনজিও ‘বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি’র মাধ্যমে তুরস্ক থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এর বাইরে জামায়াত পরিচালিত ‘নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ জঙ্গিবাদ বিস্তারে কাজ করে। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের নির্দেশে তিনটি এনজিওর কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জেনে গেলে কৃষিবিদ মোস্তাকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়। মানি লন্ডারিং আইনে তিন প্রতিষ্ঠান ও জামায়াতের ১৮ জন কৃষিবিদের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) করা মামলায় কৃষিবিদ মোস্তাক আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়। ১২ জানুয়ারি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন কৃষিবিদ মোস্তাক। এর আগে ৮ জানুয়ারি তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় সিআইডি।

সিআইডির পরিদর্শক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, মোস্তাক আহমেদকে হবিগঞ্জের একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। পরে রমনা মডেল থানায় করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

সূত্র জানায়, কৃষিবিদ মোস্তাক দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিবাদ বিস্তারে কাজ করে আসছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তিনি সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তুরস্কে তার পরিচিত উগ্রপন্থী অনেক দাতা রয়েছেন। ‘বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি’র মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে তিনি অর্থ সংগ্রহ করে আসছিলেন।

কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের নাম করে আরও এনজিও প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ছিল জামায়াতে ইসলামীর। জঙ্গি কার্যক্রমকে আরও প্রসারিত করতে তিনি নিজেও একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

সিআইডি সূত্র জানায়, ‘নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন’র মিরপুর-১২ নম্বরের অফিস থেকে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ইসমাইল হোসেন নামে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। এরপর ১৩ মে কাফরুলের একটি বাসায় জামায়াতের ‘কৃষিবিদ ব্লকের’ সদস্যদের গোপন বৈঠকের সময় এনজিও তিনটির তিন শীর্ষ কর্মকর্তা আবদুল করিম, ফজলুল হক রিকাবদার, গোলাম রাব্বানীসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দুটি ঘটনার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নামে সিআইডি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি’, ‘নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যসহ তুরস্ক থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। কৃষি উন্নয়নে এনজিও তিনটির কোনো কার্যক্রম ছিল না। পুরো চক্রকে চিহ্নিত করে গত বছরের ২৮ অক্টোবর তিনটি এনজিও এবং ১৮ কৃষিবিদকে আসামি করে রমনা মডেল থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে সিআইডি।

মামলার সব আসামিই কৃষিবিদ। তারা হলেন- আবদুল করিম, ফজলুল হক রিকাবদার, হুমায়ুন কবীর, আশরাফুল হক, আসগর হোসাইন, শেখ শাহজাহান কবীর, মনিরুল ইসলাম, আবদুর রউফ, আল-মামুন খন্দকার, গোলাম রাব্বানী, শেখ জিল্লুর রহমান আজমী, শেখ মুহাম্মদ মাসউদ, ড. সানাউল্লাহ, সিরাজুল হক, এসএম জাকির, নুরুল আমিন ফারুকী, হামিদুর রহমান আযাদ এবং মোস্তাক আহমেদ খাঁ। তাদের মধ্যে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যরাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের নাম করে এনজিও তিনটি রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছিল। এনজিওগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছিল কৃষিবিদদের নিয়ে গঠিত জামায়াতে ইসলামীর ‘কৃষিবিদ ব্লক’। সব এনজিওর কার্যক্রম চলেছে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের নির্দেশে। বিদেশি অনুদান ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জাকাতের নামে টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।

কিন্তু সব অর্থ জামায়াতে ইসলামীকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার কাজে ব্যয় হয়েছে। ১১ বছরে ‘বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি’র মাধ্যমে তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে সাড়ে ৬২ কোটি টাকা বিদেশি অনুদান এসেছে। এসব টাকা নাশকতা ও জঙ্গিবাদের বিস্তারে ব্যয় করেছে জামায়াতে ইসলামী।#

সূত্র: যুগান্তর


শর্টলিংকঃ