করোনা শনাক্তের কিট ১০ এপ্রিল সরকারকে দেবে গণস্বাস্থ্য


ইউএনভি ডেস্ক:

গণস্বাস্থ্যের নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট উৎপাদনে ল্যাবের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।তবে বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কিট উৎপাদন ১ সপ্তাহ পিছিয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ১০ এপ্রিল সরকারের হাতে কিট তুলে দেবে প্রতিষ্ঠানটি।

বৃহস্পতিবার  এমন আশাবাদের তথ্য জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।তিনি বলেন, ‘আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় লন্ডন থেকে কিট তৈরির মূল ‘ইনগ্রেডিয়েন্ট (উপকরণ)’ যথাসময়ে আনা সম্ভব হয়নি।

বর্তমানে লন্ডন থেকে সব ধরনের বিমান যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে আমাদের ১ সপ্তাহ বিলম্ব হল।’ তিনি বলেন, ‘তবে আমরা বসে নেই, এখন চীন থেকে আনার চেষ্টা চলছে।

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব-উজ-জামান এক্ষেত্রে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন। ৫ এপ্রিল বিমানে চীন থেকে ইনগ্রেডিয়েন্ট বাংলাদেশে পঠানো হবে। এপ্রিলের ৬ তারিখ সেটি ঢাকা এসে পৌঁছাবে। ওইদিন আমরা মূল উপকরণ হাতে পেলে ১০ এপ্রিল সরকারের হাতে কমপক্ষে এক হাজার কিট তুলে দিতে পারব। তারপর থেকে প্রতিদিনই আমাদের উৎপাদন অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, লন্ডন থেকে ইনগ্রেডিয়েন্ট আনতে দেরি হওয়ায় গণস্বাস্থ্যর পক্ষ থেকে চীনসহ আরও ৫টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এর মধ্যে চীন থেকে আনার সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন।

এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়েছে। তাছাড়া কিট উৎপাদন সংশ্লিষ্ট ল্যাবটিকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে পরিদর্শন পর্ব সম্পন্ন হয়েছে।

জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহববুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘গত ২৮ মার্চ ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনের পরিচালকের নেতৃত্বে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের একটি দল ল্যাবটি পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে তারা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছে।’

ল্যাবের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামান  বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা ল্যাবটি পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শনকালে ল্যাবের সামগ্রিক প্রস্তুতি চলমান রয়েছে বলে দেখেছি। কিছু কাজ বাকি ছিল। অর্থাৎ ওই সময়ে ল্যাবটি কিট উৎপাদনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না।’ সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ছোট পরিসরে আরও একটি টিম ল্যাবটি পরিদর্শন করবে।

এর আগে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকার যুগান্তরকে জানিয়েছিলেন, এ ধরনের কিট উৎপাদন করতে হাইটেক ল্যাব প্রয়োজন। ইতোমধ্যে গণস্বাস্থ্য-আরএনএ বায়োটেক একটি হাইটেক ল্যাব স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পর্যাপ্ত পরীক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় ১৫ মার্চ ডা. জাফরুল্লাহ  জানিয়েছিলেন, গণস্বাস্থ্য দেশেই করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট উৎপাদন করবে।সন্দেহজনক ব্যক্তি এ ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা এ কিট ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে ফলাফল জানা যাবে। বর্তমানে ভাইরাসটি শনাক্ত করতে যে কিট ব্যহার করা হয় সেটি সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। তবে দেশে যেসব কিট উৎপাদন করা হবে সেগুলো মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটে করোনাভাইরাসের প্রাথমিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।

এ কিটের মাধ্যমে একটি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে ২শ’ টাকা। যেখানে বর্তমানে সরকারিভাবে একটি পরীক্ষা করতে ব্যয় হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। অভূতপূর্ব এ কাজটি ইতোমধ্যে শুরু করেছে গণস্বাস্থ্য-আরএনএ বায়োটেক লিমিটেড।

এ কিট উৎপাদনের অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশি একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানী। যার নাম ড. বিজন কুমার শীল। ২০০৩ সালে যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সার্স (সিভিয়ার রেসপারেটরি সিনড্রোম) করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছিল তখন তিনি সিঙ্গাপুরের কয়েকজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে সার্স ভাইরাস শনাক্তকরণ কিট তৈরি করেন।

ওই কিটের প্যাটেন্টটি তার নামেই নিবন্ধিত। তিনি বর্তমানে গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজে কর্মরত। তার সহযোগী হিসেবে করোনাভাইরাস কিট তৈরিতে যুক্ত আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিহাদ আদনান।


শর্টলিংকঃ