এলএসডি ও গাঁজার কেক বিক্রি করছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা!


ইউএনভি ডেস্ক:

ঢাকার বেশ কয়েকজন তরুণ গাঁজা পাতার নির্যাস দিয়ে কেক তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করছেন। তাদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। একইসঙ্গে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সর্বনাশা মাদক লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথ্যালামাইড বা এলএসডিও বিক্রি করেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বাংলাদেশে প্রথম আমরা এলএসডির সন্ধান পাই গতকাল (২৬ মে)। এই ঘটনায় তিন তরুণকে গ্রেফতার করার পর তাদের কাছ থেকে গাঁজার কেক তৈরি ও বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়। তবে এই কেক এখনো উদ্ধার করা যায়নি।

ডিবি জানতে পারে, ‘Better brawry and beyound’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে সেখানে গাঁজা পাতার নির্যাস দিয়ে কেক তৈরি করে মাদক হিসেবে বিক্রি করত তরুণদের একটি দল। এই গ্রুপে ১ হাজার সদস্য আছে।

এদিকে ডিবির অভিযানে গ্রেফতার তিনজনের কাছ থেকে নতুন মাদক এলএসডির ২০০টি ব্লট উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি ব্লটের মূল্য ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। গ্রেফতার হওয়া তিনজন হলেন- সাদমান সাকিব (রূপল), আসহাব ওয়াদুদ (তুর্য) ও আদিন আশরাফ। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫ এর মধ্যে।

বাংলাদেশে কীভাবে এলো এলএসডি?

ডিবি জানায়, সাদমান সাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর বহিষ্কৃত ছাত্র। বর্তমানে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শেষ বর্ষে পড়ছেন। তিনি মূলত বছরখানেক আগে টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডস থেকে এই মাদক অর্ডার করেন। পে-পালে টাকা পরিশোধ করে পার্সেলের মাধ্যমে এ মাদক দেশে আনেন তিনি। প্রতিটি ব্লট ৮০০-১০০০ টাকায় কেনেন। তবে সাদমান ডিবির কাছে দাবি করেন, তাকে ঢাবি থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর তিনিই ঢাবি ছেড়ে এসেছেন। সাদমানসহ তিনবন্ধু ‘আপনার আব্বা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে সেখান থেকে এলএসডি বিক্রি করতেন।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, উদ্ধারকৃত এলএসডিগুলো দেখতে ডাক টিকিটের মতো। এগুলো যে মাদক তা দেখে বোঝার উপায় নেই। সেবনকারীরা ঠোঁটের নিচে এলএসডি রেখে দিত। এলএসডি নতুন মাদক, ব্যয়বহুল এবং অতিরিক্ত ক্ষতিকারক।

এলএসডি সেবনে কী হয়?

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও এলএসডির বৈশিষ্ট্য ঘেঁটে ডিবি জানতে পারে, এটি ব্যবহার করলে যে কারো মাথা ভার হয়ে যাবে। হেলোজেনিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। কেউ যদি গান শোনে তার সামনে গানের মিউজিকগুলো বিভিন্ন রংয়ের মতো ঘুরতে থাকবে। সেবনকারী অত্যন্ত হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক আচরণ করে। একটি এলএসডি ব্লট সেবন করলে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এর প্রতিক্রিয়া থাকে। অতিরিক্ত সেবনে ২০ ঘণ্টা পর্যন্তও প্রতিক্রিয়া হয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এটি সেবন করে সেবনকারী নিজেকে অনেক শক্তিশালী ভাবে। সে ভাবে যে সে উড়তে পারে। তার অতীত স্মৃতি চলে আসে। অনেকে বলেছে, এটি সেবনের পর তারা মনে করে যে তারা ট্রেনকেও ধাক্কা দিতে পারবে।

তিনি বলেন, যারা নেদারল্যান্ডস থেকে এই মাদকটি বাংলাদেশে পাঠিয়েছে তাদের শনাক্তের জন্য পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি বিভাগে চিঠি দেওয়া হবে।

ঢাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার পেছনেও কি এলএসডি?

ডিবি বলছে, সম্প্রতি হাফিজুর রহমান নামে ঢাবি শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনায় তদন্ত শুরু করে তারা। হাফিজের বন্ধুরা বলছে, হাফিজ একটি নতুন ও অদ্ভুত ধরনের মাদকে আসক্ত ছিল। এরপরই এলএসডির বিষয়ে তথ্য পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ বলেন, আমরা আত্মহত্যা করা হাফিজুরের মরদেহের ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর বলতে পারব তিনি এলএসডিতে আসক্ত ছিলেন কি না।

এলএসডির ইতিহাস

লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথ্যালামাইড বা এলএসডি এক ধরনের তরল। ১৯৩৮ সালে সুইস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এলএসডি আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের প্রথমদিকে এলএসডি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতো। তবে ওষুধটি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে বলে একে নিষিদ্ধ করা হয়।

এলএসডি অত্যন্ত দামি একটি মাদক। সাধারণত ব্লটিং পেপারের ওপরে এই তরল মাদক ফেলে সেই কাগজ শুঁকে নেশা করে মাদকাসক্তরা। এলএসডি মাখা এক টুকরো ব্লটিং পেপারের দাম কয়েক হাজার টাকা।

বিজ্ঞানীরা জানান, সাধারণত এলএসডি নেওয়ার পর একজন মানুষ চোখ বন্ধ করেও দেখতে পায়। তার দেখা এসব দৃশ্য সবসময় বাইরের পৃথিবী বা স্মৃতি থেকে আসে না বরং তাদের কল্পনাশক্তি অনেক বেড়ে যায়। এলএসডির প্রভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

তারা বলেন, এলএসডি নেওয়ার পর প্রকৃতি ও বাইরের জগতের সঙ্গে এমন এক সম্পর্ক অনুভূত হয় যাকে অনেকসময় ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক রূপ দেওয়া হয়ে থাকে। এই মাদকের প্রভাব কেটে গেলেও ওই রকম অনুভূতি থেকে যেতে পারে।

এলএসডি ব্যবহার করলে মানুষের স্মৃতির ভাণ্ডার খুলে যায়। নেশার চূড়ান্ত পর্যায়ে কেউ কেউ মাতৃগর্ভের স্মৃতিও মনে করতে পারেন। তবে সেসব স্মৃতির ভার অধিকাংশ মানুষই সহ্য করতে পারেন না। ফলে মস্তিষ্ক বিকৃতির প্রবল সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া অধিকাংশ মাদকগ্রহণকারীই স্মৃতির চূড়ান্ত স্তরে প্রবেশের আগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এলএসডি গ্রহণকারী অনেকেই এমন দাবি করেন। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, হ্যালুসিনেশনই এসব অনুভূতির মূল কারণ।

ভারতের অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর এই মাদকটি আলোচনায় আসে। তার বিরুদ্ধে এই মাদক নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।


শর্টলিংকঃ