করোনায় অভাবের তাড়নায় সবজি বিক্রি করছেন আম্পায়ার


ইউএনভি ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ খেলাধুলা। ফলে বন্ধ খেলার সঙ্গে জড়িত অস্থায়ী কর্মসংস্থানে থাকা সবার আয় রোজগারও। তেমনই একজন কলকাতার প্রথম সারির আম্পায়ার প্রশান্ত ঘোষ। যিনি অভাবে পড়ে এখন বনে গেছেন সবজি বিক্রেতা।ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) নম্বর ওয়ান গ্রেডের আম্পায়ার প্রশান্ত।

করোনায় অভাবের তাড়নায় সবজি বিক্রি করছেন আম্পায়ার

প্রায় প্রতি মৌসুমেই গড়ে ৯৫-১০ ম্যাচ পরিচালনা করে থাকেন তিনি। বছর দুয়েক আগেও সিএবির লিগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ চালানোর কৃতিত্ব ছিল তার। শুধু আউটডোর নয়, ইনডোর ক্রিকেটেও ছিল তার বাড়তি চাহিদা। ফলে সবমিলিয়ে সারা বছরের আয় রোজগার খুব একটা মন্দ হতো না তার।

যা দিয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার চলে যেত অনায়াসেই। কিন্তু এখন খেলা বন্ধ থাকায় আয়ের পথও নেই প্রশান্তের সামনে। ফলে পড়ে গেছেন অভাবে।তাই পরিবারের ভরণপোষণের জন্য বাজারে নেমে পড়েছেন প্রশান্ত। কখনও শাকসবজি, আবার কখনও ফল বিক্রি করে চেষ্টা করছেন আয়ের পথ খোলা রাখতে।

কলকাতার প্রসিদ্ধ দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন ছেপেছে প্রশান্ত ঘোষের খবর।করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিএবির পক্ষ থেকে এককালীন ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছিল সকল আম্পায়ারদের। কিন্তু সে টাকা দিয়ে আর কয়দিন চলে? প্রায় আড়াই মাস ধরে বন্ধ সবকিছু। তাই বাধ্য হয়েই বাজারে নেমেছেন প্রশান্ত।

বারুইপুরের অদূরে শিখরবালি গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্ত বলেছেন, ‘প্রথমদিকে একটু কষ্ট হচ্ছিল। গ্রাম থেকে কাঁচা আনাচ সংগ্রহ করে বারুইপুরের কাছারি বাজারে বিক্রি করতাম। এখন লিচু উঠেছে। তাই নিয়ে বসে পড়ছি। সংসার চালাতে হবে তো। কী আর করা যাবে।’সাধারণত প্রতি মৌসুম শেষে সব ম্যাচের সংখ্যা গণনা করে একবারে দেয়া হয় আম্পায়ারদের টাকা।

প্রতি ম্যাচের জন্য সিএবি থেকে আম্পায়ারদের জন্য বরাদ্দ ১৬৫০ টাকা। আগে মৌসুমপ্রতি ১২০+ ম্যাচ পরিচালনা করলেও, এখন নতুন সব আম্পায়ার প্যানেলে যোগ দেয়ায় এটি নেমে এসেছে মৌসুমপ্রতি ৭০-৭৫ ম্যাচে।তবু লিগ চললে এবং ইনডোর ক্রিকেট বন্ধ না হলে কোন সমস্যা হতো না প্রশান্ত ঘোষের।

কেননা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ইনডোর ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করলে পাওয়া যেত মোটা অঙ্কের সম্মানী। সেটিও বন্ধ হওয়ায় মূলত বিপাকে পড়েছেন তিনি।প্রশান্ত বলেন, ‘গত দু-তিন বছর ৭০-৭৫ টা ম্যাচ খেলানোর সুযোগ পেয়েছি। ফলে আয় কমেছিল বেশ। কিন্তু ইনডোর ক্রিকেটের সুবাদে টিকে ছিলাম।

ই-মল, বৈশাখী মল, স্প্রিংক্লাবসহ অনেক জায়গায় ইনডোর ক্রিকেট হয়। এখানে ভাল আয় হত। এবার তাও বন্ধ। সবকিছু যেন সামনে থেকে হারিয়ে যেতে লাগল।’করোনাভাইরাসের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষার কথা বলেই শেষ করেন প্রশান্ত, ‘আমরা দিন আনি, দিন খাওয়া শ্রমিকের দল।

তাই এই পরিস্থিতি একটা শিক্ষা দিয়ে গেল। একটা রোজগারের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। বিকল্প ব্যবস্থা রাখা দরকার। মাঠ কোনদিন ছাড়তে পারব না। তাই ঠিক করেছি বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে আনাজ ব্যবসায় মন দেব। তাতে আর যাই হোক না খেয়ে মরতে হবে না।


শর্টলিংকঃ