Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

‘এ কষ্টের চেয়ে করোনাই ভাল বাবা’


শামসুজ্জোহা বাবু,গোদাগাড়ী:

বয়স ৬৩ বছর শরীর আর চলেনা কিন্তু বিধবা মেয়ের নাতি নাতিন স্ত্রীসহ মোট ৬ জন সদস্য নিয়ে পরিবার একমাত্র কর্মক্ষম পুরুষ হলেন সুলতান আলী। জমি জায়গা মোটেও নাই বসত ভিটায় দুটি খড়ের ঘরে বসবাস এই পরিবারটির। পরিবারের এই ৬ জন সদস্য ছাড়াও আরও দুই ছেলে আছে। তারা তাদের পরিবার নিয়ে থাকে।

এক ছেলে ভ্যান চালক আনিকুল তার পরিবার নিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে থাকে আরেক ছেলে রিক্সা চালক মানিক ৩ ছেলে, মেয়ে স্ত্রীসহ ৫ জনের সংসার নিয়ে মা-বার খোঁজ রাখতে পারেনা। নিম্ন আয়ের মানুষ একদিন কাজে বের হতে না পারলে খেতে পাওয়ার উপায় নাই। গত ৫-৬ ধরে চুলায় ভাতের হাড়ি চড়ে দিনে ১ বার আর বাকী সময় চলছে গমের ঘাটি খেয়ে। এমন চিত্র দেখা গেল রাজশাহী গোদাগাড়ীর কুঠিপাড়া গ্রামে। করোনা ভাইরাসের সতর্কতা জারির পর ঘর বন্দি পরিবারের সবাই।

ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাহিরে না যাওয়ার নির্দেশ সরকারের । সরকারসহ ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র বার বার বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করছে আপনারা ঘর থেকে বাহির হবেন না। অসহায়,দিনমজুর যারা দিন আনে দিন খায় তারা বাড়িতে অবস্থান করুন, সময় মতো খাদ্যসামগ্রী আপনাদের ঘরে ঘরে পৌছে দেওয়া হবে। আজ ৫-৬ দিন ধরে বাড়িতে অবস্থান করছি এখনও কেউ এসে কোন সাহায্য বা খাদ্যসামগ্রী আমার ঘরে পৌছে দেয়নি, ক্ষুধার জ্বালা আর সহ্য করতে পারছি না এমনটিই বলছে অসহায় সুুলতান আলীসহ উপজেলা হাজার হাজার মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, সামান্য একটু জমিতে পুরনো খড়ের তৈরি একটি কুঁড়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে চুল দাড়ি পাকা একজন বৃদ্ধ। চোখে মুখে ক্ষুধার ছাপ। নড়বড়ে কুঁড়ে ঘরটি নড়ছে হালকা বাতাসে। একটু ঝড় এলে মনে হয় ভেংগে পড়বে। ঘরে থাকে নাতি নাতিনসহ মেয়েরা আর বারান্দায় ঘুমায় অসহায় সুলতান আলী ও তার স্ত্রী। ঘরের সাথেই রান্নার স্থান, চুলো আছে,হাড়িও আছে। কিন্তু হাড়িতে ভাত রান্নার চাল নেই।

এমন চিত্র গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিশালবাড়ী গ্রামের। শিষ মোহাম্মদের ছেলে সাইদুরের বাড়ীতে ৭ জন্য সদস্য নিয়ে একটি পরিবার আর কর্মক্ষম ব্যাক্তি একাই সাইদুর রহমান। এছাড়া একই গ্রামে ৮ জন সদস্যের পরিবার নিয়ে মৃত ফাইজুদ্দী মোল্লার ছেলে গোলাম মোস্তফা এবং বারুই পাড়া গ্রামে বিধবা জামেলার পরিবার। এমন চিত্র হাজার হাজার পরিবারে আছে যাদের পরিবারে কর্মক্ষম ব্যাক্তি একজন।

অসহায় সুলতান আলী বলেন, আমার ২ মেয়ে, ২ নাতি নাতিন,স্ত্রী নিয়ে সংসার। সামান্য একটু জায়গায় খড় দিয়ে কোন রকম ঘর করে বসবাস করছি। করোনা নামের নাকি রোগ দেশে আসছে। সরকার আর মেম্বার চেয়ারম্যানরা বার বার মাইকে বলছে ঘর থেকে বাহির হওয়া নিষেধ। খাবার বাড়ি বাড়ি পৌছে দিবে। কয়েকদিন যাবত ঘর বন্দি আছি কেউ তো এখনও কোন খাদ্যসামগ্রী এনে দিলো না। এ কষ্টের চেয়ে করোনাই ভাই বাবা । প্রতিবেশী শিল্পী নামে এক মহিলা জানান, আমাদের গ্রামে এই পরিবারটি সবচেয়ে অসহায়। নাতি নাতিন,স্ত্রীসহ বিধবা মেয়েকে নিয়ে তারা বড় কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ।

দিনমজুর সুলতান আলীর কোন কাজকাম নেই এবং এখন পর্যন্ত কোন অনুদান পান নি তারা। এবিষয়ে গোদাগাড়ী পৌর মেয়র মুনিরুল ইসলাম বাবুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি আমার পৌর এলাকা সকল অসহায় হতদরিদ্র মানুষের পাশে আছি। আমি নিজে গিয়ে ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিচ্ছি। অনেকেই হয়তো ছাড়া পাড়ছে, তাদেরও খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেবার প্রস্তুতি চলছে। আমি ফেসবুকে আমার নাম্বার দিয়েছি। যারা এখনও কোন সাহায্য পাইনি তারা আমার নাম্বারে নাম ঠিকানা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিবো।


Exit mobile version