করোনার ভ্যাকসিন আসার আগেই দ্বন্দ্ব


ইউএনভি ডেস্ক:

করোনার ভ্যাকসিন এলে তার প্রথম চালান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সংরক্ষণ করা হবে বলে ফ্রান্সের ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট কোম্পানি সানোফির তীব্র সমালোচনা করেছে ফরাসী সরকার। ফ্রান্স বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩ লাখ প্রাণ কেড়ে নেয়া এই ভাইরাস সঙ্কটে এমন পদক্ষেপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বুধবার সানোফির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পল হাডসন বলেছেন, ভ্যাকসিনের গবেষণায় অর্থ সহায়তা করায় প্রথম চালানটি পাবে যুক্তরাষ্ট্র। ব্লুমবার্গ নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ফরাসী এই নির্বাহী বলেন, ভ্যাকসিনের প্রি-অর্ডার করার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের আছে। কারণ তারা ঝুঁকি নিয়ে এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে।

তিনি বলেন, এটাই হবে। কারণ তারা তাদের জনগণকে বাঁচাতে, সুরক্ষা দিতে অর্থনীতি পুনরায় চালু করার জন্য ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সবার আগে ভ্যাকসিন পাবে বলে আমি ইউরোপে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।

ফরাসী সরকারের কাছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোটি কোটি ইউরো গবেষণা ঋণ নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে প্যারিসভিত্তিক এই ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে প্যারিসের এই কোম্পানির এমন মন্তব্যের পর ইউরোপে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের উপ-অর্থমন্ত্রী অ্যাগনেস প্যানিয়ার-রুনাচার বলেছেন, তিনি সানোফির নির্বাহীর ওই মন্তব্যের পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সানোফির ফ্রান্স প্রধান আমাকে বলেছেন, ভ্যাকসিন এলে তা সব দেশের জন্যই সহজলভ্য হবে। অবশ্যই… তা ফ্রান্সও পাবে। কারণ ফ্রান্সেও তাদের উৎপাদন সক্ষমতা আছে।

ফ্রান্সের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ফ্রেডেরিক ভিদাল বলেন, করোনার একটি কার্যকর ভ্যাকসিনকে অবশ্যই বিশ্বের সব জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা করা হলে সেটি হবে অপমানজনক।

সানোফির ফরাসী প্রধান ওলিভার বোগিলট অবশ্য তার বসের মন্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি একই সময়ে ভ্যাকসিনটি ফ্রান্স এবং ইউরোপেও সহজলভ্য হবে। ফ্রান্সের টেলিভিশন চ্যানেল বিএফএমকে তিনি বলেন, তবে এটা সম্ভব হবে যদি ইউরোপীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের মতো তড়িৎগতিতে কাজ করেন।

তিনি বলেন, করোনার ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার শত শত মিলিয়ন ইউরো ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ দফায় যুক্তরাষ্ট্র বেশ কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ভ্যাকসিনটি দ্রুত বাজারে আনতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের সহায়তা করতে পারে।

গত এপ্রিলে যুক্তরাজ্যের ওষুধ প্রস্তুকারক জায়ান্ট কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের সঙ্গে করোনার একটি ভ্যাকসিনের যৌথ গবেষণা শুরু করে সানোফি। তবে এই ভ্যাকসিনটি এখনও ট্রায়ালই হয়নি। গবেষণার পর্যায়ে থাকা এই ভ্যাকসিন তৈরির পর পরীক্ষায় ইতিবাচক সাড়া মিললে বাজারে আসতে তারপরও অপেক্ষা করতে হবে চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত।

সানোফি এবং গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির এই প্রকল্প পরিচালিতহচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস বিভাগের বায়োমেকানিক্যাল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটির অর্থায়নে।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রাণঘাতী করোনার উৎপত্তি হওয়ার পর প্রায় ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ভ্যাকসিন তৈরির শতাধিক প্রকল্প চালু রয়েছে।

চলতি মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা জোরদার করতে বৈশ্বিক একটি তহবিল গঠন করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এই তহবিলে ইতোমধ্যে ৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। ভ্যাকসিন তৈরি, পরীক্ষায় ব্যয় হবে এই অর্থ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক এই উদ্যোগে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এমনকি করোনাভাইরাস বিষয়ে চীনের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ এনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে চলতি মাসে তিনি বলেছেন, আমরা বেশ আত্মবিশ্বাসী যে, আমরা একটি ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছি… চলতি বছরের শেষের দিকে…।


শর্টলিংকঃ