করোনার উচ্চঝুঁকিতে রাজশাহীও, আরও পাঁচজনের মুত্যৃ


নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনার ভয়াবহ প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউন চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। অন্যদিকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এখন করোনার উচ্চঝুঁকিতে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে।করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কঠোর লকডাউন চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। রাজশাহীতেও কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে গত সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও পাঁচজন মারা গেছেন। মৃতদের তিনজনের করোনা শনাক্ত হয় দুই দিন আগে। বাকি দুইজনের উপসর্গ ছিল। মৃতদের মধ্যে তিনজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, একজন রাজশাহীর ও একজন পাবনার বাসিন্দা।

এ নিয়ে রাজশাহী বিভাগে মোট করোনায় ৫৫৩ জনের প্রাণহানি হলো। শুধুমাত্র গত ১ মার্চ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৮৩ জনের। গত সোমবার একদিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু হয়। এরপরই চাঁপাইনবাবগঞ্জে কঠোর লকডাউন ঘোষণা হয়।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, এখন পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী করোনার উচ্চঝুঁকিতে অবস্থান করছে। তারপরও আমরা আশা করছি অধিক আক্রান্ত এই দুই জেলার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে শিগগিরই। বিশেষ করে সর্বাধিক উপদ্রুত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগ সমন্বিতভাবে লকডাউন কার্যকরে ভূমিকা রাখছে। রাজশাহীতেও এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে তা কবে থেকে কার্যকর হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।

এদিকে মঙ্গলবার দেশের সর্বাধিক করোনা উপদ্রুত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশের চারটি পথেই কঠোর পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। লকডাউনে ছাড়প্রাপ্ত জরুরি সেবা প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাড়া কাউকেই বা কোন যানবাহন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশের মূল পথ দারিয়াপুর মোড়ে কিছুদুর পরপর তিনটি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসব চেকপোস্টে পাঁচ থেকে সাতজন করে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। একইভাবে জেলা থেকে দেশের অন্যত্র গমনের মূল পথও এটি। কোনো অটোরিকশা বা ছোট যান কোনোভাবেই বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে নওগাঁ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রবেশপথ ধানসুড়া মোড়, আমনুরা ও রহনপুরেও বসানো হয়েছে কড়া পাহারা। এসব পথে কাউকে বের হতে ও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি প্রথম দিন।

মঙ্গলবার জেলা শহরের মূল সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকেই জেলা সকল হাটবাজার ও সড়ক মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী হোটেল রেস্তোরাঁগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকালের দিকে কাঁচাবাজার কিছু সময়ের জন্য চালু হলেও বাজারে ক্রেতার সংখ্যা নগন্য ছিল। শুধুমাত্র হাসপাতাল সড়কে কিছু ওষুধের দোকান খোলা দেখা গেছে।

এদিকে যে এলাকা থেকে সর্বাধিক করোনাক্রান্ত রোগী রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি আছেন সেই শিবগঞ্জেও কঠোর লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। এমনকি গ্রামাঞ্চলেও লোকজনের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। গ্রামীণ সড়কগুলোর আসা-যাওয়ার পথগুলো বাঁশ বেঁধে বন্ধ করা হয়েছে। ফলে গ্রাম থেকে জরুরি চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজনে কাউকে উপজেলা বা জেলা শহরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের উদ্যোগে সকাল থেকে অবিরত মাইকিং চলেছে উপজেলার সর্বত্রই। কাউকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মাস্ক পরিধান ছাড়া কেউ বের হলে তাকে শাস্তি পেতে হবে বলেও ঘোষণায় বলা হয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব আল রাব্বী জানিয়েছেন, লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করা হয়েছে। কারো কোনো অজুহাত শোনা হচ্ছে না। মোবাইল কোর্ট যেমন তৎপর আছে, তেমনি পুলিশও বিভিন্ন সড়ক পথে কঠোর পাহারা বসিয়েছে। ফলে প্রথম দিনের লকডাউন সফলভাবে হয়েছে। এতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শিবগঞ্জের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করেছেন তিনি।

এদিকে মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাক্রান্ত ১৫৪ জন চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ৮৬ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ও বাকি ৪৮ জন রাজশাহী জেলার। এছাড়া ১৪ জন আছেন আইসিইউতে। এই ১৪ জনের মধ্যে ১১ জনই শিবগঞ্জের। এর বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৮৫ জন ও রাজশাহীর ৫৪ জন করোনাক্রান্ত নিজ নিজ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, সোমবার একদিনেই রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৩৬ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ৮২ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ৫৪ জন রাজশাহীর।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, গত ১ মার্চ থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাক্রান্ত হয়ে ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কিছু রোগীর করোনা উপসর্গ ছিল।

তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দুই জেলায় আরও আগে লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাশাপাশি রাজশাহীতেও সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া জরুরি। কারণ এই দুই জেলার করোনা পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ৪৩ জনের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা গেছে। তবে বিষয়টি এখনো প্রমাণিত নয়। এই ৪৩ জনের সবার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে নমুনা বিশ্লেষণের জন্য ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। অনেকেই আক্রান্তের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করায় আমরা ধারণা করছি এই ভ্যারিয়েন্ট ভারতীয়। কারণ আক্রান্ত হওয়ার এক-দুই দিনের মধ্যেই এসব রোগী মারা যাচ্ছেন। বিষয়টি খুবই চিন্তার


শর্টলিংকঃ