এ বছর ইগ নোবেল পেলেন যারা


ইউএনভি ডেস্ক:

ইগ নোবেল পুরস্কারটি দেওয়া হয় প্রতিবছর। নোবেল পুরস্কারের বিপরীতমুখী আয়োজন এটি। এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৯১ সালে। হাস্যকর এবং আজব ‘আবিষ্কারের’  পোকা। এবারের ইগ নোবেল আয়োজনে এটিই ছিল মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এর সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পোকা একটি সর্বজনীন প্রাণী। পোকা চেনে না, এমন কেউ নেই। তাই সবার চেনার সুবিধার্থেই পোকাকে করা হয়েছে ইগ নোবেলের মূল ‘থিম’!

এ বছর নতুন করোনাভাইরাসের কারণে সব আয়োজনেই ঠাঁই নিচ্ছে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায়। ইগ নোবেলও এর ব্যতিক্রম হতে পারেনি। ফি বছর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যান্ডার্স থিয়েটারে সবার উপস্থিতিতে ইগ নোবেল ঘোষণা করা হয়। এবার হয়েছে অনলাইনে। বিজয়ী ব্যক্তিদের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে পুরস্কার পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ছিল কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার, তবে জিম্বাবুয়ের।

আসুন, জেনে নেওয়া যাক এবার কোন কোন আবিষ্কার পেল ইগ নোবেল।

ধ্বনিবিজ্ঞান

এই বিভাগে চীনের অবদান বেশ। চীনা এক কুমিরের স্বর নিয়ে হয়েছে গবেষণা। শ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজেনের সঙ্গে হিলিয়াম মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল ওই কুমিরকে। এতে কুমিরটির স্বর কিছুটা বদলে গিয়েছিল। গবেষকেরা দেখেছেন, হিলিয়াম মিশ্রিত অক্সিজেন নিলে কুমিরদের গলার আওয়াজের তীব্রতা বাড়ে। এই গবেষণাটি নাকি করা হয়েছিল মানুষের স্বরের সঙ্গে কুমিরের মিল আছে কি না, তা মিলিয়ে দেখার জন্য। আর তাতেই মিলেছে ইগ নোবেল।

মনোবিজ্ঞান

অনেকেই আছেন, যাঁদের নিজেদের সবকিছুই ভালো লাগে। একে এককথায় বলে, আত্মপ্রেম। এই আত্মপ্রেমী মানুষদের চিহ্নিত করার এক অভিনব পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেছেন মিরান্ডা জ্যাকোমিন ও নিকোলাস রুল। মানুষের ভ্রু দেখেই তাঁরা বুঝতে চেয়েছিলেন কে আত্মপ্রেমী, আর কে নয়! আর এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেই তাঁরা পেয়েছেন ইগ নোবেল। পুরস্কার পাওয়ার পর নিকোলাস রুল বলেছেন, ‘এই পুরস্কার তাদের প্রতি উৎসর্গ করতে চাই, যারা কিনা তথ্য-উপাত্ত নির্ভর গবেষণা করতে চান এবং শেষে এমন অবস্থায় পৌঁছান, যা কখনো চিন্তাও করেননি।’

শান্তি

শান্তিতে ইগ নোবেল পেয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের সরকার। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিক এবং নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের কূটনীতিকদের কেউ কেউ দুই বছর আগে অভিনব হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। এ বিষয়ে দুই দেশই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। হয়রানিগুলো ছিল এমন—বাসার কলবেল বেজে উঠলেও দরজা খুলে কাউকে না পাওয়া, কখনো আবার বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ লাইন কেটে দেওয়া ইত্যাদি। এমন অভিনব সম্পর্কের সুতো ধরেই এই দুটি দেশকে দেওয়া হয়েছে শান্তির ইগ নোবেল। বুঝুন তাহলে, ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কে কেমন ‘শান্তি’ আছে!

পদার্থবিদ্যা

মেলবোর্নের সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটির দুই গবেষক ইভান মাকসিমভ ও আন্দ্রেই পটটস্কি গবেষণা করেছেন কেঁচো নিয়ে। তাঁরা গবেষণা করে বের করেছেন, উচ্চমাত্রা শব্দ তরঙ্গের কারণে পানিতে যে নাচন দেখা যায়, সেই একই আচরণ করে কেঁচো। এ জন্য স্পিকারের মাধ্যমে উচ্চমাত্রা শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি করে, তাতে কেঁচো ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। এ জন্য এবারের পদার্থের ইগ নোবেল গেছে এই দুই গবেষকের ঘরে।

অর্থনীতি

এ বিষয়ের ইগ নোবেল পাওয়ার ক্ষেত্রে চুমু নিয়ে গবেষণা প্রাধান্য পেয়েছে। সেই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন স্কটল্যান্ড, কলম্বিয়া, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, ব্রাজিল, চিলি ও অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক। তাঁরা দেশে দেশে জাতীয় আয়ের অসমতার সঙ্গে চুমুর কোনো সম্পর্ক আছে কি না, সেটি অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছিলেন। আর এই চুমুরও নির্দিষ্ট প্রকার আছে। তা হলো মুখে মুখে যে চুমু খাওয়া হয়! অন্য কোনো চুমু তাঁদের গবেষণার বিষয়ে ছিল না।

ব্যবস্থাপনা

এবার একটি কাহিনি শুনুন। চীনের পাঁচ খুনির গল্প। অর্থের বিনিময়ে খুন করেন তাঁরা। এঁদের একজন পেয়েছিলেন খুন করার কাজ। কিন্তু নিজে না করে সেই কাজ কম টাকায় আরেকজনকে করতে দিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ব্যক্তি আবার সেই কাজ দেন তৃতীয় ব্যক্তিকে। এভাবে এই কাজ পায় মোট পাঁচজন। সবার মূল লক্ষ্য ছিল একটাই, কম অর্থে অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়ে মুনাফার পরিমাণ বাড়ানো। কিন্তু শেষতক যে কাজের জন্য এত কিছু, সেটাই আর হয় না! এমন অভূতপূর্ব ব্যবস্থাপনার জন্যই ওই পাঁচ ভাড়াটে খুনিকে দেওয়া হয়েছে ইগ নোবেল। তবে পুরস্কার গ্রহণ করতে তাঁদের কাউকেই পাওয়া যায়নি।


কীটবিজ্ঞান

অনেকে আছেন, যাঁরা মাকড়সা ব্যাপক ভয় পান। এমন মানুষের তালিকায় বিজ্ঞানীরাও আছেন। তবে রিচার্ড ভেটার নামের এক বিজ্ঞানী বলছেন, কিছু কীটতত্ত্ববিদও মাকড়সা ভয় পান। তবে মাকড়সা আসলে কীটই নয়। আর এই অনুসিদ্ধান্তের পক্ষেই গবেষণা করে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছিলেন রিচার্ড ভেটার। এর জন্যই তাঁর ভাগ্যে জুটেছে ইগ নোবেল।

চিকিৎসাশাস্ত্র

আপনার আশপাশে কেউ শব্দ করে খাবার চিবিয়ে খেলে আপনার কি তীব্র অস্বস্তি হয়? এমনটা হলে বুঝতে হবে, আপনার মধ্যে মিসোফোনিয়ার উপসর্গ আছে। তবে এই মানসিক সমস্যা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত নয়। এ সমস্যা চিহ্নিতকরণ নিয়ে গবেষণা করেই তিন গবেষক পেয়েছেন চিকিৎসাশাস্ত্রে ইগ নোবেল।

চিকিৎসাশিক্ষা

করোনাকালে মানুষের জীবন বাঁচাতে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। বলা হচ্ছে, রোগাক্রান্ত এই পৃথিবীর মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্নে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের তুলনায় রাজনীতিবিদদের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকে এই শিক্ষা দেওয়ায় অবদান রাখায় এই বিভাগে বিশ্বের নানা প্রান্তের নেতারা পুরস্কৃত হয়েছেন। তালিকায় আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস লোপেজ অব্রাদর, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুরবাঙ্গুলি বারদিমুহামেদো।

বস্তুবিজ্ঞান

এক অদ্ভুত বস্তু ও তার কার্যকারিতা আবিষ্কার করে এই বিভাগে ইগ নোবেল পেয়েছেন মেটিন ইরেন, মিশেল বেবার, জেমস নোরিস, অ্যালিসা পেরোনে, অ্যাশলে রুটকোস্কি, মাইকেল উইলসন ও মেরি অ্যান রাগানটি। এবার এতগুলো মানুষ কী নিয়ে গবেষণা করেছেন, তা বলি। তাঁদের গবেষণার বিষয়বস্তু হলো—মানুষের হিমায়িত মল থেকে তৈরি ছুরি কতটা কার্যকর? এই মল হিমায়িত করে তা দিয়ে ছুরি বানিয়ে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফল হলো এমন ছুরি ভালো কাজ করে না! তবে ইগ নোবেল এনে দেয়।

তথ্যসূত্র : ইমপ্রোব্যাবল ডটকম, লাইভ সায়েন্স, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি ও দ্য প্রিন্ট ডটইন


শর্টলিংকঃ