করোনা ঝুঁকি : পরিবার ও শিশুর সুরক্ষা


এখানে একজন নারী, মা এবং স্ত্রী হিসেবে বলতে চাই, যাদের বাসায় ছোট বাচ্চা আছে তাদের জন্য নিশ্চয়ই বিষয়টি কষ্টকর। কারণ বাচ্চারা ঘর বন্দি থাকতে চায় না। এই সময় স্কুল বন্ধ থাকায় বাচ্চারা যেতে পারছেনা স্কুলে, পারছে না খেলতে, ফলে ওদের মনের উপর একটি বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এই বিরূপ প্রভাব থেকে বের করে নিয়ে আসতে হলে একজন মাকে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেমন, বাচ্চাদের এই ভাইরাসের ক্ষতিকর দিকগুলো ভালভাবে বুঝাতে হবে।

আজকের লেখার প্রসঙ্গ ‘করোনা’ নিয়ে। এই শব্দটির সাথে আজ বিশ্বের সমস্ত মানুষ খুব পরিচিত। কারণ শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে আতঙ্ক, ভয়, মৃত্যু। তাইতো গোটা পৃথিবী আজ আতঙ্কিত, ভীত। আমরা বাংলাদেশের মানুষও এর বাইরে নই। আশা জাগায় কিছু মানুষের ভরসার কথায়। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ই বলে থাকেন আমরা বীরের জাতি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সর্বান্তকরণে দৃঢ়তার সাথে সহমত পোষণ করছি।

সত্যিই বাঙালী বীরের জাতি। এটি আমরা প্রমাণ করেছি বহুবার। আবার আরো একবার প্রমাণ করার সময় এসেছে। এজন্য আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ঠিক রেখে পরস্পর পরস্পররের থেকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সমন্বিতভাবে করোনা নামক যুদ্ধের সাথে লড়াই করতে হবে। এজন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।

আমরা সকলে জানি, আমাদের এখন নিজেদের ঘরে অবস্থান করতে হবে। যতটা সম্ভব বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড করে হাত ধুতে হবে জীবানুনাশক সাবান দিয়ে দিনে কয়েক বার। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, হাচিঁ, কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। যদি কারো হাচিঁ, কাশি, জর, সর্দি থাকে তবে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখতে হবে।

এখানে একজন নারী, মা এবং স্ত্রী হিসেবে বলতে চাই, যাদের বাসায় ছোট বাচ্চা আছে তাদের জন্য নিশ্চয়ই বিষয়টি কষ্টকর। কারণ বাচ্চারা ঘর বন্দি থাকতে চায় না। এই সময় স্কুল বন্ধ থাকায় বাচ্চারা যেতে পারছেনা স্কুলে, পারছে না খেলতে, ফলে ওদের মনের উপর একটি বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এই বিরূপ প্রভাব থেকে বের করে নিয়ে আসতে হলে একজন মাকে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেমন, বাচ্চাদের এই ভাইরাসের ক্ষতিকর দিকগুলো ভালভাবে বুঝাতে হবে।

বাচ্চাদের সাথে অনেক বেশী সহজ হতে হবে, আচরণ হবে বন্ধু সুলভ, ওদেরকে বেশী সময় দিতে হবে। প্রয়োজেন একটু ভিন্ন ধরণের বিনোদনের ব্যবস্থা করুন পরিবারের সকলকে নিয়ে, যাতে ওরা ঘরে থাকাটাকে বন্দিত্ব মনে না করে বরং আনন্দ পায়। তা ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্য বিশেষ করে আমি পুরুষদের কথা বলবো, যারা কর্মের জন্য প্রতিনিয়ত বাইরে যেতেন, তাদের কাছে ঘর বন্দি জীবনটা ভাল না লাগাটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আরো একটু দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে নারীদের। কারণ এই সময়টাতে পারিবারিক সর্ম্পকগুলো যেন তিক্ত না হয়ে উঠে। বরং পারিবারিক বন্ধন যেন আরো মধুর এবং সুদৃঢ় হয়ে উঠে সেদিকে লক্ষ্য রাখাও বাঞ্চনীয়।

অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রেও বলবো আপনারাও এই সম্পর্কগুলো মধুর করবার জন্য নারীদের একটু সহযোগিতা করুন। যাই হোক এতকিছুর মধ্যে একটি স্বস্তির বিষয় হলো আমাদের দেশে ভাইরাসটি মহামারী আকারে ছড়ায়নি (আইইডিসিআর এর তথ্য মতে)। তবে আমাদের এখনি আনন্দিত বা খুশি হওয়ার মতো কিছু হয়নি। এখনও অনেকটা সময় আমাদের সচেতন এবং সাবধান থাকতে হবে, যেন ভাইরাসটি মহামারী আকার ধারণ করতে না পারে।

তাছাড়া একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে খুশি হওয়ার কথাও নয়। কারণ যেখানে সারা বিশ্ব কাঁদছে, জীবন যুদ্ধে লড়ছে, এবং প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল দেখা যাচ্ছে কোন কোন দেশে। আমি সমস্ত মানুষের সুস্থতা কামনা করি পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার কাছে। আসুন আমরা সচেতন হই, নিজেকে ভাল রাখি, নিজের পরিবার ও কাছের মানুষদের ভাল রাখি। সর্বোপরি সমাজ এবং দেশের মানুষকে ভাল রাখি। রোগ প্রতিরোধে সমস্ত নিয়ম মেনে রাস্ট্রের নেয়া সময়োপযোগি সিদ্ধান্তগুলোকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে। আসুন দেশকে বাচাঁই।

হৈমন্তি পালশিক্ষক


শর্টলিংকঃ