- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

করজোরে ক্ষমা চাই ফখরে আলম ভাই


শেষ রাতে ফোন করেছিলাম যশোরের নেতা মিলনকে । তখন সে ধরতে পারেনি, সে যখন ফিরতি কল করেছে আমি ধরতে পারিনি । পরে যখন ব্যাটে বলে হলো তখন এই দুঃসংবাদ। ফখরে আলম ভাই নেই। না , করোনায় নয়, তিনি মারা গেছেন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে।

তুখোড় অনুসন্ধানী সাংবাদিক। যশোরে যে কোন সামাজিক আন্দোলনের সামনে থাকা। ১৯৭৫ এর পর টুঙ্গীপাড়া যখন অস্পৃশ্য, যাতায়াত কষ্টকর জায়গা, সেই সময়ে লুঙ্গি পড়ে, পুলিশের চোখ এড়িয়ে সেখান থেকে ফিরে রিপোর্ট করেছেন। লিখেছেন-বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একেবারে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে ছোট ছোট রিপোর্ট। দুটি বই তাঁর অনুরোধে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সেই ছবি দেখে কী খুশি, কী কৃতজ্ঞতা।

যশোর যাবো আর ফখরে ভাই ভরাট গলায় বলবেন ‘ কেমন আছেন বুলবুল ভাই ‘ – এটা শুনতে পাবো না মেনে নিতে পারছি না! কিছুদিন আগে যশোর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠান কিন্তু ফখরে ভাই নেই । জানলাম, অসুস্থ। দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন। বাসায় গিয়ে কথা বলতেই দ্রুতই ধরতে পারলেন ।

স্পষ্ট উচ্চারণে সব কিছুর বর্ণনা। কী হয়েছে, ডাক্তাররা কী বলেছেন- সব। বললাম, সহায়তার কথা । স্পষ্টতই না। কোনো সহায়তা লাগবে না। প্রখর ব্যক্তিত্বের ফখরে আলম ।

কিন্তু পরে ভাবীর সাথে কথা বলে জানা গেল, ভেতরের সব কথা। অনেক কষ্ট করে তাকে রাজি করিয়ে সহায়তার আবেদন করানো হয়েছিল। আমি নিজে ২/৩বার সেই আবেদন পৌঁছে দিয়েছি । যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিলন আমার সহযাত্রী বার বার। কিন্তু আমরা সফল হতে পারিনি ।

কেউ না করেন নি। কিন্তু কাজটা হয়নি। আমি আজ করজোরে ক্ষমা চাই। ফখরে ভাই, আপনার জন্য কিছুই করতে পারিনি! তবু তাঁর স্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কন্যা, আর ছোট পুত্রের প্রতি আমাদের দায় শেষ হয়ে যায় না । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর,তথ্যমন্ত্রনালয় বিষয়টি দেখবেন আশা করি ।

সবশেষ তিনি কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।

ফখরে আলমের ৩৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৫ সালে সাপ্তাহিক রোববার পত্রিকার প্রতিবেদক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন ফখরে আলম। এরপর দৈনিক আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, বাংলাবাজার পত্রিকা, মানবজমিন, জনকণ্ঠ, আমাদের সময়, যায়যায়দিন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।

তিনি সাংবাদিকতায় মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বজলুর রহমান স্মৃতি পদক, এফপিএবি পুরস্কার, মধুসূদন একাডেমি পুরস্কার, টিআইবি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।

মনজুরুল আহসান বুলবুল : সাবেক সভাপতি, বিএফইউজে