করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে কি রামেক হাসপাতাল?


নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এখন পর্যন্ত অন্তত দুজন রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে-এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদের একজন বাঘা উপজেলা আব্দু সোবহান করোনাতেই মারা গেছেন। অপরজন এখন চিকিৎসাধীন। তবে এ ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে চিকিৎসকদেরও। যদিও সন্দেহভাজন হিসেবে এরইমধ্যে অন্তত ৪২জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী করোনা টেস্ট করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে সবগুলোই নেগেটিভ।

গত রোববার রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) স্থাপিত ল্যাবে পরীক্ষার পর মনসুর রহমান (৮৪) নামের এক বৃদ্ধের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সন্ধ্যায় তার পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয়। তার বাড়ি মোহনপুর উপজেলায়। এর আগে গত ২০ এপ্রিল বাঘা উপজেলার আব্দুস সোবহান নামের আরেক বৃদ্ধের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। রোববার সকালে তিনি মারা যান।

এই দুই বৃদ্ধ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একই ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। তবে তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার উৎস পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্তের উৎস পাওয়া না গেলে সেটিকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলা হয়। এই দুই বৃদ্ধের আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তেমনটি হয়ে থাকতে পারে। সেটি রামেক হাসপাতাল থেকে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তারা।

হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, মনসুর রহমান বুকের ব্যাথায় ভুগছিলেন। গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় তার শরীর খারাপ করলে পরিবারের লোকজন তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা তাকে ৩৯ নং ওয়ার্ডে (করোনা পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড) ভর্তি করে। এরপর তার এক্স-রে ও ইসিজি করার পর শারীরিক অবস্থা ভাল জানিয়ে তাকে গত ২১ এপ্রিল দুপুরে ছুটি দেয়। পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি নিয়ে যান।

বাড়ি যাওয়ার পর জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন মনসুর রহমান। এর পর তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে গত ২৫ এপ্রিল পরিবারের লোকজন তাকে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা তার নমুনা সংগ্রহ করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ২৬ এপ্রিল রামেকের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তার ফলাফল পজেটিভ আসে। কিন্তু তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উৎসব পাওয়া যায়নি।

করোনায় মৃত আবদুস সোবহান

আব্দুস সোবহান প্রোস্রাবের জ্বালাপোড়ায় ভুগছিলেন। প্রথমে তিনি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। এর পর বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। সেখান থেকে গত ১৭ এপ্রিল তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সামান্য জ্বর থাকায় তাকে ভর্তি করা হয় ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ২০ এপ্রিল এক্স-রে করার পর তার করোনার লক্ষণ ধরা পড়ে। এ পর তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে করোনা পজেটিভ আসে। এর পরের দিন তাকে সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, যে দুই বৃদ্ধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তারা হাসপাতালের একই ওয়ার্ডে ছিলেন।তবে ওই ওয়ার্ড থেকেই তারা আক্রান্ত  হয়েছেন কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। ওয়ার্ড লকডাউন করা হয়েছে।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক জানান , বাঘা ও মোহনপুরের দুইজন বৃদ্ধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উৎস পাওয়া যায়নি। আক্রান্ত হওয়ার উৎস না পেলে সেটিকে কমিউনিট ট্রান্সমিশন বলা হয়। এই দুই রোগির ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। সেটি হাসপাল থেকে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রাজশাহীতে গত ১২ এপ্রিল প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আটজন করোনা আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হয়। আর সর্বশেষ রোববার একজন আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হওয়ার পর তা বেড়ে দাঁড়ায় নয়জনে। আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও চারজন পুরুষ। আক্রান্তদের মধ্যে পুঠিয়া উপজেলায় পাঁচজন, বাগমারায় একজন, মোহনপুর দুইজন ও বাঘা উপজেলায় একজন। আক্রান্ত আটজন নিজ বাড়িতেই আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের সাতজনই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও গাজিপুর থেকে ফিরেছেন।


শর্টলিংকঃ