করোনা রোগীদের সুস্থ হতে বড় বাধা সামাজিক লাঞ্ছনা


জিয়াউল গনি সেলিম :

করোনা রোগী ও তাদের স্বজনরা যেন সমাজে বসবাসের অধিকারই হারিয়ে ফেলেছেন। সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লেই তাদের শুধু একঘরেই নয়, সইতে হচ্ছে নানা ধরনের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। এমন সামাজিক রোষানল থেকে রেহাই পাচ্ছেন না হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিরাও।তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের আচরণে রোগীর মনোবল ভেঙে পড়তে পারে। যা খুবই অমানবিক। তাই সহানুভূতিশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

 

ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা শেষে গেল ৭এপ্রিল বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরেন রাজশাহী কলেজের ছাত্রী জিন্নাত আরা সুমু। ওইদিনই তাদেরসহ অন্তত ৪০জনকে যশোর হাসপাতালের একটি কক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় এভাবেই গাদাগাদি করে। কিন্তু কোনো উপসর্গ না থাকায় চারদিন পর পাঠিয়ে দেয়া হয় রাজশাহীতে।

বাসায় ফিরেও মাকে নিয়ে স্বস্তিতে নেই তিনি। সরকারি নির্দেশনা মেনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও পাড়ার লোকজনের লাঞ্ছনা ও ভর্ৎসনায় বিষিয়ে উঠেছে জীবন। এমন কি বাড়িওয়ালা বের করে দেয়ারও হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এরকম সামাজিক অনাচারে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে পরিবারটি।

জিন্নাত আরা সুমু বলেন, আমরা বাসা ফিরে আসার পরই শুনতে হয় নানা ধরনের কথা। পাড়ার লোকজন কটূক্তি করছে। পাড়ার ছেলেরা থাকতে দেবে না। তাদের চাপে বাড়িওয়ালাও বাসা থেকে বের করে দিতে চায়। অথচ আমরা কিন্তু করোনা সংক্রমিত নই।এ অবস্থায় প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছি।

করোনা রোগীদের সামাজিক অবস্থা আরো ভয়াবহ। নিজঘরে বন্দি থাকলেও মানসিক নির্যাতনে হতাশা গ্রাস করেছে তাদের। পাড়া-প্রতিবেশীর অপমানে অনেকেই হারিয়ে ফেলছেন সুস্থজীবনে ফেরার মনোবলও। সমাজে এমন নিগৃহিত হওয়ায় দুঃসহ হয়ে উঠেছে তাদের দিনগুলো। এ নিয়ে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও পোস্ট করেছেন সুমু।

করোনা সংক্রমিত রাজশাহী পুঠিয়ার ইউসুফ ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে মোবাইল ফোনে বলেন,  মনে হচ্ছে এ জীবন অভিশপ্ত। আমি এখন ঘরবন্দি। কিন্তু শুনতে পাই পাড়া-পড়শী আমাকে নিয়ে কানাঘুষা করছে। ঘৃণা করছে। এ রোগটা যে কারো হতে পারে, সেটা কেউ মনে করছে না। আমাকে দায়ী করছে সবাই। আমি নামাজ পড়ি আর আল্লাহর কাছে প্রাণভিক্ষা চাই।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের করোনা চিকিৎসা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আজিজুল হক আজাদ বলছেন, সমাজে কিছু মানুষের এ ধরনের আচরণ চরম অমানবিক। তাকে এভাবে সামাজিক হেয় করা বা তাড়িয়ে দেয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কেউ সংক্রমিত হয়ে বাড়িতে থাকলে পাড়া প্রতিবেশীর সংক্রমিত হওয়া কোনো ভয় নেই। আমরা খুবই কষ্ট পাই, যখন দেখি মানুষ এ ধরনের আচরণ করছে। কারণ, করোনা রোগী হাঁচি দিলে বড়জোর ৬ফুট দুরত্বে যেতে পারে ভাইরাস। কাজে রোগী বাড়িতে থাকলে করোভাবে ভাইরাসটা বাইরে অন্য মানুষকে আক্রান্ত করবে না। এ ধরনের রোগীদের প্রতি সদয় আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোস্তফা আলিম বলেন, আসলে মানুষ আতঙ্ক থেকে এমন আচরণ করছে।আরেকটা বিষয় হতে পারে তা হলো করোনা সম্পর্কে অজ্ঞতা। তবে এধরনের রোগীদের সব সময়ই উৎসাহ দিয়ে রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।


শর্টলিংকঃ