ওসি প্রদীপের স্ত্রীর সম্পত্তি দেখভালে রিসিভার নিয়োগ হচ্ছে


ইউএনভি ডেস্ক:

টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারণের নামে থাকা বিলাসবহুল ছয়তলা বাড়িসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি দেখভালে নিয়োগ হচ্ছে ‘রিসিভার’। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমতির চিঠি পাওয়ার পর আদালতে রিসিভার নিয়োগের আবেদন করা হবে।


রিসিভার নিয়োগসংক্রান্ত চিঠি প্রধান কার্যালয় থেকে শিগগিরই চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন উপ-পরিচালক (মিডিয়া) প্রণব সাহা। এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর প্রদীপ দাশের স্ত্রীর নামে থাকা চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় দুই কোটি টাকার বেশি মূল্যের ছয়তলা বাড়িসহ চার কোটি ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৭৯ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত।

দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রদীপ দাশের স্ত্রী চুমকি কারণের সম্পদ ক্রোকসংক্রান্ত আদালতের আদেশের কপি ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট’ শাখায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিসিভার কাকে দেয়া যেতে পারে এমন মতামত সম্বলিত চিঠি পাঠানো হবে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে। এরপর রিসিভার নিয়োগের বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হবে।’

দুদক সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন প্রদীপ কুমার দাশ। ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পান। চাকরিতে যোগদানের মাত্র আট বছরের মাথায় ২০০৪ সালে নগরীর পাথরঘাটায় স্ত্রী চুমকি কারণের নামে চার শতক জমি কিনে ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’ নামে একটি ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। জায়গাসহ ওই ভবনটির মূল্য পড়েছে দুই কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা।

এছাড়া পাঁচলাইশ থানাধীন পশ্চিম ষোলশহর মৌজার অধীনে ৬ গন্ডা ১ কড়া ১ দন্ত জমি চুমকি কারণের নামে বায়না থাকা জায়গাটির মূল্য দেড় কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্য পরিশোধ করা হয়েছিল। ওই জমির ওপর তৈরি সেমিপাকা ঘরের মূল্য সাত লাখ টাকা। দুদক এক কোটি ৩৬ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকার অবৈধভাবে উপার্জিত ওই সম্পত্তির মূল্য দেখিয়েছে।

এছাড়া চুমকি কারণের নামে কক্সবাজার সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ঝিলংজা মৌজার অধীনে ৭৪০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে। ওই ফ্ল্যাটটির মূল্য ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকা। আসামিরা ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬০৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বলে জানান দুদকের আইনজীবীরা। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ক্রয় করা ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার বর্তমান মূল্যের একটি পুরাতন মাইক্রোবাস, একই সময় ক্রয় করা পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকায় একটি প্রাইভেট কার ও বেসিক ব্যাংক লিমিটেড আসাদগঞ্জ শাখার একটি ব্যাংক হিসাবে থাকা ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৪ টাকা অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।

চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান যুগান্তরকে বলেন, সম্পত্তি ক্রোক করার অর্থ হলো, মামলা চলাকালীন তিনি ওই সম্পত্তি হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারবেন না। মামলা নিষ্পত্তির পর তিনি খালাস পেলে সম্পত্তি তাকে ফেরত দেয়া হবে, নয়তো সরকারি কোষাগারে চলে যাবে।

সরেজমিন দেখা যায়, লক্ষ্মীকুঞ্জের ছয়তলা ভবনে ১১টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাড়িটি দেখাশোনা করছেন টুকু বাবু নামে এক কেয়ারটেকার। তার সঙ্গে দেখা হলেও তিনি কাজ আছে বলে ভেতরে চলে যান। বন্ধ রয়েছে বাড়িটির প্রধান ফটক। তবে ক্রোক হওয়ার বিষয়টি জেনেছেন বাড়ির ভাড়াটিয়ারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভাড়াটিয়া জানান, বাড়িটি আদালত ক্রোকের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে প্রদীপের পরিবার বসবাস করে।

তিন কোটি ৯৫ লাখ ৬৩৫ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২৩ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর মামলাটি দায়ের করেন সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দীন। ওই মামলায় ২৭ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত প্রদীপ কুমার দাশকে দুদকের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ দেন। মামলার পর প্রদীপ দাশের স্ত্রী চুমকি কারণ পলাতক রয়েছেন।


শর্টলিংকঃ