করোনায় বিপাকে নিম্ন আয়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী


লুৎফর রহমান, তানোর:

করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্ব যখন আতঙ্কিত তখন বেশ বিপাকে পড়েছেন দিন এনে দিন খাওয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণ। একদিন কাজ না করলে সংসারের চাকা বন্ধ তাই মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই তাদেরকে কাজে নামতে হয়। 

উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শ্রমজীবী, নিম্ন আয়ের ও প্রত্যন্ত এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী ও পুরুষরা। কারণ তাদেরকে সকাল থেকে হয় মাঠে, না হয় বিভিন্ন বাজারে মানুষের দোকানে ঝুকিপূর্ণ কাজ করতে হয়। পেশার প্রয়োজনেই ছুটতে হয় দিনরাত। আর তাদের মধ্যে অনেকেরই কোনো ধারণা নেই এই ভাইরাস সম্পর্কে।

আর করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সামগ্রীগুলো তাদের নাগালের বাইরে। স্যানিটাইজার, মাস্ক কিনেননি অনেকেই। নেই মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার সুযোগ। ফলে তাদের সংক্রমণের পাশাপাশি করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ারও বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল ও ডাক্তাররা।
তারা বলছেন, পরিবহন ও দিনমজুর শ্রমিকরা প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে আসেন। তাই তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি দ্রুত অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি এসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী পুরুষদের বাড়তি সুরক্ষা নিশ্চিত করা খুবেই প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ রাজশাহীতে প্রস্তুত পুলিশের করোনা রেসপন্স টিম

এলাকা ঘুরে ও শ্রমজীবী মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাসে যখন গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত তখন তা নিয়ে কোনো উদ্বেগই নেই দিনমুজুর হরিলাল মিয়ার। তার ভাবনার বিষয় জমিতে কাজ কম হওয়া নিয়ে।

চিমনা আদিবাসি পাড়ার দিনমুজুর রুবি মিয়ার বলেন, আয় নেই এখনই চলতে পারছি না। সামনে যে কী হবে বুঝতে পারছি না। প্রতিদিন কাজের খোঁজে বাইরে বের হতে হয়। ছেলেমেয়ে-বউ নিয়ে প্রায় সময়ই না খেয়ে থাকতে হয়। এসব কষ্ট বলে বোঝানো যাবে না। দিনমজুররা খেতে পারে না, এর মধ্যে করোনার জিনিসপত্র কিনবো কিভাবে। ময়লার মধ্যে দিনরাত থাকি। আমাদের মতো মানুষের সহযোগিতা করা জরুরি।

একই গ্রামের ভ্যানচালক তরিকুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্তের খবর শুনলে গা-হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। দিন আনি দিন খাই আমার হাতে প্রায় সময় বাজার করার টাকাও থাকে না। এর মধ্যে কিভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য মাস্ক, হাত ধোয়ার সাবান কিনবো?

নির্মাণ শ্রমিক বিপুল ও এরশাদ বলেন, আমরা গরিব মানুষ আমাদের প্রতিদিন কাজ করতে হয়, কাজ না করলে খাবার পাব কই? আমাদের সংসার আমাদেরই চালাতে হয়। বেশ কয়েক দিন ধরেই করোনাভাইরাসের নাম শুনছি। এই ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু যা রুজি করি তা দিয়ে হয় না।

খৈড় বিক্রেতা সাদিকুল ইসলাম বলেন, মানুষের কাছ থেকে শুনে আসছি গত কিছুদিন ধরে করোনাভাইরাস সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার তো ইচ্ছে করলেই আমার মতো বিপদজ্জনক অবস্থায় যারা কাজ করছি তাদেরকে মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ, সাবান দিতে পারে। ভাইরাস প্রতিরোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা প্রয়োজন।

প্রাণপুর গ্রামের ভুটভুটি চালক আবদুল মতিন বলেন, করোনাভাইরাসের কথা মানুষের মুখ থেকে শুনে ভয় লাগে কিন্তু ভুটভুটি চালানো তো আর বন্ধ করে দিতে পারব না। বন্ধ করে দিলে না খেয়ে থাকতে হবে। আমার মতো ভুটভুটি চালকদের নিরাপত্তা নেই।

তানোর উপজেলার নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, সবাইকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। সে অনুযায়ী আমরা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের নির্দেশ মানলে,কাজ করলে ও সর্তক থাকলে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তানোরে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই তা বিতরণ করা হবে।


শর্টলিংকঃ