করোনা পরীক্ষায় ৮১টি ল্যাবের মধ্যে চালু মাত্র ২১টি


ইউএনভি ডেস্ক:

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। কিন্তু করোনা পরীক্ষা অবকাঠামো উল্টো দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। কিট ও স্বেচ্ছাসেবী সঙ্কট এবং কারিগারি কারণে অনেক আরটি-পিসিআর ল্যাব বন্ধ হয়ে গেছে। ভাটা পড়েছে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায়। ফলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনকার বুলেটিনে যে আক্রান্ত শনাক্তের পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে, তা দেশের করোনা পরিস্থিতিকে কতোটা প্রতিনিধিত্ব করছে এ নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে।

করোনাভাইরাস বিষয়ে আজ সোমবার (২৭ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনলাইন বুলেটিনে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো ৩৭ জনের ‍মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মৃত্যু বেড়ে দাঁড়াল ২ হাজার ৯৬৮ জনে। আর এসময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৭২ জন। এতে আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২ লাখ ২৬ হাজার ২২৫।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা আরো জানান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ১২ হাজার ৫৪৪টি। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ১১ লাখ ২৪ হাজার ৪১৭টি।

স্পষ্টত নমুনা সংগ্রহের হার অনেক কমে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরেই নমুনা সংগ্রহের এই হাল। অথচ সংক্রমণের উচ্চহারের মুখে ৩০ হাজার নমুনা পরীক্ষার টার্গেটের কথা বলা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে গতকাল রোববার কথা বলেন ডা. নাসিমা। তিনি বলেন, সারা দেশে ল্যাবে নমুনা আসছে কম। এ কারণে তিনি জনগণকে সন্দেহজনক হলেই নিকটবর্তী কেন্দ্রে গিয়ে নমুনা দিয়ে আসার আহ্বান জানান। ডা. নাসিমা সুলতানা আজ জানান, দেশে বর্তমানে মাত্র ২১টি আরটি পিসিআর ল্যাব চালু আছে।

যদিও বর্তমানে দেশে করোনার রোগী শনাক্ত করার জন্য রয়েছে ৮১টি ল্যাব। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৬টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ৩৫টি। এসব ল্যাবের মধ্যে ১৬টি পরীক্ষাগারকে বিদেশগামীর করোনা পরীক্ষা করে সনদ গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অবশ্য সেখানে অন্যদের নমুনা পরীক্ষাও চলবে।

এদিকে গত ২০ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বয় কমিটির সভার কার্যবিবরণীতে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা কমে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। অধিদফতরের পর্যালোচনায় পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাওয়ার আট কারণের প্রথমে আছে পরীক্ষার ফি নির্ধারণ।

বাকি কারণগুলো হলো: হাসপাতাল ছাড়ার আগে রোগীর শরীরে করোনার অস্তিত্ব জানতে পরপর দুটি পরীক্ষা না করানো; উপসর্গ নেই, এমন রোগীরা কম আগ্রহী হচ্ছেন; সার্বিকভাবে দেশে করোনার প্রকোপ কমে গেছে; জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় অনেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন না; জীবিকাসংকটের মুখে পড়েছেন বা পড়তে পারেন, এই আশঙ্কায় অনেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন না; রোগী গুরুতর অসুস্থ না হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বাড়িতে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে এবং বন্যার কারণে যোগাযোগব্যবস্থার অবনতি হওয়ায় কোথাও কোথাও পরীক্ষা কমে গেছে। কার্যবিবরণীতে দিনে ২৪ হাজার পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল, এমন কথার উল্লেখ আছে।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সেদিন তিনজন আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। এরপর মার্চ মাস শেষে ৫০ জনের মতো শনাক্তের কথা জানা গেলেও এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আক্রান্তের হার বাড়ে খুব দ্রুত।


শর্টলিংকঃ