করোনা ও বণ্যায় স্বপ্নভঙ্গ পাবনা-সিরাজগঞ্জের খামারীদের


কলিট তালুকদার, পাবনা :

করোনা ভাইরাস ও বণ্যার কারণে গেল কোরবানির ঈদে পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের গো-খামারী, চাষি, মওসুমি ব্যবসায়ী ও ব্যপারিদের গরু বিক্রি কম হওয়ায় ব্যাপক লোকসান হয়েছে। ক্রস হাইব্রিড ও দেশি মাঝারি জাতের প্রায় ৭৫ হাজার অবিক্রিত গরু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

অনেক ব্যাপারি খামারি ও চাষিদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে ফিরছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ. চৌহালী, কামারখন্দ উপজেলার গরু খামারি, চাষি ও মওসুমি ব্যবসায়ীরা ক্রস জাতের পাবনা ব্রিড, অষ্ট্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ান ব্রিড, পাকিস্তানি সাহিয়াল ব্রিড ও দেশি জাতের গরু পালন করেন। পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চরের গরুর খ্যাতি ও চাহিদা রয়েছে দেশ জুড়ে। এবার কোরবানীর পশুরহাটগুলোতে ক্রস হাই ব্রিড ও দেশি মাঝারি জাতের গরু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ছিল বেশি। আর এই বেশি সরবরাহ থাকার কারণে গরুর দাম না পেয়ে এ অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার গরুর ব্যাপারি ও খামারি মূলধন হারিয়ে পথে বসেছেন। তবে এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন মওসুমি গরু ব্যবসায়ীরা। গবাদিপশু সমৃদ্ধ পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের খামারি ও চাষিরা জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় আড়াই লাখ কোরবানির পশু দেশের বিভিন্ন হাটে সরবরাহ করেছিলেন।

গরু ব্যবসায়ীরা খামারি ও চাষিদের কাছ থেকে নগদ-বাঁকীতে গরু কিনে বিক্রির জন্য সড়ক ও নৌপথে ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পশুরহাটে নিয়ে যায়। চাহিদার তুলনায় গরুর সরবরাহ বেশি থাকায় এবং ক্রেতা না থাকাই ঈদের দুই দিন আগে দেশের বিভিন্ন পশুরহাটে গরু দাম কমে যায়। এতে অনেক ব্যবসায়ী ও খামারি বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন। এদিকে ঈদের তিনদিন আগে ঢাকার পশুরহাটগুলোতে গরুর সঙ্কট দেখা দেয়। এ খবরে ব্যাপারিরা রাতারাতি অনেক গুরু কিনে ট্রাকে করে সড়ক পথে ঢাকা গরু পাঠায়। জ্যামে ট্রাক আটকে পড়ায় ঈদের দিন সকালে ট্রাক ঢাকা পৌঁছায়। কিছু কিছু গরু বিক্রি হলেও অনেকেই বিক্রি করতে না পেরে ফেরত নিয়ে আসে।

সিরাজগঞ্জের রাউতরা গ্রামের আহম্মদ উল্লাহ বললেন, গতবছর ঈদের আগে বিভিন্ন জেলার ব্যাপারিরা খামারি ও চাষিদের বাড়ি থেকে গরু,মহিষ, ছাগল, ভেড়া কিনে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যেত। এবার করোনা ভাইরাসের কারণে দুর-দুরান্ত থেকে ব্যাপারিরা গরু কিনতে আসেন নাই।

একাধিক গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলছে, একদিকে মহামারি করোনা ভাইরাস ও বন্যা অন্যদিকে হাটে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হওয়ায় ঈদের দেড় মাস আগে থেকেই গরুর দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়। তবে ঈদের একদিন দুইদিন আগে কিছুটা দাম পাওয়া গেছে। ট্রাক ও নৌকার ভাড়াসহ পথ খরচ উঠানোর জন্য অনেক ব্যবসায়ী ও খামারিরা লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করেছেন। বেড়ার নতুনপাড়া গ্রামের হায়দার আলী ঢাকার গাবতলী পশুরহাটে ৭০টি গরু তুলেছিলেন।

৩৫টি গরু কয়েক লাখ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছেন। অবিক্রিত অবশিষ্ট ৩৫টি গরু ফেরত নিয়ে এসেছেন। একই গামের মন্টু ব্যাপারির ৪৩টি গরুর ২১টি বিক্রি হয়েছে, ২২টি ফেরত নিয়ে এসেছেন। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। নদী পাড়ের সোলেমান ব্যাপারির ১০৫টি গরুর মধ্যে ৫৫টি বিক্রি হয়েছে। অবিক্রিত ৫০টি গরু ফেরত নিয়ে এসেছেন। তারও লোকসান হয়েছে কয়েক লাখ টাকা।


সাঁথিয়া উপজেলার সেলন্দা গ্রামের খামারি রজব আলী হাইব্রিড জাতের ২০টি গরু চট্রগ্রাম হালিশহর হাটে নিয়েছিলেন। তার ৮টি গরু বিক্রি হয়েছে। অবিক্রিত ১২টি অনেক কষ্ট করে ফেরত নিয়ে এসেছেন। তার লোকসান হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। পাবনা জেলার দুই সহস্রাধিক গরু ব্যবসায়ী ও খামারি লোকসান হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এদিকে অনেক খামারি বাঁকী টাকা না পাওয়ার আশঙ্কায় ব্যাপারিদের কাছ থেকে গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক ব্যাপারি খামারী ও চাষিদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

পাবনা জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডা: আল মামুন হোসেন মন্ডল জানান, পাবনা জেলায় এ বছর এক লাখ ৭০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। আর অবিক্রিত পশু রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। লো

বিষয়ে তিনি বলেন যারা করোনার কারনে ভয়ে পশু পাবনার বাইরে নিয়ে যাই নাই তারা এটকু লোকসান হয়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় গরু বেশি বড় করেছিল সেই সকল খামারী বা ব্যবসায়ীরা লোকশানে পরেছেন। তিনি কোরবার জন্য গরু বেশি বড় না করার পর্রামর্শ দেন খামারীদের।

আর সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডা: আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, সিরাজগঞ্জে এ বছর ১ লাখ ৬০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ গুরু অবিক্রিত রয়েছে। লোকসানের বিষয়ে তিনি বলেন যারা জেলার বাইরে গরু নিয়ে গিয়েছিল সেই সকল খামারী বা ব্যাপারীরা অধিক লাববান হয়েছে। করোনার কারনে এ বছর অনলাইনে বেশ পশু কেনা বেচা হয়েছে। যারা অনলাইনে পশু বিক্রি করেছে তারাও বাড়িতে বসে পশু বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছে। তিনি আরো বলেন লোকসান ঠেকাকে এখন থেকে খামারীদের অনলাইনে পশু বিক্রিতে উৎসাহী করা হচ্ছে।


শর্টলিংকঃ